চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল ভারতের চন্দ্রযান-৩ 

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করে ইতিহাস গড়ল।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বিশ্বের আর কোনো দেশ পৌঁছতে পারেনি। ভারত সেখানেই পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করল। 

চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে চূড়ান্ত পর্যায়ের অবতরণ প্রক্রিয়ায় ১৯ মিনিট সময় লেগেছে। ভারতের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা ৬টা চার মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর মাটি স্পর্শ করে ল্যান্ডার বিক্রম। 

চাঁদের মাটিতে বিক্রম নামার পর ইসরো টুইট করেছে। টুইটে লেখা হয়েছে, ‘ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছি।’

চাঁদে সফলভাবে মহাকাশযান অবতরণ করানো দেশের তালিকায় চতুর্থ হিসেবে নাম লেখাল ভারত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই মহান কৃতিত্বের অধিকারী ছিল। 

ইসরোর ওয়েবসাইটসহ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবের পেজে ৫টা ২০ মিনিট থেকে চাঁদে নামার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কোটি কোটি ভারতীয়সহ বিশ্বের লাখো কোটি মানুষ উপভোগ করে এ মুহূর্তটি। এ সময় ভারতের স্কুলগুলোও খোলা রাখা হয়। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন থেকেই চন্দ্রযান-৩ এর চাঁদে নামার দৃশ্যটি উপভোগ করেন। 

অবতরণের পর টিম চন্দ্রযানকে শুভেচ্ছা জানান মোদি। তিনি বলেন, তারা এ মুহূর্তটির জন্য বছরের পর বছর ধরে পরিশ্রম করেছেন। ১৪০ কোটি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা। ভারতের উদীয়মান ভাগ্যের আহ্বান এ মুহূর্তে। অমৃতকালের আহ্বান। মহাকাশে নতুন ভারতের উদয়। আমি এখন দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশবাসীর সঙ্গে আমার মনও সেখানেই ছিল।

চন্দ্রযান-৩ যেখানে নেমেছে, চাঁদের ওই অঞ্চলে বরফপানি অথবা জমাটবাঁধা বরফ রয়েছে। এতে স্থানটি পানির পাশাপাশি হতে পারে অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস, যা ভবিষ্যতে আরও চন্দ্রাভিযান অথবা স্থায়ীভাবে চাঁদে বসতি গড়তে সহায়ক হতে পারে।

চন্দ্রযান-৩–এর সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায় ভারত নিজেদের নাম লেখাল, যারা প্রথমবারের মতো চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

প্রায় একই সময়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য লুনা-২৫ নামের মহাকাশযান পাঠিয়েছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়ার মহাকাশযানটি গত শনিবার চাঁদে বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে ৪৭ বছরের মধ্যে রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়।

২০১৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু অভিযানটি ব্যর্থ হয়।

গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।

চাঁদে অবতরণের পর বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান তাদের কাজ সম্পাদন করতে সৌরশক্তি ব্যবহার করবে। তাই চন্দ্রযান যদি এমন সময়ে অবতরণ করে যখন চাঁদ অন্ধকারে ডুবে থাকবে, তা হলে এটি কাজ করবে না।

ফলে সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই ল্যান্ডার এবং রোভারটি চাঁদের বুকে নামাতে চেয়েছে ইসরো। চাঁদের এক মাস হয় পৃথিবীর হিসাবে ২৮ দিনে। এক চন্দ্রমাসে টানা ১৪ দিন রাত আর ১৪ দিন দিন থাকে।

ইসরোর হিসাব অনুযায়ী, ২২ আগস্ট চাঁদে রাত শেষ হয়ে ২৩ আগস্ট থেকে টানা ১৪ দিন দক্ষিণ মেরুতে দিন থাকবে। ফলে সৌরশক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালাবে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। পাশাপাশি, ভবিষ্যতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে তারা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *