আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা বাইডেনের

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রচারে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আজ মঙ্গলবার এক ভিডিওবার্তায় তিনি নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন।

২০১৯ সালে রাজনীতিতে ফেরার চতুর্থ বার্ষিকীতে বাইডেন প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য বাইডেনের এটি তৃতীয় লড়াই। তার রানিং মেট হিসেবে এবারও থাকবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। একইদিনে তিনিও নির্বাচনের প্রচার শুরু করেছেন।

এনবিসির টকশো অনুষ্ঠান এনবিসি টুডেকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, ‘আমি নির্বাচনে দাঁড়ানের পরিকল্পনা করছি….তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণাটি দিতে আরও খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে চাইছি আমরা।’

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ অর্থাৎ আট বছর দেশের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন। তবে প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করার পর পরবর্তী মেয়াদে যেতে হলে অবশ্যই তাকে নির্বাচনে জিততে হবে।

ক্ষমতার প্রথম মেয়াদ পূর্ণ করে কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা— সেই সিদ্ধান্ত নেয় হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পরিষদ। তবে এটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মূল সিদ্ধান্ত নেন আসলে প্রেসিডেন্ট নিজে।

এখন জো বাইডেনের বয়স এখন ৭৮ বছর; আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় তার বয়স হবে ৮০ বছর। বয়সজনিত কারণে তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেকেই বাইডেনকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন বলে জানা গেছে।

তবে বাইডেনের স্ত্রী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডে জিল বাইডেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চান— তার স্বামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের রানিংমেট ছিলেন কমলা হ্যারিস, যিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যদি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাইডেন, সেক্ষেত্রে সেবারও রানিংমেট হিসেবে আসবেন কমলা হ্যারিস।

সম্প্রতি এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা বাইডেনকে আবারও হোয়াইট হাউসের লড়াইয়ে দেখতে চান। প্রায় অর্ধেকের মতো ডেমোক্র্যাট মনে করতেন তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হতে চাইবেন। অবশ্য জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল আরও কম, মাত্র ৩৭ শতাংশ।

এদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক মাস আগে রিপাবলিকান মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই শুরু করেছেন। উভয়েই প্রার্থিতার জন্য লড়াইয়ে নামায় রাজনৈতিক ও আইনি উত্তেজনা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই রিপাবলিকানদের হয়ে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। তবে তিনি বেশ কয়েকটি বিতর্কের মুখে রয়েছেন। সাবেক পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার একটি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের নির্বাচনের পরাজয়ের পর ক্যাপিটল হিলে তাণ্ডবের ঘটনায় তাঁকে নিয়ে তদন্ত চলছে।

এদিকে গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বাইডেনের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন একটি দুর্দশাপূর্ণ ও ব্যর্থ সময় পার করার পর, এটা কল্পনাও করা যায় না যে বাইডেন আবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা মাথায় আনবেন।’

এক নজরে জো বাইডেন

পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, তবে ‘জো বাইডেন’ নামেই বেশি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেছেন। এর আগে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তাঁর বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।

বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।

শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।

পরিবার: সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। সিনেটর হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।’ ৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৮৭ সালে একবার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। তবে অসুস্থতার কারণে ১৯৮৮ সালে প্রাইমারির শুরুতে ক্ষান্ত দেন তিনি। ২০০৭ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রাইমারিতে নামেন। সেই যাত্রায় তিনি বারাক ওবামা আর হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালে ওবামা তাকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *