ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, বাধা দেয়নি ছাত্রলীগ

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

১২ দিন পর শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ঢুকতে পেরেছে ছাত্রদল। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। ক্যাম্পাসে ঢুকতে ছাত্রদলকে বাধা দেয়নি ছাত্রলীগ। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ছিল। 

অন্যদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ফটকের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রদলের একদল নেতাকর্মী। নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান। 

গ ইউনিটের পরীক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন থেকে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বের হতে শুরু করেন। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের দিকে রওনা দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের পুলিশ বাধা দেয়। তাঁদের বলা হয়, ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ফুল-কলম দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বারণ রয়েছে। তখন ছাত্রদলের এক নেতা মুঠোফোনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যেতে দেয় পুলিশ।

১৫ মিনিটের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন।

মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে যাওয়ার পর ভবনের পাশের ফুটপাতে রজনীগন্ধা ফুল ও কলম হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু সেখান দিয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা তেমন আসছিলেন না। তখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তাঁরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ছাত্রদলের ‘সুশীতল ছায়াতলে’ আসার আমন্ত্রণ জানান।

দুপুর পৌনে একটার দিকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা মিছিল করে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা যে যাঁর মতো চলে যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রদল শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন। আমাদের হাতে কলমই থাকে। কলম দিয়েই আমরা প্রতিবাদ করি। আমাদের হাতে কখনোই অস্ত্র ছিল না। ছাত্রদল অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে না। অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে ছাত্রলীগ। গত কিছুদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যকালে সংগঠনের অনেকের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। প্রতিবছরের মতো এবারও আমরা ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। এই কর্মসূচি পালনে আমরা কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ি।’

গত ২২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের এক বক্তব্যের পর ছাত্রলীগ কঠোর অবস্থান নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে দফায় দফায় হামলার শিকার হয় ছাত্রদল। ১২ দিন ধরে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি।

ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি ছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপিত শিক্ষার্থী-সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে বিনা মূল্যে ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’-এর ব্যবস্থা, ছাউনির মাধ্যমে অভিভাবকদের বিশ্রামের সুব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেওয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ারসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র গঠন, মাস্কের বিতরণ, কলমসহ আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, প্রয়োজন সাপেক্ষে পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুব্যবস্থা।

ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সব সময় ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের প্রয়োজন, প্রত্যাশায় ও সংকটে পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। শিক্ষার্থীবান্ধব ও ভর্তি পরীক্ষার উপযোগী কর্মসূচি দেওয়ার জন্য অভিভাবকেরা ছাত্রলীগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *