পালিয়েছে দুই জঙ্গি, রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪) ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে (৩৪) ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এজন্য প্রতিটি থানা ও অন্যান্য ইউনিটকে চেকপোস্ট বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, আমরা রেড অ্যালার্ট জারি করেছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।

দুই জঙ্গির ছবি, তাদের শরীরের বিবরণ জানিয়ে ডিএমপির প্রতিটি ইউনিটকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।  

এ নির্দেশনা পাওয়ার পর নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি বসিয়েছে থানা পুলিশ। পাশাপাশি র‍্যাব, ডিবি, কাউন্টার টেররিজম ইউনিটসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ইউনিটগুলো তৎপর হয়েছে।

এদিন দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে এসে ২ আসামিকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে হাজির করে হাজত খানায় নেওয়ার সময় চার আসামির মধ্যে দুইজনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন প্রকাশক দীপন। 

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন- বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। 

গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে আসামিদের সবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

এদিকে আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রোববার (২০ নভেম্বর) সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ছিনিয়ে নেওয়ার পরপরই তাদের ধরতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে। আশা করি শিগগিরই তারা ধরা পড়বে।

ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গির মধ্যে একজন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান (২৪)। সে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। আর অপর জন আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব (৩৪)। সে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটশ্বর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।

এদিকে এ ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, দুর্বৃত্তরা প্রথমে এসে পুলিশের চোখে স্প্রে মারে। এ কারণে পুলিশ তড়িৎ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তারা ওই দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা কাজ শুরু করেছে। আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ওই দুজন মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলার আসামি ছিল। পরে মোটরসাইকেলে করে তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনা একটি তদন্ত কমিটিও করা হবে। কারোর দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি, দ্রুত ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।

ডিএমপি উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন জানান, দুুপুর ১২টার দিকে এই দুই জঙ্গিকে ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে তোলার জন্য আদালত চত্বরে নিয়ে আসে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। এ সময় নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের মুখে বিশেষ ধরনের স্প্রে করে লাপাত্তা হয়ে যায় তারা। ঢাকা শহর থেকে বের হওয়ার প্রতিটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বের হওয়া গাড়িগুলো কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বহিষ্কৃত মেজর জিয়া, আকরাম হোসেন, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুস সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু ওরফে সাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার এবং শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের। আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *