জ্ঞানের ভাণ্ডার প্রফেসর ড. মাসুদুল হাসান

:: জসীম উদ্দিন ::

বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মাসুদুল হাসান স্যার। আমি যখন এমসি কলেজের ছাত্র, স্যার তখন ওই কলেজের রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেন। কলেজের পাশে আবাসন হওয়ায় আমরা কতিপয় বন্ধুরা প্রায়ই বিকেলবেলা কলেজ ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতাম। কখনও কখনও সেই আড্ডা সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যেত।

তখন প্রায়ই স্যারকে দেখতাম সকালে হাতে টিফিন বক্স এবং কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে কলা অনুষদ হয়ে পুকুরপাড় ধরে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে ঢুকতেন রসায়ন বিভাগে। আবার একা একা সন্ধ্যার সময় বের হতেন ক্যাম্পাস থেকে। আমরা প্রায়ই এই দৃশ্য দেখতাম। একদিন ক্যাম্প্যাস থেকে বের হওয়ার সময় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে স্যারের কাছে গিয়ে পরিচয় দিলাম এবং স্যার এত পরে কেন বের হন জানতে চাইলাম। স্যার হেসে বলছিলেন, ‘It’s my duty, my research, my pleasure.’

এরপর অনেক্ষণ কথা হলো স্যারের সাথে। স্যার জানালেন যে তিনি ক্লাসের আগে-পরে ল্যাবে গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিছুদিন পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন গবেষণার জন্য। একদিন ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন। তৎকালীন এমসি কলেজে রসায়ণ বিভাগে অধয়নরত আমার বন্ধুরা স্যার সম্পর্কে আরো ভালো বলতে পারবে। পরিচয় হওয়ার পর স্যারের সাথে প্রায়ই দেখা হত, কথা হত, কুশল বিনিময় হত। ২০১২ সালে আমি যখন সিলেট থেকেল বানিয়াচংয়ে শিফট্ করি স্যার তখন হয়ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বদলী হয়ে যান। ২০১৫ সালে হঠাৎ একদিন স্যার আমার কলেজে, মানে বানিয়াচং আইডিয়েল কলেজে এসে হাজির! দেখামাত্রই ইংরেজিতে অনেকক্ষণ কথা হয়ে গেল। এত স্মার্টলী ইংরেজিতে কথা বলেন স্যার! মুগ্ধ না হয়ে পারি না। কলেজের খোঁজখবর নিলেন। কিছুক্ষণ থেকে বিদায় নিলেন। সম্ভবত বছর দুয়েক আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি স্যার বৃন্দাবন সরকারি কলেজে উপাধ্যক্ষ হয়ে যোগদান করলেন। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছি। অভিনন্দন জানিয়েছি। স্যারের সাথে দেখা করবো করবো করে চলে গেল অনেক দিন। ইতোমধ্যে স্যার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়ীত্ব পেলেন। আমিও ছোটখাটো একটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আজ অফিসিয়াল কাজেই দেখা করতে হলো স্যারের সাথে।

এক ঘন্টা সময় দিলেন আমাকে। শিক্ষাসহ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলো। আলোচনা হলো বানিয়াচংয়ে স্যারের গড়া একটি মাদ্রাসা নিয়ে।

স্যার জানালেন এখনও গবেষণার কাজে নিয়োজিত তিনি। বর্তমানে বছরে একবার জার্মানী যেতে হয়। একমাস থাকতে হয় সেখানে। জার্মানীর টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বার্লিন এ ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োজিত আছেন তিনি। প্রতিমাসে একটি ক্লাস নেন অনলাইনে। এই একটি ক্লাসের জন্য ৩/৪ দিন প্রস্তুতি নিতে হয় স্যারকে। ওই ইউনিভার্সিটিতে স্যারের অনেক সহকর্মী আছেন যারা ইতোমধ্যে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।

এই বয়সে এত সতস্ফুর্ত, এত প্রাণবন্ত একজন মানুষ তিনি! কথা বলে বুঝতে পারলাম জ্ঞানের জন্য এখনও উনার যে তৃষ্ণা! আহা! এসব মানুষের সান্নিধ্যে গেলে নিজেকে একেবারে ধূলিকণার চেয়ে ক্ষুদ্র মনে হয়! বিজ্ঞান, সাহিত্য দর্শন, ধর্ম সব শাখায়ই পদচারণা উনার!

স্যারের জন্য অনেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো। আপনি দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন। সভ্যতা আপনার মত জ্ঞানীদের কাছে ঋণী থাকবে, শ্রদ্ধেয় স্যার।

লেখক: কলেজ শিক্ষক

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *