ভারতে পাঠ্যবই থেকে মুছে গেল মুঘল ইতিহাস

:: নাগরিক প্রতিবেদক ::

ভারতের দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস অধ্যায়টি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে আরও কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

কেন্দ্রীয় সংস্থা জাতীয় শিক্ষা গবেষণা ও শিক্ষণ কাউন্সিল বা এনসিইআরটি সারা দেশের স্কুলগুলির জন্য পাঠ্যবই প্রকাশ করে। এ বছরের জন্য তারা দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য যে বইটি প্রকাশ করেছে, সেই ‘থিমস অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’ তিনটি ভাগে ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয় ভাগের নবম অধ্যায়তেই ছিল রাজা এবং ইতিহাস, মুঘল দরবার অংশটি।

এনসিইআরটির ওয়েবসাইটে নতুন ইতিহাস বইটি ডাউনলোড করার জন্য যে লিঙ্ক আছে, সেখানে মুঘল শাসকদের নিয়ে ২৮ পাতার যে অধ্যায়টি ছিল, তা এখন আর নেই।

ইতিহাস ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বই থেকেও বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে লেখা ছিল। গান্ধীর হত্যার পরে আরএসএসকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল, সেই অংশটিও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

আবার একাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞানের বই থেকে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার প্রসঙ্গে দুটি অধ্যায়ও বাদ দেওয়া হয়েছে। এনসিইআরটির ইতিহাস বইয়ে পরিবর্তনের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রায় আড়াইশ নামকরা ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদ।

মুসলমান শাসকদের ইতিহাস পাঠ্যক্রম থেকে সরিয়ে দেয়ার এই প্রচেষ্টাকে ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘলদের মুছে ফেলার চেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে এনসিইআরটি যুক্তি দিয়েছে যে ছাত্রছাত্রীদের ওপর থেকে ‘পাঠ্যক্রমের বোঝা কম’ করতেই এই অধ্যায়টি সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বইটিতে এখনও কিছু অধ্যায়ের মধ্যে মুঘলদের উল্লেখ রয়েছে।

পঞ্চম অধ্যায়তে যেমন দশম থেকে সপ্তদশ শতকের ভারতের কথা বলা হয়েছে, আর ষষ্ঠ অধ্যায়তে ভক্তি এবং সুফি পরম্পরা আলোচনা করার সময়েও মুঘল আমলের প্রসঙ্গ আছে। অষ্টম অধ্যায়তে কৃষক, জমিদার ও মুঘল সাম্রাজ্য নিয়ে লেখা হয়েছে।

মুঘলদের প্রতি বিজেপির বিদ্বেষ নতুন নয়। মুসলিম এই শাসকদের বিরুদ্ধে নানা সময় সমালোচনামূলক বক্তব্যও দিয়েছেন দলটির নেতারা। এমনকি তারা উদ্যোগ নিয়ে পাঠ্যবই থেকে মুঘলদের ইতিহাস বাদ দিয়েছেন।

বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলি এনসিইআরটির পাঠ্য বইতে এসব পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে, আবার উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি বলছে তারা নতুন বই পড়াবে।

এনসিইআরটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান জেএস রাজপুত বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

তিনি বলছিলেন, এনসিইআরটি একটা বড় প্রতিষ্ঠান। সেখানে বিশেষজ্ঞরা আছেন। তারা যখন কোনও পরিবর্তন করেন, সেগুলো অ্যাকাডেমিকই হয়। ইতিহাসের বইতে যদি কোথাও কেউ নিজস্ব ভাবনা আর তত্ত্ব যোগ করে থাকেন, সেগুলো সরিয়ে দেওয়াই উচিত। কিন্তু মুঘল আমলের ইতিহাস পুরোপুরি সরিয়ে দেয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমারও এটা মনে হতো যে মুঘল আমলের ইতিহাস খুব বেশি করে পড়ানো হচ্ছে। যেন শুধু মুঘল আমলেই ভারতবর্ষের অস্তিত্ব ছিল! আবার ইতিহাসের কোনও একটা সময়ের কিছু অংশ বাদ দিয়ে পড়ানোটাও অনুচিত।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *