এক সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৩০৭ পয়েন্ট

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩০৭ দশমিক ২২ পয়েন্ট কমেছে। সূচক কমার হার ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৩ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে ২৮৬টি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এরমধ্যে শেয়ারের দর হারিয়েছে ৩৬০টি কোম্পানি। মাত্র ২০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আর ৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।

চলতি  সপ্তাহের লেনদেন শুরুই হয় বড় দর পতন দিয়ে। সোমবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইএক্স ১৩৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে যায়। পরের তিনদিনে সূচকটি কমেছে যথাক্রমে-২৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট, ৯৩ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, ৫১ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

আগের সপ্তাহেও শেষ তিন কার্যদিবসে সূচক কমেছিল বাজারে। সব মিলিয়ে সর্বশেষ ৭ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স কমেছে ৪৩৯ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা প্রায় ৭ দশমিক ০২ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৮০৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে এর পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ। এ হিসেবে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বেশ কিছু কারণে বাজারের অবস্থা এমন নাজুক হয়ে উঠেছে। বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতিসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাজমান চাপ, শ্রীলংকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটজনিত আতঙ্ক, বিশ্বপুঁজিবাজারে বড় দর পতনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, সিকিউরিটিজ আইন প্রয়োগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শৈথিল্য ও পক্ষপাতের অভিযোগে সৃষ্ট আস্থাহীনতা ইত্যাদি কারণে বাজারে পতন অনিবার্য হয়ে উঠে। পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার জন্য কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি নানা গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

পতন থামাতে প্রি-ওপেনিং সেশন বাতিল

পুঁজিবাজারে চলমান দরপতন ঠেকা্তে নানা ব্যবস্থার পর এবার সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রি-ওপেনিং সেশন। আগামী রোববার ২২ মে থেকে আর বাজারে প্রি-ওপেনিং সেশন থাকবে না।

আজ বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রি-ওপেনিং সেশন স্থগিত করে একটি নির্দেশনা জারি করেছে।

বিএসইসি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে মূল লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হতো শেয়ার কেনাবেচার অর্ডার বসানোর জন্য। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এটিকে বলা হয় প্রি-ওপেনিং সেশন। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে এর নাম ওপেনিং অকশন কল অ্যান্ড ওপেনিং প্রাইস পাবলিকেশন।

২০২০ সালের অক্টোবরে, বিএসইসি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে প্রাক-ওপেনিং সেশন এবং পোস্ট-ওপেনিং সেশনের আবেদন অনুমোদন করে।

দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই প্রি ওপেনিং সেশন শুরুর সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। আর ওপেনিং সেশন শুরু সকাল ১০টা। এ সেশনে বিনিয়োগকারীরা শুধু শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয় আদেশ দিতে পারবেন। এই সেশনে একটি আইডিয়াল ওপেনিং প্রাইস নির্ধারণ করা হবে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্রেতা এবং বিক্রেতা যেই প্রাইসে থাকবে সেটাই হবে ওপেনিং প্রাইস। নিয়মিত সময়ে যেয়ে এই ওপেনিং প্রাইসে লেনদেনটি সম্পন্ন হবে। পরবর্তীতে স্বাভাবিক নিয়মে নিয়মিত সেশনটি চালু থাকবে।

দেশের পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের সাথে এই প্রি-ওপেনিং সেশনের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে অনেকের সন্দেহ। বাজারের কিছু আসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের হীন উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য এই প্রি-ওপেনিং সেশনকে কাজে লাগাচ্ছিল। তারা লেনদেন শুরুর আগেই এমন কিছু অর্ডার বসাতো, যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। এভাবে লেনদেনের শুরুতেই সূচককে নিম্নমুখী করে দেওয়া সহজ হয়ে উঠে। পরে এই ধারা থেকে বাজার আর বের হতে পারে না। এই আপতৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে প্রি-ওপেনিং সেশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে যেসব কোম্পানি

গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ২০টির দর বেড়েছে, ৩৬০টির দর কমেছে ৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ৭টির লেনদেন হয়নি। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এস. আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সপ্তাহের শুরুতে এস. আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের উদ্বোধনী দর ছিল ২৪ টাকা ৬০ পয়সা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস কোম্পানিটির ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৩৩ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৮ টাকা ৪০ পয়সা বা ৩৪.১৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে এস. আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড ডিএসইর সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসইতে সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধি শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর বিকন ফার্মার ১৩.৯৬ শতাংশ, বঙ্গজ লিমিটেডের ৮.৬১ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৭.২৭ শতাংশ, ফাস ফাইন্যান্সের ৫.৮৮ শতাংশ, ফু-ওয়াং সিরামিকের ৫.৬২ শতাংশ, সিলভা ফার্মার ৪.৬৩ শতাংশ, ইসলামি ব্যাংকের ৩.৬৪ শতাংশ, গোল্ডেন হার্ভেস্টের ৩.২৮ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুডের ৩.২৪ শতাংশ দর বেড়েছে।

সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষে যেসব কোম্পানি

গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এরমধ্যে ২০টির দর বেড়েছে, ৩৬০টির দর কমেছে ৬টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ৭টির লেনদেন হয়নি। সপ্তাহটিতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে আরডি ফুডের। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সপ্তাহের শুরুতে আরডি ফুডের উদ্বোধনী দর ছিল ৬১ টাকা ২০ পয়সা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেনশেষে এর ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দর কমেছে ১২ টাকা ১০ পয়সা বা ১৮.৩০ শতাংশ। এর মাধ্যমে আরডি ফুড ডিএসইর সাপ্তাহিক দর পতনের তালিকার শীর্ষে উঠে আসে।

ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এসিআই ফর্মুলেশনের ১৭.৫৩ শতাংশ, এশিয়া ইন্সুরেন্সের ১৭.৩৩ শতাংশ, ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্সের ১৬.২৯ শতাংশ, সোনারবাংলা ইন্সুরেন্সের ১৬.২৬ শতাংশ, প্রভাতী ইন্সুরেন্সের ১৫.৫৫ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিসের ১৫.৩২ শতাংশ, তাকাফুল ইসলামি ইন্সুরেন্সের ১৫.৩১ শতাংশ, ইসলামি ইন্সুরেন্সের ১৪.৮১ শতাংশ এবং ইস্টার্ন ইন্সুরেন্সের ১৪.৭৯ শতাংশ দর কমেছে।

সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে যেসব কোম্পানি

গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষস্থান দখল করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ২০৩ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে।

সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ১ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮২৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৬.২৯ শতাংশ।

লেনদেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকসের। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৮টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৫৯ কোটি ৪৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেএমআই হসপিটাল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৫ হাজার ৬২৯টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার বাজার মূল্য ১৩২ কোটি ৭৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা।

লেনদেনের তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকের ৯১ কোটি ১৪ লাখ ১১ হাজার টাকার, আরডি ফুডের ৭২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকার, সালভো কেমিক্যালের ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকার, ওরিয়ন ফার্মার ৫৭ কোটি ৩২ লাখ ৩৪ হাজার টাকার, এসিআই ফর্মুলেশন ৫৭ কোটি ২৪ লাখ ২৪ হাজার টাকার, ফু-ওয়াং সিরামিকের ৫৭ কোটি ১৮ লাখ ৯ হাজার টাকার এবং লাফার্জহোলসিমের ৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ৮ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *