:: পঞ্চগড় প্রতিনিধি ::
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বুধবার (৩ জানুয়ারি) চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি শীতের মৌসুমে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। এটি সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ এর মধ্যে তাপমাত্রা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের আভাস বলছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।
তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন, সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকলে এবং তা কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তবে সকাল ৮টার মধ্যে সূর্যের দেখা মিলেছে। মঙ্গলবার দিনের তাপমাত্রাও কমে রেকর্ড করা হয় ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এছাড়াও দিনাজপুরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতরাতে ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, জেলায় তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে এবং আগামী দিনে আরও কমতে পারে।
কক্সবাজারে গতরাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে তেতুলিয়া ও ডিমলা উভয় উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.২ ডিগ্রি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বুধবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল। কুয়াশা আর বাতাসের কারণে স্থবিরতা দেখা দেয় জনজীবনে। তবে সকাল ৮টার পর দেখা মেলে সূর্যের। সূর্যের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ায় কিছুটা কমে আসে জনদুর্ভোগ।
তবে জীবিকার তাগিদে সকালে কাজে যোগ দেওয়া খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালক ও কৃষি-শ্রমিকরা। শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিকশা-ভ্যানে উঠতে চায় না। কনকনে শীতের কারণে দৈনন্দিন আয় কমে গেছে এসব শ্রমজীবী মানুষের।
বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই কুয়াশার সঙ্গে ঝরছে হিম শিশির। তার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে করে কুয়াশা ঝরা ঠান্ডা বাতাসের কারণে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকালে বিভিন্ন যানবাহনগুলোকে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। শহরের মানুষরা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বেরিয়েছেন কর্মসংস্থানে। কেউ যাচ্ছেন দিন মজুরি দিতে, কেউ পাথর তুলতে, কেউ চা বাগানে। তারা বলছেন, পেটের তাগিদেই শীতের দূর্ভোগ সহ্য করেই কাজে বেড়িয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে আবার। ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা আমাদের এ এলাকা। হিমশীতল হাওয়া ও কুয়াশায় ঠান্ডা লাগতেছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো শিশির ঝরেছে।
নারীরা জানান, বৃষ্টির মতো শিশির ঝরছে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঘরে মেঝে, আসবাবপত্র, দরজা ও বিছানা পর্যন্ত ঠান্ডায় বরফ হয়ে উঠেছে। প্রচন্ড ঠান্ডা। সকালে কাজ করতে খুব কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
ভ্যান চালকরা জানান, আবার ঘন কুয়াশা ভাই। কুয়াশার কারণে ভ্যান চালানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে। রোদ উঠলে শীত থাকলেও আয় বাড়ে। কিন্তু ঘন কুয়াশা থাকলে কেউ সহজেই ভ্যানে চড়তে চান না। এ কারণে কামাই কম হয় কুয়াশা থাকলে।
চা শ্রমিকরা জানান,আজও প্রচন্ড ঠান্ডা। এ সময়টা চা পাতার কাজ কমে গেছে। দুদিন ধরে আবার কুয়াশা। তবে কি আর করবো, কাজে বেরিয়েছি। একই কথা বলেন পাথর শ্রমিকরা। তারাও জীবিকার তাগিদে কাজে বেড়িয়ে পড়েছেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা জামান চৌধুরী জানান, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, ক্রনিক শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার মতো নানান শীতজনিত রোগ বেড়েছে। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে শিশু বয়স্করা। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেছেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে পচা বাসি খাবার পরিহার ও উষ্ণতা বজায় রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, ‘পঞ্চগড় শীতপ্রবণ জেলা। এখানে প্রায়দিনই দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে। শীত মোকাবেলায় জেলা-উপজেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ল থেকে প্রায় ২৬ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। নিবার্চন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মধ্যে এসব শীতবস্ত্র উপহার হিসেবে এসব শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।’
তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর এলাকার চা-চাষি মহসিন আলী বলেন, ‘কনকনে ঠান্ডার কারণে আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছি না। আগের চেয়ে আয়ও কমে গেছে।’
মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলন করতে আসা শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা নদী থেকে পাথর তুলে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু শীতকাল এলে আমাদের কষ্ট হয়। এমনিতে শীত, সেই সঙ্গে নদীর পানি অনেক ঠান্ডা। তাই রোদের ওপর নির্ভর করে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আয়ও কমেছে অনেক। কিন্তু করার কিছু নেই, আমাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না।’
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলা থেকে হিমালয় অনেক কাছাকাছি হওয়ায় উপজেলা নির্দিষ্ট সময়ের আগে শীতের আমেজ শুরু হয়। এখানে দীর্ঘস্থায়ী শীত অনুভূত হয়। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দেরিতে শীত বিদায় নেয়। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।