:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৭৩ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এ রাজনীতিবিদকে শপথবাক্য পাঠ করান লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। শপথ গ্রহণের পর তিনি ওয়ালুকারমা মন্দিরে যান।
এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন ইউএনপি দলের এই নেতা।
বিক্রমাসিংহে ২২৫ সদস্যের শ্রীলংকান সংসদে ক্রস-পার্টি সমর্থন নিয়ে একটি ‘ঐক্য’ সরকারের প্রধান হয়েছেন।
বিক্রমাসিংহের শপথ গ্রহণের পর তামিল বিধায়ক ধর্মলিঙ্গম সিথাদথান এএফপিকে বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
এর আগে ১৯৯৩ সাল থেকে শ্রীংলংকার পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিক্রিমাসিংহে। তাকে পশ্চিমপন্থী মুক্তবাজার সংস্কারবাদী হিসাবে দেখা হয়।
বিক্রমাসিংহে পর পর দুইটি নির্বাচনে হেরে যান। তিনিই তার দলকে একের পর এক নির্বাচনী পরাজয়ের দিকে নিয়ে যান। এই কারণে তার নিজের সমর্থকরাও তাকে হিসেবে ‘রেকর্ড লুজার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
কিন্তু এতো কিছুর পরও ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের নির্বাচনী পরাজয়ের পরে বিরোধীরা কর্তৃত্ববাদী নেতার বিরুদ্ধে ঐক্য প্রার্থী হিসেবে তাকে সমর্থন দেওয়ার পর তিনি ফের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
শক্তিশালী রাজাপাকসে পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও ২০১৮ সালে শ্রীলংকাকে সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। সে সময় মাহিন্দা ছয় সপ্তাহের জন্য প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করার আগে সুপ্রিম কোর্ট একে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল।
তবে সব দ্বন্দ্ব একপাশে সরিয়ে বৃহস্পতিবার টালমাটাল পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
গত সোমবার শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজপাকসে। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাভেগায়া (এসজেবি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও সেজন্য প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের শর্ত দিয়েছিল তারা। এরমধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। পরে জাতির উদ্দেশে ভাষণে চলতি সপ্তাহের মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে তারপরেও বিক্ষোভ চলছিল।
আজ সকালে ইউএনপির নেতারা জানান, তাদের নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। এরমধ্যে প্রধান বিরোধী দল এসজেবির নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখেন। তবে সেখানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব এবং তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করার শর্ত দিয়েছিলেন তিনি।
রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যায় শ্রীলংকার মন্ত্রিসভা। এরপর চলতি সপ্তাহে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে।
এক বিবৃতিতে গোতাবায়ে রাজাপাকসে জানান, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও দেশের কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন সরকার গঠনে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি। সংসদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য কিছু সাংবিধানিক সংস্কার করা হবে।
করোনার ধাক্কার পাশাপাশি সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, চলছে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট। ঋণের চাপ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গতকাল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল বিরাসিংহে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁদের হাতে বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুত আছে, তা দিয়ে সপ্তাহখানেকের বেশি আমদানিপ্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হবে না। সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছাড়া সে আলোচনা এগোবে না।