:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আগামী মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দামও বাড়ানো হবে। তবে আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়বে না।
আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্দিষ্ট সময় পর পর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে মার্চ থেকেই।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে দাম সমন্বয় করতে চাই। বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বাড়লেও গ্যাসের দাম শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনেই বাড়বে। যারা বড় গ্রাহক তাদের দাম তুলনামূলক বেশি বাড়তে পারে। আমরা স্বাবলম্বী গ্রাহকদের ভর্তুকি দিতে চাই না।
নসরুল হামিদ বলেন, বেশি সমস্যা হয়ে গেছে ডলারের রেট। আগে ডলার ৭৮ টাকায় পাওয়া যেতো এখন প্রায় ১২০ টাকার মতো হয়ে গেছে। এক ডলারে প্রায় ৪০ টাকার মতো বেশি খরচ হচ্ছে। এতে বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দাম সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে বড় গ্রাহকদের দাম বাড়ানো হবে যাতে কম ব্যবহানরকারীরা ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ পায়।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী মার্চ থেকে দেশে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ শুরু হবে। সেখানে ট্যারিফ, ইনভয়েসসহ অনেকগুলো সূচক বা ফ্যাক্টর ঠিক করা হয়েছে।
তাতে আগামী মাসে দাম বাড়বে নাকি কমবে– সেই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন বলা যাচ্ছে না। ট্যারিফ ধরে হিসাব করলে দাম কিছুটা বাড়ে। আবার ইনভয়েস হিসাব করলে বাড়ার কথা না।
সরকার সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী, এখন ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯ টাকা, পেট্রোল ১২৫ টাকা এবং অকটেন ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। তার ৩ সপ্তাহ আগে ১২ জানুয়ারি গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ব্যবহার বুঝে নির্ধারিত হয়। মাসে ১০০ ইউনিট পর্যন্ত, ১০১ থেকে ২০০ ইউনিট, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত এভাবে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা দর থাকে। কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রতি ইউনিটে ২৫ থেকে ৩০ পয়সা বাড়তে পারে। তবে যাঁরা সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী অর্থাৎ মাসে ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য প্রতি ইউনিটে ৭০ থেকে ৮০ পয়সা বাড়তে পারে।
আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত পুরোপুরি ভর্তুকিমুক্ত করতে হবে। সরকারও এ ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে।
গত বছরের ১৮ জানুয়ারি শিল্পসহ অন্যান্য খাতে গ্যাসের দাম গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এ সময় সবচেয়ে বেশি ১৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। এখন নতুন করে আবার শুধু বিদ্যুৎ খাতের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১৪ টাকা। প্রতি ইউনিট গ্যাসের পেছনে সরকারের এখন খরচ হচ্ছে গড়ে ২৪ টাকা। এলএনজি আমদানির জন্যই গ্যাসের খরচ বাড়ছে।
দেশের অর্থনীতিতে খারাপ সময় কাটাতে ২০২২ সালের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে আইএমএফ ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।
তবে এ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম। তিনি নাগরিক নিউজকে বলেন, দাম না বাড়িয়ে বরং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমানোয় সরকারের নজর দেওয়া উচিত।
এদিকে ২০১০ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১২ বার বেড়েছে। শুধু ২০২৩ সালে তিন দফায় বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নির্বাহী আদেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাড়ানো হয়।