ভূমিকম্পে নিখোঁজ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জীবিত উদ্ধার

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর নিখোঁজ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী গোলাম সাঈদ রিংকুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। হাসপাতালে তাকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে জীবিত উদ্ধার করা হয় আরেক নিখোঁজ শিক্ষার্থী নূরে আলমকে। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহলী সাবরিন।

তিনি জানান, তুরস্কের আজাজ শহরের একটি ভবনে আটকে পড়ার প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পর বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে রিংকুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী সিরিয়ায় স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশ দুটিতে এরইমধ্যে নিহতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে নিখোঁজ রয়েছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে রিংকু ও নূরে আলমও ছিলেন।

এর আগে ইস্তাম্বুলে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নূরে আলম জানান, রিংকু যে ভবনে থাকতেন সেই ভবনেই আটকা পড়েন। ওই ভবন থেকে উদ্ধার হওয়া স্থানীয় এক শিক্ষার্থী তাদের জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি (উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থী) রিংকুর গলার আওয়াজ পেয়েছেন। ভূমিকম্পে আটকে পড়ার পর তারা কেউ কাউকে দেখতে না পেলেও একে অপরের কথা শুনতে পারছিলেন। তারা কিছু কথাও বলেছেন। কিন্তু সকাল ৯টার পর থেকে তিনি ডেকেও রিংকুর আর কোনো সাড়া পাননি। 

‘তোমাদের হাত-পা ধরছি। তোমরা আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। আমি কোন পয়সা-কড়ি চাই না। খালি আমার ছেলেটাকে চাই। তাকে তোমরা এনে দাও…।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রিংকুর বাবা কৃষক গোলাম রব্বানী। কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে তার। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ফের ডুকরে ওঠেন তিনি। 

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের দেওনাই গ্রামের রিংকুদের বাড়িতে মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ বাড়িতে ঢুকলেই কান্না করছেন তার বাবা। তবে রিংকুর মা সালমা আক্তার কোন কথাই বলছেন না। তার দুচোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে। সোমবার রাত থেকে তিনি খাওয়া-দাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন।

রিংকু কৃষক বাবার ৩ ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবার বড়। প্রায় ৮ বছর আগে ২০১৫ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য তুরস্কে পাড়ি জমান। তিনি সেখানকার কারামানমারাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিষয়ে মাস্টার্স করছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সেখানে খণ্ডকালীন চাকরিও করতেন। 

ছোট ভাই রিফাত হাসান জানান, রিংকু ২০১১ সালে গ্রামের একটি একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৩ সালে বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। 

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৮ সালে রিংকু দেশে এসেছিলেন। তুরস্কে ফিরে যাওয়ার পর সময়ই পেলেই ভাইয়া আব্বা-আম্মার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতেন। সর্বশেষ গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতেও ভাইয়া আম্মার সঙ্গে কথা বলেন।’

রিংকুর চাচা হাসান বিন জলিল তরুণ জানান, সোমবার রাতে টেলিভিশনের খবরে তুরস্কে ভূমিকম্পে বাংলাদেশি দুই শিক্ষার্থীর নিখোঁজ হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই রিংকুর মা-বাবা দুশ্চিন্তায় পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তারা তুরস্কে রিংকুর সঙ্গে থাকা নূরে আলম নামে এক যুবকের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। নূর জানান, ভূমিকম্পের তিনি ঘর থেকে বের হতে পারলেও রিংকু পারেনি। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *