রেজোয়ান ভাই, তোমার কর্মের চেয়ে তুমি যে মহৎ

:: মুজতবা খন্দকার ::

দৈনিক দিনকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. রেজোয়ান হোসেন সিদ্দিকী ভাই আর নেই! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এই খবরটা আমার কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে তার সাহচর্যে। তিনি একাধারে ছিলেন আমার মেন্টর অভিভাবক এবং আমার প্রেরনা।

মাদ্রাসাপড়ুয়া একজন মানুষ দেশের শীর্ষ সাংবাদিক সাহিত্যিক হতে গেলে কতখানি সততা অধ্যবসায়, কতখানি মানবিক গুনের অধিকারী হতে হয় রেজোয়ান ভাই তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ।

বিনয়ী, সদালাপী ও সদা হাস্যোজ্বল এই মানুষটার সাথে আমার পরিচয় ৯৩ সালে। তখন আমি অধূনালুপ্ত দৈনিক বাংলার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার। রেজোয়ান ভাই তখন দৈনিক বাংলার সহকারী সস্পাদক। পরিচয়টা কিভাবে হয়েছিলো এখন আর মনে পড়েনা। তবে পরিচয় যেভাবে হোক, পরবর্তীতে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন আমার সবচেয়ে বড় আপনজন। ৯৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারী হয়ে দৈনিক বাংলা ছেড়ে গেলে তার সাথে সস্পর্ক ক্রমশ গাঢ় হয়। তিনি আমার এক পর্যায়ে অভিভাবক হয়ে ওঠেন। তার সাথে নানা স্মৃতি আছে আমার। সেগুলো এই লেখায় বলতে ইচ্ছে করছে না, যদিও ফ্লাশব্যাকের মতন সামনে চলে আসছে। আমার চোখের পানি বাঁধা মানছেনা। আমার কন্ঠ জড়িয়ে আসছে।

রেজোয়ান ভাই, কারো সাথে রেগে কথা বলেছেন,সেটা তার শত্রুরাও বলতে পারবে না কখনো। আপদমস্তক বিনয়ী মানুষ ছিলেন তিনি। আমি পিআইবির জার্নালে নিয়মিত সাংবাদিকতার নানা বিষয় নিয়ে লিখতাম। তখন আরেক প্রথিতযশা কবি সাংবাদিক সাযযাদ কাদির ছিলেন নিরীক্ষার সস্পাদক। তিনিও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। আমি আসলে সাংবাদিকতাটাকে প্যাশন হিসেবে নিয়েছিলাম। পিআইবিতে রেজোয়ান ভাইয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে, তিনি ইলিয়াস খানকে নিয়েছিলেন। ইলিয়াস ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতন। তিনি প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী ছিলেন। যাইহোক আমি এক সময় বেকার হয়ে পড়লাম। একদিন রেজোয়ান ভাই বললেন, এখনো একটা পদ খালি আছে জয়েন করো। আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমার সংকল্প ছিলো সাংবাদিকতা করার।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর, তিনি পিআইবির ডিজি হন। একদিন আমাকে বললেন, তুমি পিআইবিতে যোগ দাও; ডিরেক্টর পদে। আমি সবিনয়ে সে প্রস্তাব ফিরিয়েে দিয়ে বলেছিলাম। রসিকতা করে বলেছিলাম, আপনি আমার ‘বস’ হয়ে ঝাড়ি দিতে পারবেন বলে এমন প্রস্তাব দিচ্ছেন। রেজোয়ান ভাই হেসেছিলেন।

রেজোয়ান ভাই, কারো সাথে রেগে কথা বলেছেন, সেটা তার শত্রুরাও বলতে পারবেনা কখনো। আপদমস্তক বিনয়ী মানুষ ছিলেন তিনি। আমি পিআইবির জার্নালে নিয়মিত সাংবাদিকতার নানা বিষয় নিয়ে লিখতাম। তখন আরেক প্রথিতযশা কবি সাংবাদিক সাযযাদ কাদির ছিলেন নিরীক্ষার সস্পাদক। তিনিও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। আমি আসলে সাংবাদিকতাটাকে প্যাশন হিসেবে নিয়েছিলাম। পিআইবিতে রেজোয়ান ভাইয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে, তিনি ইলিয়াস খানকে নিয়েছিলেন। ইলিয়াস ভাই আমার বড় ভাইয়ের মতন। প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী ছিলেন। যাই হোক আমি এক সময় বেকার হয়ে পড়লাম। একদিন রেজোয়ান ভাই বললেন,এখনো একটা পদ খালি আছে জয়েন করো। আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমার সংকল্প ছিলো সাংবাদিকতা করার। একদিন মোজাম্মেল হক (বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সেক্রেটারি) এবং রেজোয়ান ভাই এক সাথে বসে আমাকে ডাকলেন। দুজনই ছিলেন হরিহর আত্মা। আর মোজাম্মেল ভাইয়ের সাথে তো আমার ছিলো প্রানের সস্পর্ক। প্রতিদিন নিয়ম করে রমনা পার্কে আমরা হাটতম। কোনোদিন আমার আসতে দেরি হলে আমাকে বকতেন। আমার বাবার বয়সী ছিলেন। ভাবিও আমাকে খুব আদর করতেন। তার গুলশানের বাসায় আমরা প্রায়শ: যেতাম। সে যাই হোক, সেদিন আমাকে ফোন করলেন মোজাম্মেল ভাই, বললেন, তুমি কই, এক্ষুনি আসো। গেলাম। দুজনেই পান করতেন। আমিও উনাদের সাথে মাঝেমধ্যে যেতাম। দেখলাম হরেক রকম ড্রিংকস। মোজাম্মেল ভাই বললেন, নাও। তুমি নাকি রেজোয়ানকে পিআইবির চাকরি করতে না করে দিয়েছো? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। তিনিও আর কিছু বললেন না। রাতে রেজোয়ান ভাই আমাকে বাসায় পৌছে দিলেন। বহু স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলবো।

সবশেষ যেটা বলি, আমার বিবাহিত জীবন তার হাত দিয়ে শুরু হয়েছিলো। তিনি আমার বিয়ের পর প্রায় নিয়ম করে আসতেন আমার বাসায়। ছোট মাছ ভর্তা তার পছন্দ ছিলো।

এনটিভিতে একসময় টকশো তিনি পরিচালনা করতেন। তিনি একজন সৎ জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তার অনেক বই আছে, মুজিবের আমল নিয়ে তিনি বই লিখেছেন। তিনি দারুন একজন সমালোচক। সর্বশেষ, গত প্রেস ক্লাব নির্বাচনের সময় আমাকে ফোন করলেন, ভোট দিতে যাবা তুমি, আমি বললাম হ্যা। বললেন, একসাথে যাবো। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো তোমার অফিস থেকে। সেটাই আমাদের সবশেষ চাক্ষুষ দেখা।এরপর টেলিফোনে কথা হলেও দেখা হয়নি।

এখন বলতে ইচ্ছে করে, ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ভাই, তোমার কর্মের চেয়ে তুমি যে মহৎ।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, এনটিভি

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *