:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে পেটানোর প্রকাশ্য হুমকিকে অসহযোগিতামূলক আচরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব মন্তব্য করেন উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতার দেয়া হুমকিকে ভয়ংকর রকমের সহিংসতামূলক আচরণ বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের নিয়মের বাধ্যবাধকতা অনুসারে স্বাগতিক দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহবান জানিয়েছেন।
বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে গত ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল হক চৌধুরী দলটির এক সমাবেশে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে পেটানোর যে হুমকি দিয়েছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানান মুখপাত্র বেদান্ত।
পিটার হাসের উদ্দেশে মুজিবুলের দেওয়া হুমকির বিষয়টি গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে ওঠে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন যেনো একতরফা না হয় সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হতে পারে সে প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান উপ মুখপাত্র প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, বিরোধীদলসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
আওয়ামী লীগ আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের করেসপন্ডেন্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “বাংলাদেশে বিরোধীদলের ৮ হাজারের বেশী কর্মী এখন জেলে আটক রয়েছে। নূন্যতম মজুরী বাড়ানোর দাবি জানাতে গিয়ে ৩ জন পোশাক শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে । এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আপনাদের বিবৃতিটি আমি লক্ষ্য করেছি। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দেয়না সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেভাবে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? কারণ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটিতে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে।”
জবাবে বেদান্ত বলেন, “বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আমি কোনোকিছু ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিনা এখন। আপনি বলেছেন- আমরা বাংলাদেশের কোনো প্রার্থী বা দলের পক্ষে নই। আমাদের আশা এবং আকাঙ্খা হচ্ছে–আমরা সরকার, বিরোধীদল, সুশীল সমাজ এবং অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখেছি যাতে করে নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়।”
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বলিষ্ট ভূমিকা রাখায পিটার হাসকে আওয়ামী লীগ নেতার প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই প্রতিবেদক জানতে চান, “বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে বলিষ্ট ভূমিকা রাখার জন্য ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা যেভাবে হুমকি পাচ্ছেন সেটার মাত্রা এবং নিরাপত্তাবিষয়ক উদ্বেগকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বাংলাদেশে কূটনীতিক দূতাবাস কর্মকর্তা এবং দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট কী ধরনের পদক্ষেপ আপনারা গ্রহণ করেছেন?”
জবাবে বেদান্ত বলেন, “বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আমি যেটা বলতে চাই সেটা হল- কূটনীতিক এবং দূতাবাসের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি এ ধরনের সহিংসতামূলক নির্দেশ ভয়ংকর রকমের অসহযোগিতামূলক আচরণ।”
তিনি আরও বলেন, “এই ভয়ংকর পরিবেশের বাইরে আমরা যেটা প্রত্যাশা করি সেটা হল– স্বাগতিক দেশের সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কর্মকর্তা এবং দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
অন্য একজন সাংবাদিক জানতে চান- বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এ বিষয়ে আপনি কিভাবে আস্থাশীল? এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বাংলাদেশের জনগণ। আমরাও সেটা চাই। এ জন্য আমরা যোগাযোগ রাখছি সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে। বাংলাদেশি জনগণের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে তা করা হচ্ছে। অন্য একজন সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে প্রশ্ন করেন। জানতে চান, নির্বাচন থেকে প্রায় দুই মাস আগে যারা ভাঙচুর করছে, নির্বাচনী ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের বিষয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে কিনা। জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, আমরা আশা করছি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের।