বাংলা ভাষা, জেরিমি কড্রন এবং আব্বুর ইনহেলার

:: কমল সালাউদ্দিন ::

অনুসিদ্ধান্ত
১। বিহারির প/ফুত লম্বা লম্বা দুত/দ/ধ।২। রাষ্ট্রসংঘ বা জাতিসংঘ কে অনুসরণ করলেই বাঙলা-ভাষা আকারে বিশ্ববাগানে কি জাদু দেখিয়েছিল সেটা ফর্শা হয়া উঠে।৩। ‘বাংলা ভাষা’য় বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গর-হাজির গায়েব বা অনুপস্থিত। এটা ইউরোপের সাথে তুলনামূলক বিচার নয়। বরং অনেক প্রস্থ কমিয়ে ভারত বর্ষের লগে তুলনামুলক বিচারই এই সিদ্ধান্তের মাঠ বা পটভূমি।–জনৈক ফিলোসফি অফ ডক্টিরন সম্মান অর্জন করা একজন প্রাজ্ঞের প্রজ্ঞা।


প্রাজ্ঞজন কহেন, ‘বাংলা-ভাষা’কে বাংলাদেশ রাষ্ট্র’র উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলোতে পরিত্যাজ্য ঘোষনা করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হইবে ইংরেজী। প্রাজ্ঞজন’র এহেন সিদ্ধন্তের লগে আমার সহমত নাই। কাজেকাজেই এই কর্ম বাস্তবায়নের জন্য আমি ব্যক্তি আকারে সময় দান করিব না। তবে প্রাথমিক উন্নয়ন’র জন্য এই কাঠামো বা সিদ্ধান্ত নিলে আমি অখুশী হবো না।


কারণ, আমার অভিজ্ঞতায় ভাষার সক্ষমতা এবং জ্ঞানে ২জন পাকিস্তান পর্বের শিক্ষা পাওয়া নাগরিককে আমি জানি। এর একজন আমার নানী সানজীদা খাতুন। যিনি পাকিস্থান পর্বে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছেন বলে জানতাম। তয় উনার ইংরেজী পড়া, লেখা এবং বলা ৮০’র দশকের পরবর্তী কালে ইংরেজীতে উচ্চশিক্ষা অর্জনকারীদের চেয়ে বেশী ধারালো এবং সুন্দর। নানী ২০১৭/১৮ ঈসায়ীতে মিরপুর ২নং কবরস্থানে বিশ্ববাগান পাড়ি দিয়ে মহাবাগানে চলে যান।২য় জন হোল আব্বু নুরুল আমিন হেলালী। আব্বুর একাডেমীক পড়ালেখার তথ্য আমি জানি না। কারো থেকে বিএ পাশ কারো থেকে ইন্টার পাশ বলে শুনে আসছি। যুদ্ধের কৌশল, গুপ্তচরবৃক্তি এবং আর্মস-স্মাগলিং করবার নিমিক্তে নাকি আব্বু পাকিস্থানেও পড়ালেখা করেছেন-এইরাম একটা তথ্য বছর খানেক আগে কি একটা প্রসঙ্গে যেন শুনতে পাই। কে বলেছিলেন স্মৃতি আনতে পারছিনা।–এই সম্পর্কে মানে আব্বুর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে আব্বুর চেনাজানা কেউ অধমের এই লেখা পাঠ করলে এবং কিসু জানা থাকলে দয়া করে জানাবেন। এতে করে আমার দুনিয়ায় যাপিত জীবনে যত দম আমি নিঃস্বরন করেছি-করব সকল দম-সম কৃতজ্ঞতার ঝুলি আপনার প্রতি থাকিবে। তবে শাপলাপুরে শিক্ষার বিকাশে দুইজন অবদান রাখা বা শিক্ষাদানকারী হতে জানা যায়, আব্বুও নাকি ওনাদের সাথে পড়াতেন বা শিক্ষকতা করতেন। মাঝেসাঝে আব্বু আমাকে ইংরেজী-বাংলা ব্যাকরণ পড়িয়েছেন। শিক্ষাদান এবং শিক্ষা যে রস আস্বাদনের সাত-আসমান এটা আব্বুর অল্পসময়ের ছাত্র হয়া আমি একিনে আনতে পেরেছি। আব্বুর ইংরেজী এবং বাংলায় দক্ষতা ছিল অসাধারন। আব্বুর এই দুই ভাষায় হাতের লেখা দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে কিছুটা। এতদুরই শুধু বলবো ইন্টার পর্যন্ত আমি এমন হাতের লেখা দেখি নি। ইন্টারের পরে দুয়েকজনকে পেয়েছি।তবে না বললে ইনসাফ হবে না এই যে আমাদের স্কুলের/চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের আমাদের ব্যাচের ফার্স্টবয় মঈনুল মোস্তফা মিঠু’র সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের পরে অন্যক্লাসে উত্তীর্ন হবার প্রথমদিককার ক্লাসে তার পরীক্ষার খাতাগুলো সবাইকে দেখানো হোত। আমি শেষের বেঞ্চের হোলেও ইন্ট্রুভার্টস হোলেও লাজ-লজ্জা থুইয়ে সামনে চলে আসতাম। দেখতাম-পুরো খাতায় কোন শব্দ কোলন কমাতেও স্যার দাগ দিতে পারেন নি। সফেদ সাদা ফর্শা গুটগুটে হাতের সোজা রোলটানা অক্ষর-বাক্যরা যেনো দোলনায় জোসনা রাতে অমিয় সুধা পান করছে গ্রামবাংলার প্রকৃতিতে। বিশেষ কোন ফ্যাশন নাই। মাগার সতেজ সহজ মিঠুর হাতের লেখা পেছনের সারির ছাত্র হয়েও তাঁর প্রতি বন্ধুত্ব নিবেদন করবার সাহস জোগায় আমাকে। হোস্টেলে না থাকা ছাত্রদের সাথে আলাপ হোত কম এর উপরে ছিলাম অন্তর্মুখি। এরপরেও মিঠুকে দরদ করি সংগোপনে কাছে যাই কথা বলতে চাই একপর্যায়ে তাঁর হাতের লেখা কপি করবার চেষ্টা করি। এই লেখা যতদূর নকল করতে পেরেছি সম্ভবত তাই দিয়ে পাশ করেছি। সম্ভবত আমাদের ব্যাচটাই প্রথম শতকরা একশ ভাগ পাশ করেছে বা তাঁর আশপাশে৯৮/৯৯ভাগ। এবং আমরাই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নয়াকাঠামোর পয়লা অভিযাত্রী। ‘গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ’ বা জিপিএ আমাদেরকে দিয়েই বাংলাদেশ রাষ্ট্র ৩১বছর বয়সে তাঁর শিক্ষাব্যবস্থার যৌবনের শুরুয়াত করলো।


এতেকরে ফর্শা এক দিক বা চিহ্ন নির্ধারন করলো রাষ্ট্র-তোমাদেরকেই আগামী বাংলাদেশের মাঝি হইতে হবে। তোমরা যা যাপন-রোপন করবা তাই হবে আগামী বাংলাদেশ।চাইলে-না চাইলেও অস্ত্র এবং পতাকা হয়তো আমাদের অজান্তেই আমাদের কাঁধে চড়িয়ে দিল রাষ্ট্র। যার সম্মান বা মান আমার পর্যবেক্ষনে আমরা আজতক দিতে অক্ষম। অনেক অনেক দুঃখ অনুভব করছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। তবে হাল ছেড়ো না। রাষ্ট্র তোমার প্রেম যেনো থেকো আমাদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থলে।শাপলাপুরের দুই শিক্ষানুরাগীর একজন মাস্টার আবুল কালাম আংকেল। ওনাদের বংশ পৃথীবীর একমাত্র পাহাড়ওয়ালা দ্বীপ খ্যাত মহেশখালীর আদিবংশ গুলানের অন্যতম। অপরজন চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের হোস্টেলসুপার আব্দুর রাজ্জাক স্যার। বাংলাদেশের সক্রেটিস বাংলার পন্ডিত যেমন ‘যদ্যপি আমার গুরু’খ্যাত অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তেমনি আব্বুর বন্ধু আব্দুর রাজ্জাক স্যার ছিলেন আমার ২য় অভিভাবক বা আমার সক্রেটিস। যিনি আমাকে ‘একাডেমিক’ বলে একটা বিষয় যে দুনিয়ায় আছে বা বিদ্যাপীঠ যে মানুষ’র সভ্যতা গঠনের অন্যতম নিয়ামক সেই সাধারণ সুত্রটা অন্তরে প্রোথিত করে দিয়েছেন। তথাপি কস্মিনকালেও আমি ভালো সনদের ফলাফল করি নি। রাজ্জাক স্যার বিদ্যার উসিলায় আমাকে এমন প্রভাবিত করেছেন যে আমার মদিনা বা অপর মাতৃভুমি বা জন্মভূমি হয়া উঠে চকরিয়া। এই দুইজন মাস্টার আবুল কালাম আংকেল এবং আব্দুর রাজ্জাক স্যার বিশ্ববাগানে হেফাজতে সুন্দর জীবন যাপন করে-আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এবং তানার আশেক মুহাম্মদ সাঃ’র নিকট আমার এই আরজ গোজার যেন কবুল করে। আমিন।সালটা মনে নেই। ২০১৮-২০২০’র মধ্যে যেকোন একটা সময়ে আমাকে মেজর শাহেদ ভাই ফোন করেন। ফোনে উত্তর করা মাত্র বলেন, কমল তোমার আব্বুর একজন বন্ধুর সাথে কথা বলো। উনি শাহেদ ভাই মারফত জানতে পেরেছেন যে নুরুল আমিনের ছেলেপুলে আছে। তিনি খুবই আবেগী হয়া শাহেদ ভাইকে বললেন আমি বড়ছেলের সাথে কথা বলতে চাই। তার কন্ঠে হয়তো নুরুল আমিনের আওয়াজ পাবো। এতে করেই শাহেদ ভাই বুঝতে পারলেন আব্বু হয়তো উনার জানেজিগারদের একজন। ওনার নাম আমার স্মরনে যতদূর আসে সাইফুল স্যার। শাহেদ ভাই আব্বুর বন্ধুকে ফোনটা দিতেই অইপার থেকে মায়াভারী নিষ্পাপ কন্ঠে বলে উঠেন, অ ফুত তুই ক্যান আছ। আমি উত্তর করলাম ভালো। আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন। ওনার মমতাময়-আবেগঘন কন্ঠ আমাকে আব্বুর হাতে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দেবার যে সেরা-দরদ অনেকদিন পর তা পাইয়ে দিলো বলে অনুভূত হোল। আব্বুর বন্ধু সাইফুল স্যার বলছেন, আমি কক্ষনোই ভাবতে পারি নাই যে-আবার নুরুল আমিনকে পাবো। তোমার কন্ঠে। উনি বলছেন তোমার আব্বু আমার শুধু বন্ধুমাত্রই না, আমাদের পেশাও অনেকদিন এক ছিল। আমরা একই সাথে সাতকানিয়া কলেজে(আমার স্মৃতি নিশ্চিত না কোন কলেজ) পড়িয়েছি। তোমার আব্বু সম্ভবত দুইবছর বা এইরাম একটা সময় এই কলেজে অধ্যপনায় নিয়োজিত ছিলেন। সে পড়ানো শুরু করলে অন্যান্য ক্লাসের ছাত্ররাও তাঁর ক্লাস শুনতে আসতো। তুমি বাবা সময় পেলে আমার সাথে একবার দেখা কইরো। মরবার আগে তোমার গায়ে হাত রাখবার উসিলায় যেন নুরুল আমিনের স্পর্শ পাই। আমি সাইফুল স্যারের সাথে দেখা করতে চাই। যদি শাহেদ ভাই উনার নাম্বার বা ঠিকানা মনে রাখেন। শাহেদ ভাইয়ের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। অথচ, মেজর শাহেদ থেকে আমাকে বেশী আদর করতেন ওনার বড়ভাই মেজর লোকমান। লোকমান ভাই বলেন কমলকে আমি আমার নিজের ভাই থেকেও নিকটের অনুভব করি। লোকমান ভাই যেনো গিনেস রেকর্ড বুকে দুনিয়াতে সব থেকে বেশী মাস্টার্স করবার রেকর্ড অর্জন করতে পারেন-এই দুয়া রইলো। সাইফুল স্যার হোল আব্বুর শিক্ষা-সম্পর্কিত কর্মকান্ডের তথ্য পাওয়া ৩য় জন । এছাড়া নবাব আলী স্যার নামে আব্বুর একজন শিক্ষকের নাম আলতো শুনতে পাই।৪। এবাদ ভাই কহেন, দশলাখ বিশ্ববাগানের ওহী বা বহি অন্যান্য ভাষা থেকে ‘বাংলা ভাষা’য় অনুবাদ করলে বাংলা ভাষার বিকাশ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জ্ঞান কাঠামোয় ব্যাপক একটা লাফ হবে। ভাইয়া এক/পাচ/দশলাখ নারীকে পিএইচডি ডিগ্রীর সম্মানে আসীন দেখবার চান। আমি ভাইয়ের এইসব দুনিয়াবি-পরদুনিয়াবি সওয়াবী কর্মকান্ডের অন্ধ কর্মী। এবং আমি দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ। শিক্ষা, শিল্প এবং সংস্কৃতি বিশ্ববাগানে বাংলার মর্যদা রাখতে ভাইকে কুর্নিশ করি।৫। ‘ক জি টু আর্গু সাম’-রেনে দেকার্ত। শার্ল বোদলেয়ার।‘আর্ট ফর আর্ট সেইক’। ফুটবল। কান চলচিত্র উৎসব। ফ্র্যাঞ্চ রেভুলেশন। পারফিউম।টোকাটাক অনুবাদ।বদ্দারহাটে হারুন ভাইয়ের ফরাসী সারেগামা।


এছাড়া তারেক মাসুদ’র স্ত্রী ফরাসী ক্যাথরিন মাসুদ। ক্যাথরিন নকশীকাথার বড় ক্যানভাসটা বাংলার ঘরের মেয়ের লাহান শাড়ীর পাড়ে পা ঘেষে মৃদুশব্দে ডানপাশে পার হয়া ড্রইং রুমের সোফায় বসা আমার দিকে শান্ত হাসির ছায়া ঠিকরে পড়বার সময়ে তারেক ভাই ‘আমরা(আর্ট-কালচার-ইন্টেলেকচুয়ালিটি চর্চাকারী)সবাই আহমদ ছফার পকেট থেকে বেরিয়েছি’ বলছিলেন মনিপুরের বাসায়। এতবড় সংলাপও আমার কানে মিউট হয়া গেল ক্যাথরিনের ‘আমি ক্যাথরিন। তুমি তো কমল,তাই না’!-সংযমী হাসিতে আপুসুলভ সম্মোহনী গলার ঢেউয়ে। ভিনদেশীরা কিভাবে আমাদের মতন হয়া উঠে বাংলার ঘরের মেয়ে হয়া উঠে-এমন চরিত্র আমার প্রথম ক্যাথরিনকে দেখে দেখা।


তারেক ভাইয়ের মনিপুরীপাড়ার এই বাসায় এবং আশপাশে থাকা অফিসে বেশ কয়েকবার আমার যাতায়ত হয়েছে। প্রতিবারই বাংলা বলা ফরাসী ক্যাথরিনের বাঙলার ঘরের মেয়ে হবার ভাড়ংহীন চর্চা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি যদি ভুল না করি তারেক মাসুদের বাসায় যাবার কারণ ছিল ‘সংস্কৃতি ও বিদ্যা চর্চাপীঠ’র সাথে তারেক ভাইয়ের আলাপচারীতার নিমন্ত্রণ/দাওয়াত জানানো কিংবা ‘জলঘড়ি’র কোন সংখ্যা পৌছে দেয়া।এই! মার্চ, ২০০৩ঈসায়ী পর্যন্ত –এই ছিল ছোট পরিসরে ফরাসী’র বায়ো।মোকদ্দমা ইলহাম বা প্রত্যাদেশ হোল জেরেমি কডর্ন/কড্ড্রন।


এই লেখার উৎস এবং আধেয়, অনস্বার বিসর্গ জেরেমি। বাকিসব চর্বি বলবো না। যেহেতু পাতা গজিয়েছে, গোড়ালীর সংযোগ তো আছেই। পত্রপল্লবকে শেকড়ের সাথে সহজে ব্যাখ্যা করা গেলে অপর-মুক্ত হবার আগে আপনই-মুক্ত হব।


জেরেমিক লইয়া আর বিশেষ কিসু না আওড়াইলে কি হবে! জেরেমি’র স্মৃতি লিখিলেও বা কি হবে। যাই লিখি না কেন বা না-লিখি না কেন-অনুসিদ্ধান্ত গুলান’র লগে জেরেমি কিভাবে সম্পর্কিত হইবে। আদৌ যদি না হয়! তা’লে জেরেমিক ভাবতে যায়া এইসব মাথাছাড়া দিয়া উঠায় কি কোন বরকত নাই।সেটাই ভাবছি। লেখাটা ১৩০০শব্দ পার করলেও জেরেমি অকস্মাৎ উধাও হয়া কেন গেল-ভেবে কুল পাইতাসি না।


যা লিখেছি তা কি জেরেমি’র নির্যাসকে অতিক্রম করে গেছে! নাকি লেখার কোন পূর্বপরিকল্পিত সাজানো গোছানো অবয়ব ছিল না বলে এমনটা হচ্ছে। অথবা এই লেখা অযথা। অথবা শুধু ‘জেরিমি’ শিরোনামটা ‘বাংলা ভাষা, উচ্চশিক্ষা, রেনে দেকার্তের জেরিমি কড্ররন এবং আব্বুর ইনহেলার’ বানানোতে খেই হারায়া ফেললাম।পয়লা ভাবসিলাম এক এক লাইন করে কয়েকটা অনুসিদ্ধান্ত ড্র করে সেসবের বিস্তার মোকদ্দমায় করব। চাষ করতে যায়া দেখি এক এক পাটিতে মেলা ধান রোপন হয়া গেসে। অনুসিদ্ধান্তরাই মোকদ্দমা হিসাবে হাজির হইতাসে। আসলেই কি হইসে। না-“বালক ভুল করে পড়েছে ভুল বই,
পড়েনি ব্যাকরণ, পড়েনি মূল বই!
বালক জানে না তো সময় প্রতিকূল,
সাঁতার না শিখে সে সাগরে ঝাঁপ দেয়,
জলের চোরাস্রোত গোপনে বয়ে যায়,
বালক ভুল করে নেমেছে ভুল জলে!
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।

রফিক আজাদ

রোজ হাশরের দিন কি অর্থহীন লেখাঝোকার জন্য শাসানো হবে। আরে ইয়ার! এইডা তো স্মৃতিকথা। তো, কেরামুন-কাতেবিন থাকতে স্মৃতিকথায় সদকায়ে জারিয়ার রূপ পরিগ্রহণ না করলে-আক্কেল সালামি দেয়া লাগবে। মানে কি যে-আপনার যাপিত জীবনে অর্থহীন ঘটনা মনে করবার কোন ফলাফল নাই। তা’লে কি অর্থমূল্য ঘটনাই বা লেখাই শুধু সভ্যতার সরস মাপকাঠি।


আচ্ছা! যে ঘটনা ‘জেরিমি’। খুবই ছোট। এত এত ছোট যে-এত বিশাল অবয়ব তৈরি করবার পর এইডা ‘তলোয়ার হয়া ঢুকে সুই হয়া বেরোনো’ বা ‘পাছা দিয়া পাহাড় ঠেলা’র লাহান।


কাজেকাজেই যে লেখা ওজনদার নহে, লেখক সে লেখা পরিহার করেন। বস্তা বস্তা কাগজ খরচ কইরা বা পচা লেখার কোন দামই কি নাই। এইসব ব্যাঙগাছি হিতে বিপরীত তো হইবার পারে। আপনের লেখা অসভ্য সভ্যতার নিয়ামক হোলে-আপনিই তো শয়তান কিবা ভ্যাম্পায়ার। তা’লে কি এর রাষ্ট্রীয় সেন্সর বোর্ড থাকা উচিৎ। না, খোদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভালা লেখা পড়বার চর্চা বা লেখবার চর্চা না করলে এর উত্তরন সম্ভব না! তা’লে পরে কি সেই অর্থময় অক্ষর বা ওহী বা বহিঃ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০বছরে গুনাহ হইবে না পড়লে-এমন কয়ডা কিতাব বাংলা ভাষায় নাজিল হইসে, এমন কয়ডা অভিসন্দর্ব/ভ বাংলা ভাষায় নাযিল হইসে! সেইসব কি পর্যাপ্ত। আপন রাষ্ট্রের উচ্চতর বিকাশ না ভেবে সমসময়কালে গঠিত হওয়া অন্য রাষ্ট্রের লগে তুলনামুলক বিচারেও কি আমরা কামিয়াব!ব্যক্তির(আপন/নিজ) কনফেশন নয় কন্টেমপ্লেশন হোল ‘বাংলা-ভাষা’য় যা যা নাজিল হইসে তা তা সুখপাঠ্য করিলে আমি আত্মবিশ্বাসী হুরদের গান শুনিতে পারিবো আঙুরের রসের সহিত। কাজেকাজেই একটা ধাপ বাংলা ভাষা এবং তাঁর বাহকেরা আমাদের সেন্ট কইরা দিসেন। তয় আমি টেক্সট পরসি কিনা না শুধু সেন্ট কইরা ফালায়া থুইসি কিনা-সেটা আমাদের আরেকটা ধাপের নীলনকশা থেইকা ঠাহর করার কথা। গুনীরা কইতেসেন যেই বহিঃ আমাদের প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করায়া দিসে বা মুদা ঠিক কইরা দিসে সেইসব আমরা হৃদয়াংগম করবার পারি নাই। পারা-না পারার প্রশ্ন না কইরা স্কিপ কইরা মাধ্যমিক ধাপে হাতাহুতি কচলানি বা টেস্ট’র মাঠে আছি কিনা-এই প্রশ্নও সমানভাবে ক্ষয় হয়া যাবে। অর্থ দাঁড়ায় মাধ্যমিক ধাপের কিসুটা উপাদান ইশারা দিলেও সে ইশারা খেয়াল করবার হিম্মৎ আমাদের প্রাথমিক ধাপের বহি’র মতন হইসে-আমরা পাঠ করি নাই। আবারো বলি ধরেন, ভালা নাই। কিন্তু যা আছে তাও আমরা পাঠ করি নাই মানুষের জীবন রক্ষা এবং উন্নয়নের তাগিদে। এইটুকুনই।


জেরিমি।চট্টগ্রামে সেন্ট প্লাসিড স্কুলে অ্যালেক্স আলীম স্যার ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’ পরিচালনা করতেন। ইন্টারে খাস্তুগীর ইস্পাহানী বা অন্যান্যগোরে বই পড়া প্রতিযোগীতায় হারায়া হরিশংকর জলদাস এবং আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের থেকে পুরষ্কার তোলে নেবার মধ্যে আমার কোন অহং ছিল না। ‘আবুল ফজল মুক্ত বুদ্ধি চর্চা’, ‘চেরাগী পার্ক’, ‘রমা বুক হাউস’, ‘কারেন্ট বুক সেন্টার’, ‘দৈনিক আজাদী’, ‘হাফিজ রশীদ খান’র বাসা, মুসলিম লীগ-হিজবুত তাহরীর সেমিনার, দোজ বিল্ডিঙের পাঠচক্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার, ঢাকা থেকে যাওয়া বিভিন্ন কুতুবদের আলাপে সামনাসামনি হওয়া, ঢাকা টু চট্টগ্রাম-চট্টগ্রাম টু ঢাকা বইয়ের ব্যবসা যাতেকরে একটি শিশুও(বই) মিস না যায়,এছাড়া খোপে খোপে পার্কে পার্কে গড়ে উঠা চিন্তার চক্রশালা থেকে পোস্টারে পাওয়া প্রায় সব সভা এবং সংস্কৃতি ও বিদ্যা চর্চাপীঠ সহ ছোটগল্পের এই সময়টায় ইন্টারে যা হয়াও শেষ হয় না উত্তুঙ্গু ছুটেছি। এই দুই বা প্রায় তিনবছর সময়টায় ঘোড়াকে যানবাহন চিন্তা করলে নিশ্চিত এশিয়া দাপায়া বেড়াতাম।


কোন সংঘে পিপাসা মিটে নাই। তৃষ্ণায় বুক খাঁ খাঁ করছে। বন্ধুবান্ধব বা নিজেদের চৌহদ্দির বাইরে চাটগায় কাঠফাটা রোদে বুকফাটা শুকানো গলায় দুদন্ড শান্তি দিয়েছে জাতিসংঘ পার্কের উল্টোপাশে মা ও শিশু হাসপাতাল’র দু’তলায় ‘সংস্কৃতি ও বিদ্যা চর্চাপীঠ’।যেখানে সব সংঘের লোকদের এক হতে দেখতাম। সব আদর্শের। চিন্তার বা ভাবচর্চার এমন প্রাণখোলা ময়দানে রেডিকাল সব ফোর্সের লোকজন এবং ফ্রন্টলাইনের লাইক ছাত্রলীগ ছাত্রশিবির ছাত্রদল বা অন্যদের রেডিকাল গ্রুপও আসতো স্বসস্ত্র। মাগার কোন দিন কেউ টিগারে হাত রাখে নি। এইডাই বোধহয় চিন্তার-দর্শন চর্চার সম্মুহনী শক্তি। চর্চাপীঠের প্রথম দিনটায় একজনকে দেখে কার্ল মার্কসের কিছুটা প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়ে। কিছুটা চেহারার অবয়ব আরকি। আমিনুল ইসলাম নজির। আমি জানতাম যে আমিন ভাই আমিনুল ইসলাম নজির ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থট’ বা বি ই ই আইটি যেটি আই আই আইটি বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক থট’র বাংলাদেশ পার্ট’এ কর্মরত থাকাকালীন সময়ে দুখন্ডের কোরআন শরীফ ফরহাদ ভাইকে দেন। তবে, ব্রো এটার সাথে ফরহাদ মজহার’র রাসুলের আশেক হবার রহস্যময়তার কোন সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। বর্তমান ‘বাংলা ভাষা’র মইধ্যে রহস্যময় বিষয় বা চিন্তা বা ব্যাপক অর্থে কানাঘুষা হোল ফরহাদ মজহার’র ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞানের বা চর্চার গুঁড়রহস্য বা কেরামতি কি। বা ইসলাম কি তিনি আদৌ যাপিত জীবনে চর্চা করেন বা চর্চা করবার কোন কোন উপাদানসকল আছেন বলে তিনি ভাবেন। বা ফরহাদ মজহার’র ‘বাংলা-ভাষা’য় বা ‘বাংলা-ভাষা’র ফরহাদ মজহারে তিনি ক্যামনে রাসুলের আশেক হন। গোপনে গোপনে বাঙলার ভাবজগতের মাঝে এইডা এতই রহস্যময়তা তৈয়ার করবে আমার ধারণা ছিল না। যাকগে।


ফরাসী দার্শনিক রে নে দেকার্ত’র ক জি টু আর্গু সাম’ই ছিল ফরাসীর সাথে আমার পয়লা সর্বোচ্চ প্রেম। খুব সম্ভবত প্রয়াত হযরত মুঈনুদ্দিন আহমদ খান ইমাম গাজ্জালী এবং রে নে দেকার্তকে পাঠ করিয়েছিলেন। মুইনুদ্দিন স্যার এবং ডঃ জামাল নজরুল ইসলামকে চর্চাপীঠেই আমি আবিষ্কার করি।কর্ড্রন। ফরাসী।


লিঙ্গুয়েস্টিক পড়াতেন ফ্রান্সের বা …একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াতেন সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ।


সাবকন্টিনেন্ট বিশেষত ভারত, পাকিস্থান এবং বাংলাদেশের পলিটিক্যাল ইসলাম হোল ওনার ফিলোসফি অফ ডক্টরেট বা পি এইচ ডি’র বিষয়। তাঁরই একটা অংশ হিসাবে উনার বাংলাদেশে আগমন। আমিন ভাই জেরিমির লগে আমাকে পরিচয় করায়া দেন। জেরিমি তাঁর গবেষনা কর্মে সহায়তা চাইলে যেন আমি করি। জেরিমি সহায়তা চাইলে দ্বিগুণ উৎসাহে আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি তাঁর গবেষণার বা পিএইচডির ধার নেন নষ্ট না হয়। গবেষনার অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে গবেষণা পত্র তুলে দেয়া, বিভিন্ন ডকুমেন্টস-প্রপস সংগ্রহ করা, অনুবাদ করিয়ে দেয়া, নোট নিতে সহায়তা করা এবং বিভিন্নজনের সাথে দীর্ঘ আলাপ রেকর্ড বা লিপিবদ্ধ করা ইত্যাদি মনে পড়ছে। আমি তখন ইন্টার পার করেছি বা ইন্টারে। আচ্ছা! গবেষণায় সহায়তাকারী বা পিএইচডিতে সহায়তাকারীদের কি ফর্মালি কিছু বলে? কি বলে! এইডা প্রফেশনাল বিষয়-আশয় আকারে কি বিরাজমান! আমি জানি না। জেরিমি অনেক লম্বা চওড়া। বিনয়, রাগ বা সুক্ষতম অনুভুতি গুলানের কোনটাই তাঁর বেশীকম নাই। যেমন তাঁর বিনয় বেশী না কম বুঝা যায় না। কিন্তু বিনয় ভাবটা আছে। তাঁর সব ধরনের এক্সপ্রেশন এমনি লাগতো আমার কাছে। সাধারণ বাসে চলাফেরা করেছি আমরা। একদম পেছনের সিট হোলেও সে বসবে। ঝুলে যাবে না। জেরিমি’র সাথে আমার কোন আর্থিক কমিটমেন্ট ছিল কিনা ভুলে গেছি। তবে এটা স্পষ্ট থাকলেও আমি নেই নি। তবে আমার সময়দানের শর্ত বা বিনিময় হিসাবে পয়লাতেই আমি জেরিমি’র কাছে এমন কিছু চাইসিলাম এবং সেটা সে পূরণ করেছে দেখে আমি অভিভুত। সেটা হোল জেরিমিকে বলেছি তোমার সাথে কাজের বা সময় যাপনের একটাই শর্ত-আমাদের যোগাযোগ অবশ্যই বাংলা ভাষায় হতে হবে। আমি প্রথম দুইদিন পর ধারাবাহিকভাবে বাংলায় আলাপ চালিয়েছি। আর জেরিমি সপ্তাহ-দেড়েক আধো আধো বাংলা বলেছে। যা থেকে অর্থ উৎপাদন করা যায়। মাগার, স্পতাহ-দেড়েক পর জেরিমি আলাপসালাপ পুরোটাই বাংলা ভাষায় চালায়া নিসে আমার সাথে শেষ দিন পর্যন্ত। একটা পর্যায়ে আমার অন্যকিছুতে সময় দেয়া বেড়ে যায় এবং তারও পিএইচডির রসদ ভারী হয়া পড়ে। অকস্মাৎ আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়া যায়। এখনো জানি না তাঁর পিএইচডি শেষ হয়েছে কিনা বা বাংলাদেশে রয়েছে কিনা।আমাদের লম্বা ভ্রমণ বলতে কক্সবাজার এবং খুব সম্ভবত মহেশখালীও। বাজারঘাট রাখাইন পাড়ার পয়লা গলিটার মাঝামাঝি নিচতলায় সুমন এবং তার মাসীপিসিদের বাসা। ঐভবনের পাশের ভবনটা একটা হোটেল এবং বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস। যার পেছনের পাশটায় ঠিক নিচতলায় সুমনদের পাশে আব্বুর জন্যে হোটেলে না থেকে বাসার পরিবেশে থাকবার জন্যে একটা বাসা করে দেন। ঐবাসার উলটো পাশে ডিসেন্ট টেইলার্সের মালিকের কাঠের একটা সুন্দর দু’তলা বিল্ডিং। বাইরে থেকে সুন্দর দেখতে। তার পাশে একটা একতলা কাঠের ঘর আমাদের কাছে এটার নিশির বাসা নামে পরিচিত।নিশির নানা ছিল আব্বুর বাইতুশ শরফে নামাজে যাবার সংগী। আব্বু শেষ ৫/৬বছর সালাত/মেরাজে নিমগ্ন ছিলেন। ওয়াক্ত এবং ওয়াক্ত ছাড়াও। নিশিদের পরের বাড়িগুলান রাখাইনদের। এই বাসায় বেশ কিছুদিন থাকা হয়েছে। এখানে থেকে আমার ভাইবোনেরা উ কোশ্যিল্লা বিদ্যাবিহারে অধ্যয়ন করেছেন। আর আমার তখন হোস্টেল জীবন। কক্সবাজারে জেরিমিকে এই বাসাতেই নিয়ে আসছিলাম আব্বুর সাথে দেখা করবার জন্যে। আব্বু এবং জেরিমি অনেক কথা বলেছেন আমাকে সহ এবং আমাকে ছাড়াও। আমাদের সাথে আমিন ভাই ছিলেন কিনা মনে করতে পারছি না। আব্বু এই ভেবে খুশী ছিলেন যে আমি ইন্টারে থাকতেই এইরকম একটা সিরিয়াস বিষয়ে যুক্ত হয়েছি। আব্বুর সাথে আলাপ ইংরেজীতেই করিয়েছে আব্বু।জেরিমি আর আব্বুর আলাপে কে কতটা সন্তুষ্ট জানতে পারি নি। আব্বুর খুশী হবার আরো একটা ছোট কারণ থাকতে পারে যে ভিনদেশী তাও আবার মাস্টার। তার মানে পোলা ঠিক লাইনে আছে। পোলারে বৃটেনে বারেট ল পড়ানোর আশা পূরণ হবে। অথচ আমি ঠিক তার উলটো ছিলাম। ইন্টারের পরে আমি আর পড়ালেখাই করবো না। বিদেশে যামু না টাহা খরচ কইরা। বরং উলটো বিদেশীদের বাংলাদেশে আমার ইন্টারভিউ করাতে আনমু বা আমাকে নিয়ে অরা কাজ করতে আসবে। আমি গ্রামে থাকমু। আমার যেকোন একটা যোগ্যতা এমন উচ্চতায় পৌছামু যেকারণে ভিনদেশীরা আসতে বাধ্য হয় শাপলাপুরে। ছোট থেকেই ভিনদেশীদের প্রতি আমার একটা চাপা ক্রোধ ছিল শোসিত হবার কারনে। আমি কৃষক হব ভাবসিলাম আর চান্স পাইলে রাজনীতি করবো। যেইসবের নামগন্ধ আব্বু পাইলে হয়তো তখনি সতর্ক হোত। যেটা ইন্টারের পরে ২৩বা ১৭পৃষ্টার চিঠিতে টের পেয়েছিলেন। আব্বু বুঝেছেন আমি গেসি। বিদেশ বিষয়ক চাপ কমিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অপশন দিলেন। হয় বিদেশ নয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।১৯৯৫সাল থেকে অল্প ১৯৯৭ সাল থেকে আব্বু বেশী পরিমানে অসুস্থ হওয়া আরম্ভ করলেন। ২০০৩-২০০৪বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম্বার না থাকা আব্বুকে খুবই পীড়িত করেছে।


আব্বু জানতেন আমি ভালো ছাত্র না। তারপরেও হয়তোবা ওনার দুয়ার বলে একটা ভরসা করতেন। বাইরের খোজখবর নিতে বলছেন, টাকা পয়সার খোঁজখবর নিতে বলছেন। এবং দেখি নিজেও আমাকে বাইরে পাঠাবার জন্যে বিভিন্ন জনের শরণাপন্ন হচ্ছেন তথ্যউপাত্ত নিতে। আব্বুর দীর্ঘ অসুস্থতা এবং সেসময়ে উপার্জনের সকল চাকা বন্ধ হবার যে চাপ সেটা মাত্র কাটিয়ে উঠছেন এমন সময়ে ভাবছেন ঢা বি’তে না হোলে নো অপশন ডিরেক্ট বাইরে। আল্লাহ্‌র দয়া করুণাতে ২০০৪-২০০৫শিক্ষা বর্ষে নাম্বার আসলো। আব্বু বিষয়ের কারনে কত খুশী হয়েছিলেন জানি না। কিন্তু খুশী হবার কথা। ফার্স্ট ইয়ারে আব্বু ডাক যোগে টাকা পাঠাতেন এবং অল্পজায়গা থাকা ডাকে ছোট একটা বার্তা পাঠাতেন যা আমাকে সবসময় ঘুম থেকে জাগাতো। এই বছরই সেপ্টেম্বরের শুরুতে আব্বু ডাকযোগে টাকা পাঠালেন এবং আব্বুর জন্যে একটা ইনহেলার পাঠাতে বললেন। আমি ভাবসিলাম এইসব আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবার বা আমাকে কাছে পাবার আদর করবার একটা বায়না। আব্বুকে ইনহেলার পাঠাই নি। এরপর আবার যখন শুধু যাবার জন্যে খবর পাঠালেন-তারপরেও আমি যাই নি। ঐমাসটায় কুষ্টিয়া ঢাকা এইরকম যাওয়া আসার মধ্য ছিলাম বোধহয়। ১৫/১৬সেপ্টেম্বর মন কাচুমাচু করছে। তারপরেও আব্বুর ইনহেলার এবং বাড়ি যেতে বলা আমার কাছে আদর করবার বায়না’ই মনে হচ্ছিল। ১৬ বা কত সেপ্টেম্বর জহুরুল হক হোল থেকে আমি কক্সবাজার যাই। ২৩সেপ্টেম্বর আব্বুকে শাপলাপুরে আব্বুর বাবার পাশে মনে হচ্ছিল যেন জিন্দা শুইয়ে দিয়ে আসছি। আব্বু আমাকে ডাকছেন। আমি আছি। আমাকে ইনহেলার দে। অনেকবার যেয়ে কবর খুড়বার চেষ্টা করেছি কিন্তু কারো উৎসাহ পাই নি। সবাই বলছেন উনি নাই। ডাক্তার কনফার্ম করেছে। ফার্মেসীর ডাক্তার। আব্বুকে অনেক মানুষ দেখতে এসেছেন। বেঁচে থাকলে কেউ না কেউ বুঝতে পারতেন। এরপর নিজেকে খেমা দিলাম। আব্বুকে বললাম তুমি তোমার প্রিয় মধ্যবর্তী জান্নাতে যাও। আমাকে মাফ কইরো।


এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার আরো বড় এনিমি হয়া উঠলো। যার বিনিময়ে আব্বুকে হারালাম। আমার মনে হোত আব্বু তার নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়া গেলেন। না’লে পরে আমিও টিকলাম ফার্স্ট ইয়ারেই আব্বু প্রয়াত হলেন। আল্লাহ্‌ ওনাকে জান্নাত নসীব করুক।আদিনাথ এবং কক্সবাজারের কারনে ভিনদেশী আমাদের কাছে জ্বীনভুত নয়। তবে এইভাবে তাদের সাথে কাজ করা যায়, যেটা ভাবনার মধ্যে ছিল না। বিশেষ করে বাংলা ভাষা তাকে শিখতে বাধ্য করা। ইন্টারের একটা ছেলে যার নাক টিপলে দুধ বেরোবে না যে তার ক্রোধের বিস্ফোরণ এইভাবে ঘটাবে, নিজের ভাষাকে এইভাবে জিতাবে এখন ভাবতে অবাক লাগে। ভাষা’র প্রতি কি এটা অন্ধতা ছিল না প্রেম ছিল না অবসেশন ছিল না রিভেঞ্জ ছিল এইসময়ে আইসা সেই বিন্দুটা এনালাইসিস করবার চেষ্টা করছি যেসময়ে অনেক ভিনদেশী মিড়িয়ার সাথে ফিক্সার হিসাবে কাজ করবার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এরমধ্যেও দুয়েকজনকে ‘বাংলা-ভাষা’ শিখতে বাধ্য বা প্রভোক ঠিক বলবো না বলব উৎসাহিত করেছি। বা বলব অন্য ভাষার লগে প্রেম করতে শিখিয়েছি। বা বলব ‘বাংলা-ভাষা’ও এমন ভাব বহন করে যা তোমরা চাইলে নিতে পারো সম্মানিত হবা। আরেকটা জেনারেলাইজ করে বলবো তোমার দেশে যেয়ে আমার তো তোমার ভাষাকে নিতে হয়, তয় এইখানটাই এটা তোমরাও করতে কি অসুবিধা। তবে আসল বিষয় হোল আপনার উচ্চশিক্ষা না থাকলে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ তৈয়ার না করলে সবাই তাদের দেশ থেকে উঠবার সময় থেকে আবার তাদের দেশে পৌছানো পর্যন্তও যদি বাঙলা বলেন তাতেকরে গুনগত তেমন একটা ফায়দা নাই, পরিমাণগত থাকতে পারে। জ্ঞানের উন্মেষ ঘটতে পারে কিন্তু প্রজ্ঞার উদয় হবে না।
আপনি যখন নিজের ছায়ার বিপরীতে দাড়ান তখন নিজেই তো নিজের প্রতিপক্ষ হয়া যান। নাকি! আমি,যাই। আমি আমাদের বাঙলা ভাষার কথা বলছি আমি আমাদের উচ্চশিক্ষার কথা বলছি আমি আমাদের জেরেমিদের কথা বলছি যারা বাঙলা শিখেছে আমি আমাদের পিতার ইনহেলার বনাম পোলার উচ্চশিক্ষার কথা বলছি।


মাগার ব্যক্তি(আমি) ক্লাস ফোর থেকে উম্মিহ হতে চাইতেন।
এখনো উম্মিই বা নিরক্ষর হতে চান।

যাকে অক্ষর খাবে না
দমটাই অক্ষর।
জয় বড়বাংলা

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *