ভিকারুননিসার ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল 

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। ভর্তি বাতিল হওয়া সবাই ২০২৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। হাইকোর্টের এক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক রিট আবেদনের ধারাবাহিকতায় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার চিঠিটি তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে হলফনামা আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ৬ মার্চ আদালতে প্রতিবেদন (কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি ওই রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত বয়সসীমা অনুসরণ না করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণদের ফলাফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন (মোছা. পারভিন আকতার) ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

১১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন আবেদন নিষ্পত্তি বিষয়ে হলফনামা আকারে দাখিল করার জন্য সময়ের আরজি জানানো হলে আদালত ২০ ফেব্রুয়ারি দিন রাখেন। ধার্য তারিখে মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর সই করা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাসের অধ্যক্ষ বরাবরে ১১ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি নিয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট ওই অফিস আদেশ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।।    

আদালতে হাজির হন মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শামীম সরদার। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান মাউশির মহাপরিচালকের সিদ্ধান্ত সংবলিত চিঠি তুলে ধরে শুনানি করেন। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।

রিট আবেদনকারীর মাউশিতে করা আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে উল্লেখ করে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে মাউশির সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ২০১৭ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য। ওই বয়সসীমার বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা শিক্ষার্থীর তথ্য এসেছে। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সবগুলো শাখা মিলিয়ে ২০১৫ সালে জন্মতারিখ এমন ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্ম এমন ১৫৯ জন এবং ২০১৮ সালে জন্মতারিখ এমন ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।  

কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালার সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে বলা হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬+ বছর হতে হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা নির্ধারণে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ বেঁধে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিম্নসীমা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি, যা মাউশি এক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী পাঁচজন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য ছিল। কিন্তু ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অযোগ্য।    

মাউশি বলেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে আবার তা অনুসরণ না করে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি আগে জন্মগ্রহণকারী (প্রতিষ্ঠানের পাঠানো সংযুক্ত তালিকা)  শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোও ছিল বিধিবহির্ভূত। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূত (২০১৭ সালের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী) ভর্তি করা [প্রতিষ্ঠানের পাঠানো সংযুক্ত তালিকায় উল্লেখিত ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন] শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হলো।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী শামীম সরদার শুনানিতে বলেন, মাউশির সিদ্ধান্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে আদালতে হলফনামা দাখিল করতে হবে। এতগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি হলো, কাদের দোষে হলো?

একপর্যায়ে আদালত বলেন, বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে, তা জানিয়েছেন? তখন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম বলেন, জানানো হয়েছে। মাউশির চিঠিতেও এসেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ভিকারুননিসা) কর্তৃক ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার আলোকে সফটওয়্যারে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা না থাকার কারণে বয়সের আলাদা ফিল্টারিংয়ের সুযোগ ছিল না।    

আদালত বলেন, এখন যা হয়েছে, তা অনুসরণ করেন। তখন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম বলেন, অফিস আদেশ দিয়েছে, তা অনুসরণ করতে বাধ্য।  

এরপর মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-২) এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর কাছে ১১ ফেব্রুয়ারি চিঠির বিষয়ে জানতে চান আদালত। এ সময় জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘আমার অজ্ঞতার জন্য সরি। আগে অভিজ্ঞতা ছিল না।’ আদালত বলেন, ‘অজ্ঞতা থাকলে আপনি কি চেয়ারের যোগ্য?’ জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে আর হবে না।’ আদালত বলেন, ‘আপনার একটি চিঠি যদি যায়, তা অবশ্যই পালনীয়। আপনি যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারেন।’ তখন জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘ক্ষমা চাচ্ছি। দুই ঘণ্টা সময় পেয়েছি, বুঝতে পারিনি।’ শুনানির পর আদালত তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই আদেশ দেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *