সংবাদমাধ্যম দুর্বৃত্ত শাসন প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার

:: ফয়েজ আহমদ তৈয়ব ::

দেশের মিডিয়ার লাজ শরম আর কিছু বাকি নাই! এরা মানুষের সামনে মুখ দেখায় কিভাবে? গতকাল এক তরুণ লেখক আক্ষেপ করে বলেছেন, যারা নতুন লেখকদের লেখা নাকছিটকে ছুঁড়ে ফেলে, মেধাবী লেখকদের একসেস দেয় না, সুযোগ প্রাপ্ত নতুনদের লেখায় ক্রমাগত চুরি-কাঁচি চালায়, যারা দেশি লেখকদের কলাম প্রতি ১ হাজার টাকা দিতেও কার্পণ্য করে, তারাই কিনা ডজন ডজন ভুয়া লেখকের লেখা ছাপিয়েছে! তারা ভাব ধরছে এসব জানতো না!

ঠিক করা এসব লেখা/ওপ-এড সরবারহ করেছে, এসব কন্টেন্ট তৈরি, বিতরণ এবং প্রকাশের স্টেজে গুলোতে আর্থিক লেনদেন কেমন ছিল, ফান্ডিং সোর্স থেকে পুরা চক্রটাকে উন্মুক্ত না করা গেলে বাংলাদেশের সংবাদপত্র শিল্পের মর্যাদা ফিরবে না। এসব তদন্ত করে জনতার সামনে জবাবদিহি করা না হলে মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিঃশেষ হবে।

গণমাধ্যমের ওপর তিন ধরনের রাজনৈতিক এজেন্ডা এখানে আরোপিত।
১. বিরোধী রাজনীতি, বিরোধী দল ও বিরোধী নেতৃত্বকে নিয়মিত ডি-লেজিটিমেইট, ডি-মোরাল এবং ব্লেইম করা। ২. বর্তমান সরকারের ‘বিকল্প নেই’ এমন একটা ধরনা প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনহীন ক্ষমতায়নকে প্রশ্ন না করা, বন্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল করার যেকোনো চেষ্টা থেকে বিরত থাকা। ৩. সরকারের অপছন্দের বিষয়ে, সরকারকে বিব্রত করতে পারে এমন জাতীয় কিংবা স্থানীয় ঘটনায় একেবারে চুপ থাকা বা মিডিয়া ব্ল্যাকআউট করা এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রয়োজনে ভিকটিম ব্লেমিং করা। এ তিন এজেন্ডা এখন বলা চলে মিডিয়া সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, তথাপি বিভিন্ন সংবাদে ফোন আসে, আপত্তি আসে।

বাংলাদেশের মিডিয়া আর হলুদ নয়, বরং কুচকুচে কালো। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই এরা এজেন্সির তৈরী করা, সরকারি প্রেসের সরবারহ করা খবর ছাপছে, এই চর্চা এখনো চলছে। এরা সংবাদ গায়েব করে, সংবাদ না চাপিয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিক্রিয়া ছাপায়। এসব বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তপনা এরা সচেতনে লালন করে, পুরা ইন্ডাস্ট্রিতে এই রোগ বিরাজ করছে। কাউকে আলাদা করা মুশকিল হয়ে গেছে। লজ্জা লাগে মিডিয়ায় লিখি, তথাপি দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে লিখতে হয়! বুদ্ধিবৃত্তিকে একদল বদমাইশের হাতে তুলে দেয়ার ফল ভাল হতে পারে না!

পত্রিকা চালু রাখার কিংবা লাভের জন্য সরকারের লেজুড়বৃত্তির সীমাহীন চর্চা হয়। বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর পত্রিকাগুলো নিজস্ব পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে মঞ্জুরি পায় এবং করপোরেট সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন আনে। তারা সেসব গোষ্ঠীর অনিময় দুর্নীতি পাচারের বিরুদ্ধে লেখে না!

সরকারি সার্কুলেশনের ভাগ পেতে বহু অলিখিত নিয়ম মেনে চলতে হয় বাংলাদেশের টেলিভিশন ও ছাপা পত্রিকাকে। সরকারের নির্বাচনহীন ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জবাবদিহিহীনতা এবং কর্তৃত্বপরায়ণতা বেড়েছে বলে গণমাধ্যমের ওপর আরোপিত অলিখিত বিধিনিষেধের তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। এসব চর্চা দীর্ঘ সময় ধরে চর্চিত হতে হতে এখন প্রতিষ্ঠিত সেলফ সেন্সরশিপে রূপান্তরিত হয়েছে। গণমাধ্যমের ওপর তিন ধরনের রাজনৈতিক এজেন্ডা এখানে আরোপিত। ১. বিরোধী রাজনীতি, বিরোধী দল ও বিরোধী নেতৃত্বকে নিয়মিত ডি-লেজিটিমেইট, ডি-মোরাল এবং ব্লেইম করা। ২. বর্তমান সরকারের ‘বিকল্প নেই’ এমন একটা ধরনা প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনহীন ক্ষমতায়নকে প্রশ্ন না করা, বন্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল করার যেকোনো চেষ্টা থেকে বিরত থাকা। ৩. সরকারের অপছন্দের বিষয়ে, সরকারকে বিব্রত করতে পারে এমন জাতীয় কিংবা স্থানীয় ঘটনায় একেবারে চুপ থাকা বা মিডিয়া ব্ল্যাকআউট করা এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার প্রয়োজনে ভিকটিম ব্লেমিং করা। এ তিন এজেন্ডা এখন বলা চলে মিডিয়া সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, তথাপি বিভিন্ন সংবাদে ফোন আসে, আপত্তি আসে। এ সংস্কৃতিতে খাপ খাওয়াতে না পারা গণমাধ্যম হয় বন্ধ হয়েছে নতুবা তাদের নিবন্ধন বেহাত হয়েছে। এভাবে রাজনৈতিক অধিকারসহ নাগরিকের তথ্যপ্রাপ্তির মৌলিক অধিকারের চর্চাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।

সংবাদ মাধ্যম গণমাধ্যম হতে পারেনি, সংবাদ মাধ্যম দুর্বৃত্ত শাসন প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার!

লেখক: টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ও গবেষক

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *