:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের হারে বিশ্বকাপে থেকে সবার আগে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। পাকিস্তান জয় তুলে নিয়েছে হাতে ১০৫ বল থাকতেই।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জিতে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৭ রানে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে, ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৯ রানে এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে হলে পয়েন্ট তালিকায় ৮ এর মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। সেই লক্ষ্যে খেলতে নেমে আজ হার নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।
ইডেন গার্ডেনসে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পঞ্চম বলে তানজিদ হাসান তামিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলান পাকিস্তানি পেসার। ৫ বলে কোনো রান না করেই ফেরেন বাঁহাতি ব্যাটার। সতীর্থকে অনুসরণ করে ড্রেসিংরুমে দ্রুত ফেরেন তিনে ব্যাটিংয়ে নামা নাজমুল হাসান শান্তও। ৪ রানে বাংলাদেশের সহ অধিনায়ক ফেরেন শাহিনের বলেই।
দলের হাল ধরতে এসে দ্রুত ফেরেন মুশফিকুর রহিমও। হারিস রউফের বলে ৫ রানে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ দেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। এতে করে টুর্নামেন্টের নিয়মিত রুটিনই যেন অনুসরণ করেছে বাংলাদেশ। শুরুতেই টপ অর্ডার ধসে যাওয়া। মুশফিকের আউটে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২৩ রানে ৩ উইকেট।
বাংলাদেশ দলের হাল ধরেন লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে ৭৯ রানের জুটি গড়েন দুজনে। কিন্তু ৪৫ রানে লিটন আউটের পর আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৫ রানের জন্য লিটন না পেলেও ফিফটি পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ফিফটি করার পর ইনিংসকে বড় করতে পারেনি তিনিও। ৫৬ রান করে সতীর্থর দেখানো পথেই ফেরেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। এ ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে আবারও ফেরা তাওহীদ হৃদয়ও বেশিক্ষণ টেকেননি। ৭ রানে আউট হন তিনি। ১৪০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন পাকিস্তানি বোলারদের সামনে ধুঁকছিল বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত ২০৪ রান আসে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের সৌজন্য। দুজনে মিলে ৭ম উইকেটে ৪৫ রান যোগ করেন। ৪৩ রানে সাকিব আউট হলে একের পর এক উইকেট হারিয়ে ২০৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। মাঝে ২৫ রান করেন মিরাজ। বাংলাদেশের শেষ ৩ উইকেটই নেন ওয়াসিম জুনিয়র। তাঁর সমান উইকেট পেয়েছেন শাহিনও।
এ ম্যাচ দিয়ে আবারও একাদশে সুযোগ পাওয়া ফখর জামান শুরুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে। পরে তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশি বোলারদের বিরুদ্ধে আক্রমনে যোগ দেন আবদুল্লাহ শফিকও।
উদ্বোধনী জুটিতেই ২২ ওভার শেষ হওয়ার আগেই ১২৮ রান যোগ করেন শফিক-ফখর। ফিফটি তুলে নিয়েছেন দুজনই। তবে ফিফটির পর দুজনের কেউই ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি। শফিকের ৬৮ রানের বিপরীতে ৮১ রানে আউট হন ফখর। দুজনকেই আউট করেছেন মিরাজ।
পরে বাবর আজমকেও আউট করে পরাজয়ের ব্যবধান কমান মিরাজ। ৯ রানে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। জয়ের বাকি কাজটুকু সমাপ্ত করেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার রিজওয়ান। আর ১৭ রানে ইফতিখার। ১০৫ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের এই জয়ে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা টিকে রইল পাকিস্তানের। ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্টে এখন ৫ নম্বরে পাকিস্তান দল।
‘আমরা সবাই মিলেই খারাপ খেলছি‘
কারো নাম না নিয়ে মিরাজ তাই সহজ-সরল ভাষাতেই বললেন, ‘আমরা সবাই মিলেই খারাপ খেলছি।’
সবায় মিলে খারাপ খেলার ব্যাখ্যা আরেকটু বড় করে মিরাজ বলেন, ‘ওপরে রান আসছে না। মিডল অর্ডারে ইনিংস ধরতে পারছি না। টেল এন্ডে ফিনিশিং দিতে পারছি না। আসলে সব মিলিয়ে, সবাই মিলেই একসঙ্গে খারাপ খেলছি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৪ রান করে ৭ উইকেটে হারার পর সংবাদ সম্মলনে এসে একরকম হাত উচিয়ে আত্মসমর্পন করেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
অবশ্য পাকিস্তানের সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন, ম্যাচে আড়াইশ’র মতো রান হলে হয়ত আরেকটু লড়াই করা যেত, ‘আসলে এমন লো স্কোরিং ম্যাচে বোলারদের সেভাবে করার কিছু থাকে না। আমাদের ব্যাটারদের আরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করা দরকার।’
মিরাজের সামনে আসা একটি প্রশ্ন ছিল এমন– ইডেনে প্রায় ২৬ হাজার বাংলাদেশি সমর্থক এসেছিলেন। তাদের জন্য কতটা খারাপ লাগছে? উত্তরে সমর্থকদের পাশেই থাকতে বললেন মিরাজ, ‘জানি তারা কতটা কষ্ট পেয়েছে। আমাদেরও খারাপ লাগছে। তবে দেখুন তারা সব সময় আমাদের পাশেই থাকে। নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পরও দেখুন আজ আমাদের খেলা দেখতে কত মানুষ এসেছে। খারাপ সময় কাটবেই একদিন।’
দলের ওপর ভরসা রাখতেও বলেন তিনি, ‘ভরসা রাখুন, একদিন আমরা ঘুরে দাঁড়াবোই।’ দলের এই অবস্থার জন্য অবশ্য ভাগ্যকেও দায়ী করেছেন দলের এই মুখপাত্র, ‘কে কি বিশ্বাস করে আমি জানি না, তবে আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। ভাগ্য আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে না।’