ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা, নিহত ২৪

:: ভৈরব প্রতিনিধি ::

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যাত্রীবাহী ট্রেনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ট্রেনের বগির নিচ থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫০ জন। 

সোমবার বেলা পৌনে ৪টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেন দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদিকুর রহমান সন্ধ্যায় বলেন, আহত অনেকে ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বেলা পৌনে ৪টায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে। উদ্ধারকারী দুটি ট্রেন একটি আখাউড়া ও একটি ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এগারসিন্দুর ট্রেনকে কন্টেইনারবাহী ট্রেন এসে হিট করেছে। পার্শ্ব সংঘর্ষ বা সাইড কোলিশন হয়েছে। ডিজরিগার্ড অব সিগন্যালে (সিগন্যাল অমান্য) ছিল মালবাহী ট্রেনটি।’ 

রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ইউসুফ মিয়া জানান, দুপুর সাড়ে বারোটায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এগারসিন্ধু গোধূলী ট্রেনটি। ভৈরব স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সময় জগন্নাথপুর এলাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কন্টেইনার (মালবাহী ট্রেন) সিগন্যাল অমান্য করে এগারসিন্ধুর ট্রেনের পেছনের ৩টি বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বগি ৩টি তছনছ হয়ে যায়। মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, একটি মালবাহী ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল, আর আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকায়। পরে ভৈরব রেল স্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের কয়েকটি বগি উল্টে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, উল্টে যাওয়া বগির নিচে অনেক যাত্রী চাপা পড়েছে। এ ছাড়া রেললাইনের ওপর অনেকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। এ ছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্য, রেলওয়ে ও জেলা পুলিশের সদস্যরাও উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) শাহজাহান সিকদার বলেন, এই দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রাজন বলেন, আমাদের কাছে ২০টি মরদেহ রয়েছে এবং ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও চারজনের মরদেহ রয়েছে। তবে এদের কারো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় ব্যাঘাত ঘটছে। আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।

দুর্ঘটনার কারণ এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে সিগন্যালিংয়ের কোনো জটিলতার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দুর্ঘটনায় তিন‌টি ব‌গি উল্টে যাওয়ায় সেগু‌লো ক্রেন ছাড়া সরা‌নো সম্ভব হ‌চ্ছে না। ইতোমধ্যে ঢাকা ও আখাউড়া থে‌কে ক্রেন রওনা দি‌য়ে‌ছে বলে জানা গেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *