প্রকৌশলী ম ইনামুল হক কী মুক্তিযোদ্ধা?

:: প্রকৌশলী ম ইনামুল হক ::

সম্প্রতি ঢাকার শাহবাগে ঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে অনেকের মনেই প্রশ্ন, প্রকৌশলী ম ইনামুল হক ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কিনা? কারণ, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ম ইনামুল হক করাচিতে ছিলেন। ঠিক, ম ইনামুল হক ১৯৫৯ সাল থেকে ২৪ জুলাই ১৯৭৪ করাচিতে ছিলেন। ১ মার্চ ১৯৭১ বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তার পিতা পরিবারশুদ্ধ দেশে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের ফ্লাইট ছিল ২৬ মার্চ সকালে যেটা বাতিল হয়। তারা ৩১ মার্চ আরেকটি ফ্লাইট পান সেটাও বাতিল হয়। ম ইনামুল হক তখন করাচীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন ও পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী লেনিনবাদী) করেন। ঐ দল ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’কে জনযুদ্ধ আখ্যা দেয় ও পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ফ্রন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ম ইনামুল হক ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ গোপনে দলের দ্বিতীয় আরবান গেরিলা স্কোয়াডে যোগ দেন।

ম ইনামুল হক এর গোপন জীবন ১০ সেপ্টেম্বের ১৯৭১ থেকে ২৫ মে ১৯৭২। গেরিলা অপারেশনের ট্রেনিং নেয়া ও কিছু ছোটখাট অ্যাকশনে অংশ নিতে নিতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। পার্টি তার গেরিলা স্কোয়াড ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু ম ইনামুল হক অস্ত্র মামলায় পড়ে বাড়ী ফিরতে পারেন নি। পার্টি তাকে প্রথমে করাচীর সাইট শিল্প এলাকায় ও পরে হায়দরাবাদের শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করতে নিয়োজিত করে। মে ১৯৭২ এর শুরুতে একদিন গোপনে বাড়ীতে এলে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। এরপর তিনি তার পিতাসহ যারপর নাই পুলিশী নির্যাতনের শিকার হন ও কিছুদিন জেলে ছিলেন। এক হিন্দু ম্যাজিস্ট্রেট ও আদালতের সহায়তায় তিনি মুক্তি পান। এরপর তিনি পুনরায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন।

ম ইনামুল হক ভারতে যান নাই সেই বিচারে তার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই। ঐ সময় বাংলাদেশের ভেতরেও যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের সার্টিফিকেট নেই। তাছাড়া চীনপন্থীরা ভারতে গেলে কতল হয়ে যেতেন। চীনপন্থী অধ্যাপকরা ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর ঢাকা ও অন্যত্র কতল হয়েছেন। ম ইনামুল হক তার কাহিনী ‘স্মৃতিতে জীবন’ বইতে লিখেছেন। তার দৃষ্টিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী লেনিনবাদী) সিদ্ধান্ত ছিল কম্যুনিস্ট আন্দোলনের জন্য গৌরবের। কিন্তু বাংলাদেশের কম্যুনিস্টরা তাদের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে ‘ম ইনামুল হক পাকিস্তানে ছিলেন তাই তিনি রাজাকার’ এই প্রচারণা চালায়। তিনি নিজে জড়িত একটি স্বনামধন্য কম্যুনিস্ট পত্রিকার সম্পাদকও তাঁর কাহিনী ছাপতে রাজী হননি।

লেখকঃ চেয়ারম্যান, জল পরিবেশ ইনস্টিটিউট ও আহ্বায়ক, সর্বজন বিপ্লবী দল

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *