বিষণ্ণতা কাটানোর উপায়

মন খারাপ। কোনো কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন না। কিন্তু জমে আছে কাজের পাহাড়। কী ভাবে চটজলদি মন ভাল করবেন? বেরিয়ে আসবেন বিষণ্ণতা থেকে? ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগে আবেগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ও যুক্তি দিয়ে নিজের মানসিক অবস্থাকে মূল্যায়ন করতে পারাটাই সবচেয়ে শ্রেয়। চিকিৎসকের শরণাপন্ন তখনই হওয়া ভাল যখন নিজের নিয়ন্ত্রণটা আর নিজের আয়ত্ত্বে থাকে না। অর্থাৎ, বারবার চেষ্টা করেও আপনি ব্যর্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জেনে নিন, বিষণ্ণতা কাটানোর উপায়।

. একটু সময় নিয়ে নিজের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজেকে জানুন। কোন বিষয়গুলো আপনাকে বিষণ্ণতায় তলিয়ে দিচ্ছে, তা ভাবুন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকুন, সুষম ডায়েট অনুসরণ করুন, এগুলো বিষণ্ণতা প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়।

. একটি ভালো জিমে ভর্তি হয়ে যান কিংবা বাড়িতে ও পার্কে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। একজন সুদক্ষ ব্যায়াম প্রশিক্ষকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিন। নিজের ইচ্ছামতো ব্যায়াম না করাই ভালো। প্রয়োজনে দেশী-বিদেশী লেখকদের ব্যায়ামের কিছু বই নিয়মিত পড়ুন। সঠিক নিয়মগুলো জেনে নিন। যোগব্যায়াম, খালি হাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এগুলো বিষণ্ণতা কাটানোর কার্যকর উপায়।

. নিজের ইচ্ছামতো ডায়েট মেনে চলেন। আর, খাওয়া-দাওয়া অনেকটা কমিয়ে নানা রোগ বাধিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু, এটা কখনও হয়তো ভাবেন না যে, কম বা বেশি নয় বরং পরিমিত মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তাই প্রথমে একটি সুষম ডায়েট চার্ট করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যায়াম করলে ডায়েটে কি পরিবর্তন আনতে হবে, তা জানতে একজন দক্ষ ব্যায়াম প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

. প্রাপ্তবয়স্ক হলে, ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুম নয়। আবার কমও নয়। এটা মাথায় রাখুন। ভালো ঘুম বা সুনিদ্রার বিকল্প নেই। তাই ঘুম নিয়ে পত্র-পত্রিকা, বই ও ইন্টারনেটে লেখা বিভিন্ন তথ্য অনুসরণ করুন।

. আশপাশে বড় বা ভালো কোন পার্ক থাকলে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেখানে চলে যান। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট এভাবে সময় ব্যয় করুন। নিজের বাগান থাকলে সেখানে সময় কাটান। সম্ভব হলে, ২ সপ্তাহে একবার শহর থেকে দূরে কোন গ্রামে ঘুরে আসুন। এতে একঘেঁয়েমিও কাটবে।

. নিজের চিন্তাধারাকে আরও বেশি সৃজনশীল করে তুলুন। প্রত্যেকেরই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কিছু অসাধারণ গুণাবলী রয়েছে। নিজের মধ্যে সেগুলো আবিষ্কার করুন ও কাজে লাগান। নিজের হাতে কিছু করুন। ছবি তোলা বা ভিডিও করা, ছবি আঁকা, ছড়া-কবিতা, গল্প বা ডায়েরি লেখা ইত্যাদির মধ্যে নিজেকে দিনের কিছুটা সময় ব্যস্ত রাখুন।

. লাইব্রেরি বা পাঠাগারে গিয়ে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। খবরের কাগজ বা বই এখন ইন্টারনেটেই পড়া যায়। তা সত্ত্বেও কাগজের পাতা উল্টে বই পড়ার আনন্দ পেতে কিছু বই সংগ্রহ করা মন্দ নয়। ধর্মীয় বই পড়লেও মনে প্রশান্তি আসবে।

. অন্য মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষের উপকার করুন। দুঃস্থ, অসহায় কোন মানুষের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান ও তাকে সাহায্য করুন। তার অবস্থা মন থেকে বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন প্রশান্তিতে মন ভরে উঠেছে। নিজেকে খুব হালকা লাগবে। বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির জন্য শুধু নয়। এ চর্চাটা সারা জীবন করুন। জীবন আরও সুখময় হয়ে উঠবে।

. খুব কাছের কয়েকজনের সঙ্গে নিঃসঙ্কোচে নিজের সমস্যার কথাগুলো মন খুলে বলুন। সমস্যাগুলো থেকে সমাধানের উপায় খুঁজতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করুন। এতে একদিকে যেমন সমাধান বের হয়ে আসবে, অন্যদিকে আপনিও অনেক বেশি হালকা অনুভব করবেন।

১০. একাকীত্বকে আপন করে নিয়ে নিঃসঙ্গ থাকা বোকাদের কাজ। তাই দুঃসময়ে বন্ধুদের পাশে রাখুন। আমরা সামাজিক জীব। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়ের একটি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যান। তারা আপনার বাড়িতে এলে সময় দিন। এছাড়াও একসঙ্গে কোথাও ঘুরতে যান। বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পাবেন।

১১. হয়তো হাসার মতো পরিস্থিতি নেই, তবু চেষ্টা করুন হাসার। হাসি কখনো চাপ কমাতে সাহায্য করে, মেজাজ ভাল রাখে, বিষণ্ণতাকেও দূরে রাখে।

১২. নতুন কিছু করুন। নেতিবাচক ভাবনা থেকে বেরিয়ে যান। রান্নার ক্লাসে ভর্তি হতে পারেন। আগামীকাল সকালে উঠে নতুন কী করবেন তাঁর পরিকল্পনা করুন।

১৩কিছুক্ষণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিছিন্ন হয়ে যান। বন্ধ করে দিন ফোন। কিছুটা সময় শুধুমাত্র নিজেকে দিন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *