দেশের ৮ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

দেশের আট জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া জেলাগুলো হলো— রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এ ছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার জন্য দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চল মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে।

বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বাড়তি অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৬টা ৪৩ মিনিটে।

রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মূলত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পার্থক্য কমে আসার কারণে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। দেশের আট অঞ্চল দিয়ে বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যেটি থাকতে পারে আরও কয়েকদিন। আগামী তিন দিনে দেশের আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে বলে জানান তিনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তার কাছাকাছি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এদিকে খুলনা বিভাগ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল এ বিভাগের দুই জেলা যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল। দুই দিন পর দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা দিলেও কমেনি শীত। হাসপাতালগুলোতে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভিড় বেড়েছে। 

এ ছাড়াও কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি, সাতক্ষীরায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, খুলনায় ১৩ ডিগ্রি, বাগেরহাটের মোংলায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের তীব্রতা ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের যেন শেষ নেই। হাড়ভাঙা শীতেও পেটের দায়ে বের হতে হচ্ছে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন ঠাণ্ডাজনিত রোগে। ঢাকার তাপমাত্রায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহও অনুভূত হয়েছে। ঢাকায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকার লালবাগের এক বাসিন্দা বলেন, গত তিন দিন ধরেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাতাস। রোদ দেখা যাচ্ছে না। দুপুরে একটু দেখা দিলেও বেশিক্ষণ ছিল না। 

মো. কামারুজ্জামান, দিনাজপুর থেকে জানান, “সূর্য উঠিছে কি-নাই বুঝাও যাছে না, তার উপর শির শির করি বাতাস বচ্ছে। একেলে হাড্ডিগুলাও কাঁপি যাতেছে। এই রকম জারত হাত-পা কোকড়া হয়া আইসেছে। গেল কয়দিনের থাকি আইজ একেলে বেজায় জার লাগছে। কামতও বাহির হবার পারছি না”। গতকাল সকালে তীব্র শীতে কাহিল হওয়ার এমন কথা জানাচ্ছিলেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক অনিল চন্দ্র রায়। শুধু অনিল রায়ই নয়, তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে এমন কথা জানাচ্ছিলেন অনেকেই। উত্তরের জেলা দিনাজপুরে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনপদে রাস্তায় মানুষের চলাচল একবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। 

খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে ছিন্নমূল মানুষ। আবহাওয়া অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৫ শতাংশ। চলতি সপ্তাহ ছাড়াও এই জেলার ওপর দিয়ে আরও দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল প্রায় সারাদিনই সুর্য্যের দেখা না পাওয়ায় এবং দিনভর হিমেল বাতাসের কারণে অনুভূত হয় তীব্র শীত। কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের মানুষ পড়ে বিপাকে।  অন্যদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে ৫৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত অনেক এলাকায় এগুলো পৌঁছেনি। এলাকার শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।  

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *