ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা

:: নাগরিক প্রতিবেদক ::

বৈশাখের তৃতীয় দিনে আজ রোববারও তীব্র গরমে নাজেহাল রাজধানীবাসী। শনিবারের মতো আজও ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে ১৯৬৫ সালে রাজধানীবাসী সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন পার করেছিল। তখন ঢাকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ। তার আগে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল, ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৯৬০ সালে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গাছ ও জলাশয় আছে এমন এলাকার চেয়ে ঢাকার তাপমাত্রা গড়ে চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার। এসব যন্ত্রের ব্যবহার যতই বাড়ছে, ভবনের বাইরের এলাকার তাপমাত্রা ততই বাড়ছে। আবহাওয়া বিভাগের হিসাবে গত ১০০ বছরে দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় রাজধানীর তাপমাত্রা দেড় গুণের বেশি বেড়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, দাবদাহ বছরের এই সময়ের বৈশিষ্ট্য। বৃষ্টি না হলে এই সময় তাপপ্রবাহ তৈরি হয়। এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে তাপপ্রবাহ বেড়েছে। তাপপ্রবাহের সঙ্গে আর্দ্রতা বাড়ার কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। দু-তিন দিন ধরে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়েছে। ফলে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। রাতের তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এখন রাতের তাপমাত্রা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

তিনি জানান, ৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে তাপপ্রবাহটি বাড়ছে। প্রথমে এটি রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু জায়গা থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। একটা ভালো বৃষ্টি হলে এই তাপপ্রবাহ কমে যাবে।

২০১৪ সালে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওই ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল; অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠেছে।

দেশের অন্যান্য এলাকাতেও গরম কমার কোনো লক্ষণ নেই; বরং বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সেখানে বাতাসের সঙ্গে লু হাওয়া ছিল।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করছে, তাতে কিছুটা জলীয় বাষ্প বয়ে আসছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘামও বেড়ে যাবে। আজ দিনের বাকি সময় গরম আরও বাড়তে পারে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ বলেন, গরমের ওই তীব্রতা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আজ বেলা ৩টায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরমের তীব্রতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতার পরিমাণও ছিল কম, মাত্র ১৮ শতাংশ। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, আকাশে মেঘ না থাকায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় এখনো গরমের তীব্রতা কমছে না। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।

এবারের গরমে ভিন্নমাত্রা রয়েছে। বাতাসের আদ্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তাই তাপাদাহের মধ্যে ঠোট শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাতাসের জ্বলীয়বাস্প কম থাকায় মূলত এমন হচ্ছে। সকালে সুর্য উঠার সাথে-সাথে তীব্র রোদ। বেলা বাড়ার সাথে-সাথে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুনঝরা রোদেও তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কোনো এলাকায় যদি তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে তাহলে তাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। আর ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *