শিশু আয়াত হত্যা: আবিরের বাবা-মা রিমান্ডে

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

চট্টগ্রামে পাঁচ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামি আবীর আলীর মা-বাবার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া তার ১৫ বছর বয়সি বোনকেও জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) সকালে আদালত এ আদেশ দেন বলে চট্টগ্রাম পিবিআইয়ের বিশেষ সুপার নাইমা সুলতানা জানান।

গত ১৫ নভেম্বর নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানার মেয়ে আলীনা ইসলাম আয়াতকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে আবীর। কিন্তু কোথাও আটকে রাখার জায়গা না থাকায় অপহরণের পরপরই শিশুটিকে হত্যা করে। পরে লাশ ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ১০ দিন পর ২৪ নভেম্বর রাতে আবীরকে গ্রেফতার করে পিবিআই। পরদিন তাকে নিয়ে দিনভর সাগরপাড়ে অভিযান চালিয়ে খণ্ডিত দেহাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা করে পিবিআইর তদন্ত দল। কিন্তু স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ায় টুকরোগুলো পাওয়া যায়নি।

আবিরকে নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর দুপুরে এবং রোববার পিবিআই টিম তার বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্য আরও যাচাই এবং আনুষঙ্গিক প্রমাণ সংগ্রহে পিবিআই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে। প্রথম দফায় গত ২৬ নভেম্বর আবিরকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। সোমবার দ্বিতীয় দফায় আরও সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

পিবিআইয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণের পরিকল্পনা করে তাদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আজহারুলের ছেলে আবির আলী। 

পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আবিরকে আয়াত চাচ্চু বলে সম্বোধন করত। ১৫ নভেম্বর বিকালে বাসার সামনে থেকে আয়াতকে কোলে নিয়ে আদর করতে করতে আবির ঢুকে যায় তার বাবার বাসায়, যেখানে তখন কেউ ছিল না। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে আবির।

এরপর লাশ ব্যাগে ভরে নিয়ে যায় নগরীর আকমল আলী সড়কের পকেটগেট বাজার এলাকায় তার মা আলো বেগমের বাসায়। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদের পর আবির মায়ের বাসায় থাকত। তবে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা যে এলাকায়, সেই বাবার বাসায়ও তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। আবির মায়ের বাসায় নিয়ে লাশ বাথরুমের ছাদের ওপর লুকিয়ে রাখে। রাতে সেই লাশ বাথরুমে নিয়ে কেটে ছয় টুকরা করে ছয়টি ব্যাগে ভরে রাখে।

পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষপ্রান্তে একটি নালায় স্লুইচগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।

মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সংগ্রহ করা সিম ব্লক থাকায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি আবির। আয়াতের খেলার সাথীদের কাছ থেকে তাকে কোলে নেওয়ার তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আবিরের গতিবিধি দেখে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

পিবিআই পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, ‘আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ পেয়েছি। যার একটি নেভি গেট এলাকার। রিকশায় করে আবির পলিথিনে মোড়া টুকরা মরদেহ নিয়ে যাচ্ছে-এমন দৃশ্য আছে সেখানে। আরেকটি ফুটেজ একটি দোকানের। সেখান থেকে আবির বঁটি, স্কচটেপ ও এন্টিকাটার কিনেছে।’

আয়াতের বাবা সোহেল রানা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় মামলার বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

আয়াতের দাদা মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘মামলা করছে সোহেল, ক্যামনে কী করছে জানি না। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যারে (আবির) পুলিশ ধরেছে, তার আমরা ফাঁসি চাই।’

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘পুলিশ অলরেডি হত্যার আলামত পেয়েছে। রক্তমাখা বঁটি, এন্টিকাটার-এগুলো তো গুরুত্বপূর্ণ আলামত। আর গ্রেফতার করা আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পেলে অপরাধ প্রমাণে তেমন কিছুই লাগবে না।

পিবিআই কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা বলেন, আবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তার বাবা-মা-বোনকেও গ্রেফতার করা হয় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। সকালে তাদের আদালতে পাঠিয়ে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পিবিআই। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম অলিউল্লাহ বাবা-মাকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর আবিরের বোন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে তিন দিন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬-এর বিচারক সিরাজউল্লাহ কুতুবী এই আদেশ দেন। বিচারক সমাজসেবা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদেশ দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। 

আবিরকে নিয়ে মঙ্গলবারও মরদেহের খণ্ডাংশের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু বিকাল ৪টা পর্যন্ত খণ্ডাংশ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া আবিরের তথ্য যাছাই-বাছাই করছে পিবিআই। যাচাই-বাছাই করার জন্য তার বাবা-মা ও বোনের কাছে বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হবে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *