নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় আরও ৩ জন গ্রেফতার

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

নিউমার্কেটে সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জড়িত একজন এবং সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী দুজনসহ তিনজনকে শরীয়তপুর ও কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মাহমুদুল হাসান সিয়াম, মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব ও মেহেদী হাসান বাপ্পি।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়েছেন।

র‍্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গ্রেফতার তিনজনের একজন ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মচারী বাপ্পী। ইফতারের সময় টেবিল পাতাকে কেন্দ্র করে এই বাপ্পীর সঙ্গে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারী কাওসারের বিতণ্ডা হয়েছিল।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, নিউমার্কেটে পাশাপাশি দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতারি বিক্রয়ের টেবিল বসানো নিয়ে বিতণ্ডা থেকে হাতাহাতি হয়। প্রতিশোধ নিতে দুই দোকানকর্মী মোয়াজ্জেম ও মেহেদী ফোন করে তাঁদের পরিচিত দুষ্কৃতকারীদের আসতে বলেন। পরে দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে মারামারি হয়। একপর্যায়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে ছাত্র ও কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, যা সংঘর্ষে রূপে নেয়।

মূলত দুই কর্মচারী নিজেদের ‘হিরোইজম, ইগোইজম’ প্রকাশ করার জন্য এবং নিজেদের আধিপত্য দেখানোর জন্য বেশকিছু দুস্কৃতকারীদের ফোনের মাধ্যমে খবর দেয় দুই দোকানকর্মী। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের উসকানো গুজব ছড়িয়ে সংঘর্ষকে আরও বিস্তৃত করা হয়েছে। 

নাহিদকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ইমন বাশারকে শনাক্ত করা গেলেও তাকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

র‍্যাব জানায়, ১৮ এপ্রিল ইফতার চলাকালে দোকানে বসাকে কেন্দ্র করে ওয়েলকাম এবং ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মচারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর বাপ্পী ও সজীব নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের খবর দেয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দোকানের কর্মচারীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাতাহাতির ঘটনার বিষয়টি ভিন্নভাবে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করে তাদের উসকে দেওয়া হয়। প্রচার করা হয়েছিল পোশাক কিনতে গিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, হাতাহাতি এবং এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়। এই খবর শুনেই মূলত শিক্ষার্থীরা দোকানে এসে হামলা চালায়। 

সংঘর্ষ চলাকালে ইটপাটকেলের আঘাতে কর্মচারী নাহিদ রাস্তার পাশে পড়ে যায়। নাহিদ রাস্তার ওপর পড়ে গেলে রড দিয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সিয়াম প্রথম তাকে আঘাত করে। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপাতে থাকে নাহিদ।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সংঘর্ষকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় হামলাকারীদের অনেককেই শনাক্ত করা হয়েছে। যাঁদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে দোকানকর্মী ও বহিরাগত ব্যক্তিরা রয়েছেন।

র‍্যাব বলছে, সিয়ামের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। এখন ইমনকে খোঁজা হচ্ছে। তবে সে দেশ ত্যাগ করেছে কি-না এ ব্যাপারে র‍্যাবের হাতে কোনো তথ্য নেই।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সিসিটিভির ফুটেজ খোঁজা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেককে শনাক্ত করা হয়েছে। অনেকে আত্মগোপনে রয়েছে। যারা সাংবাদিকদের ওপর আঘাত করেছে তারা বহিরাগত এবং কিছু দোকান কর্মচারীও ছিল। 

ঘটনার পর বাপ্পী ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপন করে। নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য তার লম্বা চুল কেটে ছোট করে। কপবাজারের আবাসিক হোটেলে নতুনভাবে চাকরি খুঁজছিলেন।

সংঘর্ষের মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। আসামির সংখ্যা ১ হাজার ৭২৪। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি, যেগুলোর তদন্ত করছে ডিবি। অন্য তিনটি মামলা তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানার পুলিশ। 

নাহিদকে হত্যার ঘটনায় ইতিমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তারা হলেন মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. জুনাইদ বোগদাদী। 

তারা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। সংঘর্ষের সময় তারা ধারালো অস্ত্র নিয়ে সামনের সারিতে ছিলেন। ঢাকা কলেজের একাধিক সূত্র জানায়, এই পাঁচজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *