:: গাজীপুর প্রতিনিধি ::
ঋণখেলাপির দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন।
রোববার সকালে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। তবে সাবেক এই মেয়রের মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, তার ওপর অবিচার করা হয়েছে। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
এর আগে সকাল ১০টায় জেলা শহরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয়ে শুরু হয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। এতে মেয়র পদপ্রার্থী ১২ জনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এ ছাড়া কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ও মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই করা হয়।
যাচাই বাছাই শেষে মেয়র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গনফ্রন্ট আতিকুল ইসলাম, স্বতন্ত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, স্বতন্ত্র হারুন অর রশিদ, স্বতন্ত্র সরকার শাহানুর ইসলাম রনি, আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন, জাকের পার্টির রাজু আহমেদের মনোনয়ন পত্র বৈধ বলে ঘোষণা দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। এ সময় ঋণ খেলাপির অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীর আলম ও অসম্পূর্ণ কাগজ পত্র দাখিল করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়ালিউর রহমান ও আবুল হোসেনের প্রার্থীতা বাতিল করা হয়।
রোববার সকাল থেকেই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। এরপর ১৫ গত বুধবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত জাহাঙ্গীর আলম। তার হয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তার প্রতিনিধি। জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনের নামেও মেয়র পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম।
মনোনয়নপত্র বাতিলের পর যা বললেন জাহাঙ্গীর
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আত্মপক্ষ সমর্থন করে ব্যাংকের কাগজপত্র জমা দিলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি আপত্তির কথা জানিয়ে মনোনয়নপত্র অবৈধ আদেশ বহাল রেখে নির্বাচন কমিশনে আপিল করার নির্দেশনা দেন।
এ সময় জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার ওপর অন্যায় আদেশ দেওয়া হলো। তিনি আপিল করবেন।
জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমি নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেহেতু আপনারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ডেকেছেন, ব্যাংক তাদের লিখিত জবানবন্দি দিয়েছে। কিন্তু আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার নির্বাচনকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যারা পাওনাদারের কাছ থেকে টাকা পেয়েছে, তারপরও আপনারা যে কাজটি করলেন, তা পক্ষপাতিত্ব করলেন। আপনারা নির্বাচনে নিরপেক্ষতার মধ্যে ছিলেন না। আমরা আশা করব, যেন নিরপেক্ষতা আপনাদের থাকে। সব প্রার্থীকে যেন সমান সুযোগ দেওয়া হয়। আপনারা নিরপেক্ষতা থেকে সরে গেছেন। আমি অনুরোধ করব, এখানে আপনারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করেন, মানুষের সংগ্রহমূলক নির্বাচনটা করেন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনাবাড়ীর একটি কম্পোজিট ফ্যাক্টরি, যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করত; কোরিয়ার মালিকানাধীন ওই কারখানার আমি লভ্যাংশ খাই না, শেয়ার নেই, শুধু শ্রমিকদের বাঁচাতে, পোশাকশিল্প বাঁচাতে মানবিক কারণে আমি আমার সম্পত্তি থেকে মর্গেজ দিই। যার ঋণ নিয়ে কোরিয়ান কর্তৃপক্ষ কারখানা সচল রেখেছিল। কিন্তু করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা পেমেন্ট দিতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচনে আমি যেহেতু প্রার্থী, তাই তারা ১১ ও ১৮ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেছে। সব ডকুমেন্ট আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে জমা দিয়েছি; কিন্তু তারপরও তারা আমার প্রার্থিতা বাতিল করেছে। আমি মনে করি, এখানে নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা থেকে সরে গেছে। কোন অদৃশ্য চাপে তারা সরে গেছেন, তা আমি জানি না। আমি ন্যায়বিচারের স্বার্থে আপিল করব।