গৃহবধূকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪

:: জাবি প্রতিবেদক ::

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সাভার মডেল থানার পুলিশ ও আশুলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে গ্রেফতার করে।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান। পলাতক আছেন ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত মো. মামুনুর রশিদ এবং স্বামীকে আটকে রাখায় সহায়তা ও মারধর করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুরাদ। ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ মোস্তাফিজকে সাময়িক বহিষ্কার এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাঁকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন সদ্য পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পাওয়া ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস ও ট্রাফিক উত্তর বিভাগ) মো. আবদুল্লাহিল কাফী।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আশুলিয়া থানায় সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। এ সময় জাবিতে সংঘটিত গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ভুক্তভোগী গৃহবধূ (১৯) ও তার স্বামী (২৪) আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। ভুক্তভোগী গৃহবধূর ভাড়া বাসার পাশের কক্ষেই অভিযুক্ত মামুনুর রশিদ মামুন (৪৪) ভাড়া থাকতেন। শনিবার রাতে মামুন ওই গৃহবধূর স্বামীকে ফোন করে জানান তার থাকার জায়গার সমস্যা। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মীর মোশাররফ হলে তার পরিচিত মোস্তাফিজুর নামে এক ছাত্রের কাছে কিছু দিন থাকবেন। এ সময় মামুন তাকে দেখা করতে বলেন। তিনি শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মীর মোশাররফ হলের ৩১৭ কক্ষে গিয়ে মামুনের সঙ্গে দেখা করেন। পরে তার সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান ও মুরাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মামুন। এ সময় কৌশলে মামুন তার কাপড়চোপড় আনার জন্য ওই গৃহবধূকে ফোন করতে বলেন। তার কথা মতো ওই গৃহবধূর স্বামী তার স্ত্রীকে ফোন করেন। 

তিনি আরও জানান, স্ত্রীকে মামুনের কাপড়চোপড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হলের সামনে চায়ের দোকানে আসতে বলেন স্বামী। সেই কথা মতো ওই গৃহবধূ আসলে তার স্বামীর সঙ্গে চায়ের দোকানে দেখা হয়। এ সময় চায়ের দোকানে উপস্থিত মোস্তাফিজুর, মামুন ও মুরাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের। পরে স্বামীকে নিয়ে অভিযুক্ত মুরাদ কাপড়চোপড় রাখার জন্য হলে যান। এরপর তার স্বামীকে সেখানে মারধর করে বেঁধে রাখেন। তার ঘণ্টাখানেক পর তারা আবার ফিরে এসে ওই গৃহবধূর স্বামীকে ছেড়ে দেন। পরে তার স্বামী হল থেকে নিচে এসে ফোন করলে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয় এবং ধর্ষণের ঘটনা জানতে পারেন। মোস্তাফিজুর ও মামুন ওই গৃহবধূকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের ২ নম্বর গেটের উত্তর দিকে অন্তত ৫০ গজ ভেতরে বাগানের মধ্যে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে বিষয়টি আশুলিয়া থানায় জানানো হয়। 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, এ ঘটনায় জড়িত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (২৮), একই বিভাগের ছাত্র সাগর সিদ্দিক (২৬) ও হাসানুজ্জামান (২৬) এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও দুইজন পলাতক আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুরাদ (২২) ও ভুক্তভোগী স্বামীর পূর্বপরিচিত (বহিরাগত) মামুনুর রশিদ মামুনকে গ্রেফতারর জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এ ঘটনায় পুলিশ আমাদের কাছে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা চাইলে, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। হলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, আমরা শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’

ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের ঘটনা প্রচার হওয়ার পর থেকেই ফুঁসে উঠেছে জাবি’র সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকেই ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ ও দাবি জানাচ্ছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ‘আগুন জ্বালো একসাথে, ধর্ষকের গদিতে’, ‘ধর্ষকদের পাহারাদার হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘অছাত্র ধর্ষণ করে প্রশাসন কি করে’, ‘ব্যর্থ প্রশাসন মুখ লুকাও মুখ লুকাও’, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে নিপীড়ন থাকবে না’, ‘বাহ প্রশাসন চমৎকার ধর্ষকদের পাহারাদার’- এমন স্লোগান আর বক্তব্য দিয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি, বহিরাগতদের হল থেকে বিতাড়িত, প্রশাসনের ব্যর্থতা, ক্যাম্পাসে সুস্থ পরিবেশ, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় সামনে নিয়ে আসছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করেছেন।  

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *