১০ বছর পর সমাবেশ করে জামায়াতের হুশিয়ারি

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

দীর্ঘ ১০ বছর পর রাজধানীতে সমাবেশ করেছে নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। শনিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ থেকে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত নিরপেক্ষ সরকার। তাই কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মানতে হবে। না মানলে রাজপথ উত্তপ্ত হবে।’ 

‘কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতা ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে হবে বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। গত দুটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের এই নেতা বলেছেন, ‘২০১৪ গিয়েছে যাক, ২০১৮ গিয়েছে যাক, কিন্তু ২০২৩ সাল এভাবে অতীতের মতো আর যাবে না। দিস ইজ দা লাস্ট টাইম, এবার নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ইনশা আল্লাহ।’

এর আগে শুক্রবার রাতে কিছু মৌখিক শর্তে জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

সে অনুযায়ী আজ (শনিবার) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে জামায়াত। সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের খোলা জায়গা এবং ফুটপাতে অসংখ্য নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। একপর্যায়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি মূল সড়কেও চলে যায়। এতে মৎস্য ভবন ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।  সমাবেশ ঘিরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।

সমাবেশে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। এতে তিনি দশ দফা তুলে ধরে বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা-মহানগরীর সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে। সংবিধান স্বীকৃত মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, নিখোঁজ ব্যক্তিদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।’

সমাবেশের অনুমতি দেওয়া ও শেষ পর্যন্ত সহায়তার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াত কখনো বিশৃঙ্খলা করেনি, করে না এবং করবেও না। যদি বিশৃঙ্খলা হয় তবে সেটা বাইরে থেকে কেউ করতে পারে, স্যাবোটেজ। জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা, বিশৃঙ্খলা এবং হামলায় বিশ্বাস করে না।’

তিনি দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে জামায়াত মুক্ত করবে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে আনার দাবি এবং একটি নৈতিকতাসম্পন্ন ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার’ আহ্বান জানান সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যারা আমাদের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে তারা জামায়াতের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তাদেরই ক্ষতি হয়েছে। নেতাকর্মীদের মুক্তি না দিলে আমরা মুক্তি দিতে বাধ্য করব ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের মধ্যদিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। তাদের কাছে গণতন্ত্র কখনোই নিরাপদ ছিল না। কয়লা ধুলে যেমন ময়লা যায় না। তেমনি ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ সাধু হয় না।

সব দল যদি রাজপথে সভা-সমাবেশ করতে পারে জামায়াতে ইসলামীও করবে। চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখেছেন কেন? অধিকার আদায় করতে হলে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশ করব। বিশৃঙ্খলা জামায়াতের ঐতিহ্যে নেই। এ সরকার জনগণকে ভয় পেয়ে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে গেছে। তারা মুখে বলে গণতন্ত্র আর ক্ষমতায় গিয়ে বাকশাল কায়েম করে মুখ চেপে ধরে।

তিনি বলেন, আজকে সরকারের সময় শেষ। কয়েক মাস বাকি আছে। অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ আপনাদের অধীনে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ যত সুন্দর কথা বলুক তাদের বিশ্বাস করা যায় না।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, যারা আমাদের নিষিদ্ধ ও অবৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করেছেন, তারাই আজকে আমাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। কই আমাদের সমাবেশ থেকে তো একটি ঢিল ছুড়তে দেখা যায়নি। তাহলে জামায়াতের বিরুদ্ধে সংঘাতের অভিযোগ কেন? সংঘাত বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের ৯৬ হাজার নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে। ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে নির্যাতনে পঙ্গু করা হয়েছে। দেশে আদালত আছে আইনের শাসন নেই। আমরা গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্দুর রহমান মুসা, সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাঈনুদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন,  নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমির আ. জব্বার, ঢাকা মহানগরীর উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিমুদ্দিন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কামাল হোসেন, ড. আবদুল মান্নান, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *