নির্বাচনের আগে নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে তা নিয়ে তারা আগেভাগে কোনো আলোচনা করে না।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে বিরোধীদল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভুয়া সংবাদ এবং ভিডিও বানিয়ে প্রচার করেছে সেটি এক ধরনের উদ্বেগজনক প্রবণতা বলে মন্তব্য করেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের দূরত্ব কমিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা এবং নির্বাচনের পর সমর্থন দেওয়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং তার প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া বক্তব্যগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গণহারে গ্রেফতার এবং কারাগারের ভিতর নির্যাতনের ঘটনার বিষয়টি তাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে যুক্তরাষ্ট্র এবং বিরোধীদলের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সরকারি প্রোপাগান্ডা নিয়ে প্রকাশিত অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করা নিয়ে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীদের করা মন্তব্য প্রসঙ্গে এভাবেই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ম্যাথিউ মিলার।

সকল পক্ষ যেনো স্বাধীনভাবে, হয়রানি এবং সহিংসতামুক্ত  নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে নির্বাচনের আগে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একাধিক  প্রশ্ন করেন স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী।

প্রথম প্রশ্নে মুশফিক জানতে চান, “আজই প্রকাশিত দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসন্ন সাজানো নির্বাচনকে সামনে রেখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ এবং ভিডিও বানিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলি এবং নেতার বিরুদ্ধে এক পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা শুরু করেছে। এই রিপোর্টের অভিযোগের বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবস্থান কী?”

জবাবে মিলার বলেন, “আপনি ভুয়া সংবাদ এবং বাংলাদেশের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো নিয়ে যে রিপোর্টের কথা বলেছেন সেই রিপোর্টটি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ব্যবহার বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত এবং প্রভাবিত করার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা।”

উল্লেখ্য, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, নির্বাচনের আগে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন  আওয়ামী লীগ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে প্রধান বিরোধীদল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে ভুয়া ভিডিও এবং খবর প্রচার করেছে সরকারের মদদপুষ্ট কিছু মিডিয়া।

অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক জানতে চান, “ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে জনগণের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছে। কারণ তথাকথিত নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরো বাংলাদেশকে একটা কারাগারে রুপান্তরিত করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং তার সহকারি প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ম্যানেজ করে নিয়েছে। নতুন সরকার গঠন করার পর তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানাবে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?”

জবাবে মিলার যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “গণহারে বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং কারাগারের ভিতরে গ্রেফতারকৃতদের নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আমরা সব পক্ষকে আহবান জানাই তারা যেনো সংযত হয় এবং সহিংসতা পরিহার করে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাচ্ছি, তারা যেনো নির্বাচনের আগে সব অংশীদারদের সাথে একসঙ্গে কাজ করে।” 

নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে পরিবেশ তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করে এই মুখপাত্র বলেন, “পরিবেশ এমন হতে হবে যেখানে  সকল পক্ষই প্রাক নির্বাচনী এবং নির্বাচনের সময় সব কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেখানে কোনো ধরনের হয়রানি, সহিংসতা এবং হামলার ঘটনা যেন না ঘটে।”

মিলার আরও বলেন, “এটা আমাদের বিশ্বাস যে একটি সুস্থ গণতন্ত্রে ভিন্ন মতের স্বাধীনতা, সংলাপ এবং আলোচনা নির্বাচন নিয়ে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উপায়।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ম্যানেজড হয়ে গেছে মর্মে প্রচারণা চালাচ্ছিলো ক্ষমতাসীনরা। গত ২৪ নভেম্বর, সিলেটে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, নির্বাচনের পর তারা নতুন সরকার গঠিন করলে সেই সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিবে বলে তিনি মনে করেন।

গত ১২ ডিসেম্বর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব কেটে গেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *