শিশু আয়াতের দুই খণ্ডিত পা, মাথা উদ্ধার

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

নগরীর ইপিজেডে অপহরণের পর খুন হওয়া শিশুকন্যা আলিনা ইসলাম আয়াতের মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধারে একের পর এক তল্লাশি চালিয়ে গেছে পিবিআই।

গত দুদিন ধরে সংস্থাটির ২৫ জনের দুটি টিম অবস্থান করছিল আয়াতের দেহের খণ্ডাংশগুলো ফেলার স্থান দুটিতে।

দুই পায়ের পর এবার আলীনা ইসলাম আয়াতের মাথার অংশ উদ্ধার করে পিবিআই। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড আকমল আলী ঘাটের স্লুইসগেট এলাকা থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়।

পিবিআইয়ের কাছে খুনি আবির আলী শিশু আয়াতকে খুনের পর কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও ঘটনার ১৫ দিন পরও শরীরের কোনো অংশ উদ্ধার হয়নি। এতে আয়াতের মা–বাবার মনে ক্ষীণ আশা জাগে তাদের মেয়ে হয়ত জীবিত আছে, আবির মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু গতকাল আয়াতের দেহের খণ্ডাংশ পাওয়ার কথা জানতে পেরে শোক উথলে উঠেছে তাদের। যেটুকু আশা নিয়ে তারা স্বপ্ন দেখছিলেন যে, ‘মামণি’ ফিরে আসবে; সেই আশার মৃত্যুতে তাদের আর্তনাদ উপস্থিত পিবিআই টিমের সদস্যদের চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছিল বারবার। গতকাল বুধবার আকমল আলী রোডের সাগর পাড় সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের শেষ প্রান্তে একটি নালা থেকে আয়াতের দুটি পা উদ্ধার করে। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান জানান, গত ছয় দিন ধরে লাশের অংশ উদ্ধারের জন্য অভিযুক্ত আবিরকে নিয়ে কয়েক দফা অভিযানে যায় পিবিআই। তারপরও লাশের হদিস পাওয়া যায়নি। পিবিআইয়ের ২৫ জনের একটি টিম আবিরের তথ্য মতে গত দুদিন ধরে দুইভাগে ভাগ হয়ে দুই জায়গায় স্ট্যান্ডবাই ছিল। আবির আলী লাশের তিনটি টুকরো আকমল আলী রোডের সাগর পাড় সংলগ্ন স্লুইচ গেইটের যেখানে ফেলেছে বলে আমাদের জানিয়েছিল, সেখান থেকে ৪২০ মিটার দূরে স্লুইচ গেইটের চতুর্থ স্লটে বুধবার দুপুরে পলিথিনে মোড়ানো দুইটা প্যাকেট পাওয়া যায়। আয়াতের বাবা সোহেল রানা শনাক্ত করেন যে, এ দুটি তার মেয়ের পা।

গত ২৮ নভেম্বর রাতে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে অপহরণের পর খুন করে মরদেহ ছয় টুকরো করে খালে–সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার রহস্য উদঘাটনে অভিযুক্ত আবির আলীর পিতা–মাতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারের পর তাদের আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। মূলত অপহরণ ও খুনের পর মরদেহ ছয় টুকরো করার কারণ বের করতেই পিতা–মাতাকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানায় পিবিআই।

গত ২৪ নভেম্বর রাতে ইপিজেডের আকমল আলী রোডের পকেট গেইট এলাকার বাসা থেকে আয়াতদের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে গ্রেফতার করা হয়। আবির আলী স্বীকার করে মুক্তিপণ দাবির জন্যই সে তার বাড়িওয়ালার নাতনিকে অপহরণ করে। মেয়েটি চিৎকার করায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরো নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে–টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরো আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচ গেইটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির। অভিযানে আয়াতের রক্তমাখা কাপড় ও স্যান্ডেল, মরদেহ টুকরো করার কাজে ব্যবহার করা বটি ও অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *