নয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার ৬৪০১ জন

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৪০১ জন রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৩১ জন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। বাকি ৬৩ জন ক্ষমতাসীন দলের আন্তর্কোন্দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে মারা গেছেন।

এছাড়া চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মাস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল রিসার্চ আয়োজিত ‘মানবাধিকারের ধারণা ও বাস্তবতা: বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা। তিনি বলেন, গত নয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে সাতজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছেন। বাকি ৬৩ জন ক্ষমতাসীন দলের কোন্দল ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরে ১১ মাসে পুলিশি হেফাজতে ৯৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন সাত হাজার ৫৮৮ জন। যার মধ্যে নিহত ১২১ জন ও আহত সাত হাজার ৪৬৭ জন। এছাড়া গত বছর ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রায় দুই হাজার ৩৫৬ জন নারী। পাশাপাশি গত বছর এক হাজার ৪১৫ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

এ কে এম বদরুদ্দোজা বলেন, গত বছর বিভিন্নভাবে নির্যাতন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৫৩ জন সাংবাদিক। এরমধ্যে দুইজন হত্যাকাণ্ডের শিকার, পাঁচজন গ্রেফতার, ৪৩ জনকে হুমকি, ১৬৫ জন আহত এবং ৩৮ জন লাঞ্ছিত হয়েছেন। ২০২২ সালে ক্রসফায়ারে সাতজন, গুলিতে ১৩ জন ও নির্যাতনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গুমের শিকার হয়েছেন ৪৪৪ জন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গুমের ঘটনা ঘটেছে ২০১৮ সালে, যার সংখ্যা ৯৮টি। আর সবচেয়ে কম গুমের ঘটনা ঘটেছে ২০২২ সালে, এই সংখ্যা সাতজন।

তিনি আরও জানান, ২০২২ সালে ১২টি মন্দিরে হামলা হয়েছে, ১৬টি হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে ও ৪৩টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় ৪৮ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ আহত হয়েছেন। ২০২১ সালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনজন নিহত হন, আহত হয়েছেন ১০১ জন, ১৬১টি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, পাঁচটি জমি দখলসহ ১৮৯টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের তো অনেক মানবাধিকার আইন রয়েছে। কিন্তু এই আইনগুলো আমাদের এখানে মানা হচ্ছে না। আমরা সব সময় আইনগুলোকে পদদলিত করে আসছি। আমাদের এখানে কেউ গুম হয়ে গেলে তার আর খোঁজ পাওয়া যায় না। এখন তো কথায় কথায় গুম হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। আসলে নির্বাচন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। এখন এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। তার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল রিসার্চের প্রধান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মাসদার হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ প্রমুখ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *