বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে চিকিৎসক।

মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরহাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজের তিন দিন পর সোমবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ বনানী ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তি রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ এলাকার সাংবাদিক কাজী নূর উদ্দিন রানার ছেলে ফারদিন নূর পরশ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরা থেকে নিখোঁজ হন বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন। পরদিন তার বাবা নূরউদ্দিন রানা রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন। পরে সন্তানের খোঁজ চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্টও করেন নূরউদ্দিন রানা। সেখানে তিনি বলেন, ফারদিন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে শেষবার রামপুরা ব্রিজ এলাকায় দেখা যায়। ওই দিন রাত পৌনে ১১ থেকে ১১টার মধ্যে ফারদিন সেখানে অবস্থান করছিলেন। এরপর তার বুয়েটের হল কিংবা বাসায় ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সে ফেরেনি।

এ বিষয়ে নৌ পুলিশের নারায়ণগঞ্জের সুপার মিনা মাহমুদা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় মরদেহ সুরতাহালের সময় ফারদিনের পকেট থেকে তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও ব্লুটুথ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এটি আসলে হত্যা কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর। এ ঘটনায় ফারদিনের বাবা হত্যা মামলা করবেন। মামলার পর তদন্তে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেছেন, ২৫ বছর ধরে বহু কষ্ট করে সন্তানকে গড়ে তুলেছেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন। ছেলের মৃত্যুতে তাঁদের সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

ছেলের যখন ময়নাতদন্ত চলছিল তখন বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা কাজী নুর উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এমন মৃত্যু মা–বাবা হিসেবে কীভাবে মেনে নিই? আমি তো আমার ছেলেকে ফেরত পাব না। এই যে মেধাবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, তাহলে তো কোনো মা–বাবা তাঁদের সন্তানকে বুয়েট বা উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠাবেন না। এই হত্যাকাণ্ডে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচার হোক।’

নূর উদ্দিন বলেন, তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। ছেলের শোকে তিনি শয্যাশায়ী। খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন।

ফারদিন নূর বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকার কাজী নূর উদ্দিনের ছেলে। তবে তাঁরা বর্তমানে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় থাকেন।

ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলায়। 

মেধাবী ফারদিন এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন। ফারদিন পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজে জড়িত ছিলেন। তিনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আসা-যাওয়া ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।’  

ফতুল্লায় ফারদিনের দাফন সম্পন্ন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পাগলা দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তৃতীয় জানাযা শেষে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের দাফন বাদ মাগরিব সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে বিকেল সোয়া ৫টায় ফ্রিজিং গাড়িতে ফারদিন নূর পরশের লাশ দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে আনা হয়। এসময় তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা, চাচা আবু ইউসুফ, ছোট ভাই সালেহ নুর, তাদের বন্ধুরাসহ পরিবারের অনেকে সঙ্গে ছিলেন।

নিহত পরশের নিজ বাড়ি পাগলা নয়ামাটি এলাকায়। তাঁর দাফনের সময় স্থানীয় মুসল্লিরা এবং স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গ থেকে ঢাকায় বুয়েট ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয় ফারদিনের লাশ। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। এতে বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে সেখানে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা। 

এরপর বিকেল ৩টায় লাশ নিয়ে আসা হয় ডেমরা কোনাবাড়ির ভাড়াবাড়িতে। এসময় নিহতের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা ফারহানা ইয়াসমিন। বারবার মুর্ছা যেতে যেতে তিন বলতে থাকেন, তিলে তিলে মানুষ করে গড়ে তোলা স্বপ্ন হত্যার বিচার চাই আমি।

পরে সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন এলাকাবাসী ও স্বজনেরা। ছিলেন সহপাঠী ও বুয়েটের অনেক শিক্ষার্থীও।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *