‘মোকা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

ঘণ্টায় সাত থেকে আট কিলোমিটার গতি নিয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’ আরও উত্তর দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হয়ে একই এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১‌৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে শুক্রবার সকালে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তাকে ঘূর্ণিঝড় বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বা ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে হ্যারিকেন গতিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড় বা ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোকার কেন্দ্রকে ঘিরে অনেক মেঘ ও বাতাস ঘুরতে শুরু করেছে। এর ব্যাসার্ধ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার। রোববার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তবে এর অগ্রভাগ আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতেই বাংলাদেশের উপকূল স্পর্শ করবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আগামী রোববারের মধ্যে আঘাত করতে পারে। তবে এর অগ্রভাগের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হতে পারে। শনিবার রাতের মধ্যে বৃষ্টি বাড়তে পারে, যা রোব ও সোমবারও চলতে পারে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব কমে আসতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকা নিয়ে ৬ নম্বর সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। দেশের চারটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা ও মাতারবাড়িকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও নৌযানগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।  

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল বুধবারের তুলনায় আজ ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানের তাপমাত্রা সামান্য কমেছে। তবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেড়েছে। ঢাকায় আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিও ঝরেছে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুরে ২৫ মিলিমিটার। আজ দিনের বাকি সময়ের মধ্যে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। দেশের অন্যান্য স্থানে বঙ্গোপসাগর থেকে উড়ে আসা মেঘের পরিমাণ বাড়তে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে মেঘ বেড়ে তাপমাত্রা কমতে পারে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *