সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: নিহত বেড়ে ২৩

:: নাগরিক প্রতিবেদক ::

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় মির্জা আজম নামের দগ্ধ আরও একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৩ জনে।

শনিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

চিকিৎসকরা জানান, বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে মারা যান মির্জা আজম। তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিলো।

নিহতের স্বজনরা জানান, মির্জা আজম বাংলাদেশ সেনেটারি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তিনি পরিবারের সাথে রাজধানীর মধুবাগে থাকতেন।

ফুলবাড়িয়ায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বর্তমানে ২১ জন ঢাকা মেডিকেল, বার্ন ইউনিট ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ৮ জন, বার্ন ইউনিটে ৫ জন ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ৮ জন ভর্তি রয়েছেন।

সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় দুই ভবনমালিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বিস্ফোরণে নিহতের ঘটনায় পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছে। 

ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশীদ বলেন, ভবনটি নির্মাণে বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে কি না, সেটি রাজউকের দেখা উচিত ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- ভবনের মালিক ওয়াহিদুর রহমান, তার ভাই মতিউর রহমান এবং ভবনের একটি দোকানমালিক আবদুল মোতালিব হোসেন মিন্টু।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান বলেন, ভবনটির মালিক রেজাউর রহমান নামের প্রয়াত এক ব্যক্তি। তিনি মারা যাওয়ার পর তার তিন ছেলে ওয়াহিদুর রহমান, মশিউর রহমান, মতিউর রহমান, দুই মেয়ে ও স্ত্রী মালিক হন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ওয়াহিদুর রহমান ও ছোট ভাই মতিউর রহমান বর্তমানে ভবনটি পরিচালনা করে আসছেন। মেজ ভাই মশিউর রহমান লন্ডনে বসবাস করেন।

পুলিশ ও স্বজন সংশ্লিষ্টরা বলেন, দুর্ঘটনার পর পর ভবনমালিকসহ বেশ কয়েকজন দোকানিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানায় ডিবি পুলিশ। এরপরই বৃহস্পতিবার তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। নতুন করে আরও কেউ মামলা করতে চাইলে পুলিশ গ্রহণ করবে বলে জানানো হয়।

ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল মাবুদ। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর মাহবুব আলম তাদের দুদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বলেন, রাজউকের উচিত ছিল ভবনটি নির্মাণে অনুমতি নেওয়ার পর বিল্ডিং কোড মেনে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল কি না। যারা ভবনটি থেকে ট্যাক্স আদায় করেন তাদেরও উচিত ছিল, যাদের ট্রেড লাইসেন্স দিচ্ছি, ট্যাক্স নিচ্ছি, তারা বিল্ডিং কোড ফলো করছে কি না! ডিবি পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা ঘটনার তদন্ত করছে।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড বিস্ফোরণের উৎসস্থল। বেইজমেন্টের এই স্পেসটি রাজউকের বিধান অনুসারে খোলামেলা থাকলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। বাড়ির মালিকরা টাকার লোভে আন্ডারগ্রাউন্ডকে একসময় রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পরবর্তীতে সেই গ্যাসের লাইন যথাযথভাবে অপসারণ না করে এসি করা নির্মাণ সামগ্রীর মার্কেট বানিয়ে দেওয়ায় এত প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এটি মালিক এবং দোকানদারের স্বেচ্ছাচারিতা, লোভ ও অবহেলার কারণে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের নর্থ-সাউথ রোডে ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাততলা ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টা চালিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *