:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১০৩৭ জন নিহত এবং ১২০৪ জন আহত হয়েছেন। মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার রাত ১১টা ১১ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ধংসস্তুপ থেকে উদ্ধারকাজ চলছে বিধায় আহত ও নিহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধির শঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ মানুষ মারা গেছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। সেখানে পৌঁছানো বেশ কঠিন।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।
স্থানীয় সময় রাত ১১.১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারো ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুরাতন মারাখেস শহর ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। বিশেষ করে আল-হাউজ, মারাকেচ, কোয়ারজাজাতে, আজিলাল, চিচাওয়া ও টারোডেন্ট এলাকায় প্রাণহানির সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই ভূমিকম্পটি দেশের এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে জানিয়েছেন মরক্কোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জিওফিজিক্সের প্রধান।
ভূমিকম্পের প্রভাবে ধসে পড়েছে অসংখ্য বাড়ি-ঘর। আর ধসে পড়া বাড়ির নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধার এবং বাঁচাতে এখন হাতে করে ধ্বংসস্তূপ সরাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আল আওলা জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর আশপাশের সড়ক ভেঙে যাওয়ায় বা ধ্বংসস্তূপ পড়ে আটকে যাওয়ার কারণে যেতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা।
ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইমেরিটাস অধ্যাপক বিল ম্যাকগায়ার এএফপিকে বলেন, ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প তেমন একটা হয় না, এমন এলাকাগুলোতে যথেষ্ট মজবুত করে ভবন নির্মাণ করা হয় না। এতে করে ভূমিকম্পে ভবনগুলো ধসে পড়ে এবং অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটে।
প্রকৌশলী ফয়সাল বাদ্দোর বললেন, তিনি যে ভবনে ছিলেন, সেখানে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল দ্রুতগতির একটি ট্রেন আমাদের ভবনের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।’
ভূমিকম্পের সময় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মারাকেশের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী মাইকেল বিজেত। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল বিছানাটা উড়ে যাবে। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আমি কাপড় না পরেই বাড়ির নিচে যাই। কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি, পুরো ভবন বিধ্বস্ত। এটা সত্যিকার অর্থেই মহাবিপর্যয়।’
মারাকেশের আরেক বাসিন্দা ফয়সাল বাদৌর। তিনি এএফপিকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ফয়সাল বলেন, ‘ভূকম্পন অনুভূত হলে গাড়ি থামাই। আমার তখন শুধু মনে হচ্ছিল, এটা কত বড় এক বিপর্যয়। আমি তখন অসহ্যরকম আহাজারি ও কান্না করতে থাকি।’
শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এক জনপদের রূপ নিয়েছে মারাকেশ ও এর আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। বড় বড় ভবন ধসে পড়েছে। বিধ্বস্ত ভবন থেকে বের করা হচ্ছে মরদেহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিদের রক্ত দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বেচ্ছায় রক্তদানের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো। এদিকে ভূমিকম্পের ফলে মারাকেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
প্রাণঘাতী এ ভূমিকম্পের ঘটনায় মরক্কোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের নেতারা। সমবেদনা জানিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাও (ওআইসি)।