সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল

:: আদালত প্রতিবেদক ::

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের (সাদা প্যানেল) প্রার্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

শনিবার রাত সোয়া একটার দিকে নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের ফল ঘোষণা করেন।

ফলাফলে সভাপতি ও সদস্যের তিনটি পদসহ চারটি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সহসভাপতির দুটি পদ, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সহসম্পাদকের দুটি পদসহ সদস্যের চারটিসহ দশটি পদে জয় পেয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। 

সভাপতি, সহসভাপতি (দুটি), সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহসম্পাদক (দুটি), সদস্যের সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৪ পদের মধ্যে ঘোষিত ফলাফল অনুসারে সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন পেয়েছেন ২ হাজার ৬২২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু সাঈদ সাগর ২ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়েছেন।

সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের শাহ মঞ্জুরুল হক ৩ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এই পদে নীল প্যানেলের মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ১ হাজার ৭০২ ভোট পেয়েছেন।

সাদা প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহসম্পাদকের দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জয়ী হয়েছেন। চারটি সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন সাদা প্যানেলের মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন। অপর তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন ফাতিমা আক্তার, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ও সৈয়দ ফজলে এলাহী।

ভোট গণনা কখন হবে তা নিয়ে বাদানুবাদ, হট্টগোল ও মারধরের ঘটনায় শুক্রবার সকালে থমকে যায় গণনা, এরপর মামলা ও মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়া—এমন সব ঘটনার মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষের প্রায় ৪৬ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়।

সভাপতি, সহসভাপতি (দুটি), সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহসম্পাদক (দুটি), সদস্যের সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য এই নির্বাচন হয়ে থাকে। ১৪ পদের মধ্যে সভাপতি ও সদস্যের তিনটি পদসহ চারটি পদে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সহসভাপতির দুটি পদ, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সহসম্পাদকের দুটি পদসহ সদস্যের চারটিসহ দশটি পদে জয় পেয়েছেন সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা।

ঘোষিত ফলাফল অনুসারে সভাপতি পদে নীল প্যানেলের এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাদা প্যানেলের আবু সাঈদ সাগর ২ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়েছেন।

ঘোষিত ফলাফল অনুসারে, সম্পাদক পদে সাদা প্যানেলের শাহ মঞ্জুরুল হক ৩ হাজার ৩১৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এই পদে নীল প্যানেলের মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল) ১ হাজার ৭০২ ভোট পেয়েছেন। দুই প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদপ্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী পেয়েছেন ২৬৯ ভোট।

সদস্য সাতটি পদের মধ্যে চারটি পেয়েছে সাদা প্যানেলের প্রার্থীরা। তারা হলেন মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন। সদস্যের অপর তিনটি পদ পেয়েছে নীল প্যানেলের প্রার্থীরা। তারা হলেন ফাতিমা আক্তার, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক ও সৈয়দ ফজলে এলাহী।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদকের দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূইয়া, মাহমুদা আফরোজ, মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি, সৌমিত্র সরদার ও রাশেদুল হক খোকন প্রার্থী হন।

অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান ও মো. আবদুল করিম প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহী, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল প্রার্থী হন।

সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। আর কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হন মো. সাইফুল ইসলাম।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে গত বুধবার (৬ মার্চ) ও বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ভোট গ্রহণ হয়। দুই দিন সকাল ১০টা থেকে মাঝে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৪টি পদের বিপরীতে সমিতির এবারের নির্বাচনের (২০২৪-২৫) ৩৩ জন প্রার্থী হন। ৭ হাজার ৮৮৩ ভোটারের মধ্যে দুই দিনের নির্বাচনে ৫ হাজার ৩১৯ জন ভোট দেন।

বৃহস্পতিবার ভোট গ্রহণ শেষে সমিতির মিলনায়তনে ভোট বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয় সেদিন দিবাগত রাত দুইটার পর। এর আগে কোনো কোনো প্রার্থী ব্যালটের সঙ্গে মুড়ির মিল না থাকার কথা উল্লেখ করে আপত্তি তোলেন। এ নিয়ে বাদানুবাদ ও হট্টগোল হয়। পরে ভোট গণনা শুরু করা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। সন্ধ্যার পরপরই সমিতি ভবনের বিভিন্ন স্থানে বহিরাগতদের অবস্থান করতে দেখা যায়। সম্পাদক পদে নাহিদ সুলতানা ও বিএনপি–সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুসসহ কয়েকজন রাতেই ভোট গণনার পক্ষে মত দেন। তবে এত রাতে প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকার কথা উল্লেখ করে সাদা প্যানেলের সম্পাদক পদপ্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ কয়েকজন প্রার্থী শুক্রবার দিনের বেলায় ভোট গণনার পক্ষে মত দেন। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বাদানুবাদ ও হট্টগোল হয়।

সেখানে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী জানান, একপর্যায়ে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় যে ব্যালটগুলো সিলগালা করে রাখা হবে। শুক্রবার দুপুরের পর ভোট গণনা হবে। তবে শুক্রবার ভোট গণনা নিয়ে আপত্তি জানান একাধিক প্রার্থী। শুক্রবার ভোরের দিকে উপস্থিত একজন আইনজীবী মিলনায়তন থেকে বের হওয়ার ফটক খুলে দিতে গেলে তাতে আপত্তি জানান উপকমিটির একজন সদস্য। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাদানুবাদ ও হট্টগোল হয়। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন বহিরাগত ব্যক্তি সমিতি মিলনায়তনে ঢুকে পড়েন। মারধরের শিকার হন নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত উপকমিটির সদস্য ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।

ভোট গণনা কেন্দ্র করে হট্টগোল, হাতাহাতি ও মারাপিটের ঘটনায় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস আর সিদ্দিকী সাইফ তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শুক্রবার বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। এই মামলায় আওয়ামী আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী ও বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়। নাহিদ সুলতানা যুথী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।

এই মামলায় নাহিদ সুলতানার বাসায় পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালালেও তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা। অন্যদিকে শুক্রবার রাতে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে আইনজীবীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যায় আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসকে গ্রেফতার করা হয়, তিনি বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও।

নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবুল খায়ের শনিবার লিখিত এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভোট গণনার আগেই দুঃখজনকভাবে বহিরাগত মাস্তান শ্রেণি কর্তৃক আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে লিখিত দিতে বাধ্য করা হয়। যদিও তা অর্থহীন ঘোষণা, তবু কূটতর্ক নিরসনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা “ইগনোর” করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ভোট গণনা করেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হট্টগোল ও শুক্রবার ভোরে মারধরের ঘটনার পর আবুল খায়েরের বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, সমিতির মিলনায়তনে তিনি বলেছেন, ‘শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তাই তাঁকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো।’

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত (২০২৩-২৪) নির্বাচনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও হট্টগোলের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভোট বর্জন ও নতুন নির্বাচনের দাবীর মধ্যেই ১৭ মার্চ রাতে সে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *