সহযোগীদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন পিকে হালদার

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদার সহযোগীদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন। তার দাবি, সহযোগীরা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন।

এর আগে ভারতে গ্রেফতার হওয়া এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) তিন দিনের রিমান্ডে নেয় দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টররেট (ইডি)। রোববার ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন। 

এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ‘ব্যবহৃত হয়েছেন’ দাবি করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইডির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।  

ইডি সূত্র জানায়, পি কে হালদারকে গ্রেফতারের আগেও ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গ্রেফতারের পর ২ ঘণ্টা ব্যবধানে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন তিনি। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, তাকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি সহযোগীদের দায়ী করেন। 

এদিন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময়  বার বার উঠে এসেছে পিকে হালদারের আইনি এবং আর্থিক পরামর্শদাতা সুকুমার মৃধার নাম। মূলত সুকুমার মৃধার পরামর্শেই হালদারের মাধ্যমে দুই ভাই স্বপন মিত্র এবং উত্তম মিত্র ভারতে টাকা পাচার করেছেন বলে অভিযোগ। পাচার করা অর্থ সুকুমার মৃধার তত্ত্বাবধানেই বিনিয়োগ করা হয় ভারতের কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা , দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বর্ধমান, মুম্বাই এবং দিল্লিতে। শনিবার আসামিদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও বর্ধমানে পিকে হালদারের ছড়িয়ে থাকা সম্পত্তির শনাক্তে অভিযান চালালেও সব সম্পত্তির হদিস দিতে পারেনি ছয় অভিযুক্তের কেউই। 

ইডি সূত্র মনে করছে, সব সম্পত্তির হদিস পেতে সুকুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বা সুকুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব তথ্য বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) পেয়েছে তা দ্রুততম সময়ে ইডির হাতে আসা জরুরি । তাই পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে দফায় দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসেন ইডির কর্মকর্তারা। পরে রোববার দুপুর ৩টার পর আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করে রাখা হয় লকআপে। 

শনিবার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হন পিকে হালদার। একইদিন ইডি আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে চারজন বাংলাদেশি। তারা হলেন- প্রীতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী (নাম জানা যায়নি), উত্তম মিত্র ও স্বপন মিত্র। এ ছাড়া প্রণব হালদার নামে এক ভারতীয়কে গ্রেফতার করে ইডি। প্রণব সেখানে সরকারি চাকরি করেন। পরে সঞ্জীব হালদার নামে একজনকে আটক করার কথা জানায় ইডি। সঞ্জীব বাংলাদেশ গ্রেফতার সুকুমার মৃধার জামাই। 

পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে জমি, মাছের ঘেরে বিনিয়োগ শুরু

পিকে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। ইডির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতি বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে পিকে হালদার দুবাইয়ে পালিয়ে যান। ২০১৯ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে আসেন এবং তাঁর প্রধান সহযোগী সুকুমার মৃধার সঙ্গে মাছের ঘেরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন।

কলকাতাসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে (যার মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা রয়েছে) মাছের ঘের খুব লাভজনক ব্যবসা। পিকে হালদার যত ঘেরে বিনিয়োগ করেছিলেন, তার সব কটির সন্ধান এখনো পায়নি ইডি। সব সম্পত্তির হিসাব পেতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, পিকে হালদার ২০১৯ সালের আগেই সহযোগীদের কাউকে কাউকে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। অথবা তাঁদের কেউ কেউ নিজেরাই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশে জমিজমা কেনা এবং ঘেরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেন। তাঁদের প্রধান সুকুমার মৃধা। তিনি একদিকে আইনি পরামর্শ দিতে শুরু করেন, অন্যদিকে জমি–বাড়ির দালালি ও মাছের ঘেরের ব্যবসায় হাত পাকান।

সুকুমার মৃধা উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় ব্যবসায়ী, জমির দালাল ও মাছ ব্যবসায়ীদের একটি বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তদন্তকারীদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয় যে সুকুমার মৃধা নিজেই এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, নাকি অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করে পিকে হালদারই তাঁকে দিয়ে এই নেটওয়ার্ক তৈরি করিয়ে ছিলেন। যাতে পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মাছের ঘের ও আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন।

দেশে ফেরাতে অন্তত তিনমাস লাগতে পারে

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের শীর্ষ জালিয়াত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারকে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেশে ফেরাতে অন্তত তিনমাস লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা।  

রোববার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, আদালতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিন থেকে ছয়মাসের মধ্যে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থ পাচারে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আইনি পথেই দেশে ফেরানোর আশা করছে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

অবশ্য অবৈধভাবে নাগরিকত্ব নেওয়ার অভিযোগে ভারতে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে সেটি সময় সাপেক্ষও হয়ে উঠতে পারে।

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। ভারতের আইনে এটি গুরুতর অপরাধ।

এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা দায়েরর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন রোববার সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তির আলোকে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কারণ সে জনগণের টাকা পাচার করেছে। ভারতে বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবস্থান করে আসছিলেন। সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু আমাদের যে অর্থপাচারের বিষয়টা, আর্থিক  কেলেঙ্কারির বিষয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, বন্দী ফেরত আনতে হলে ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছে বন্দীকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানানো হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *