সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি নতুন করে জেগে উঠেছে

:: কামরুল আহসান নোমানী::

ডেটলাইন ঘোষণা করে কি সরকারের পতন ঘটানো যায়? আমি সেটা মনে করিনা। হ্যাঁ আমি স্বীকার করি ১০ তারিখ নিয়ে যেভাবে হাইপ উঠেছিলো তাতে আমাদের নেতা-কর্মীদের একটা অংশও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো যে ১০ তারিখে আসলেই কিছু একটা ঘটতে পারে। সমাবেশ শেষে এই অংশটা কিছুটা হতাশ হয়েছে এটা সত্যি। আপনি যদি এটাকে “কি পেলামনা” র তালিকায় ফেলেন তবে এই সমাবেশকে ঘিরে বাদ বাকী আর যা কিছু আছে সব বিএনপির অর্জন।

দেখুন ঢাকায় এত বড় সমাবেশ আমরা শেষ কবে করতে পেরেছিলাম? আমার যতদূর মনে পড়ে সেটা ১৩-১৪’র দিকে। তারপর আমরা কখনোই ঢাকায় আর সেভাবে দাঁড়াতে পারিনি। এবার কি ঘটেছে সেটা একটু দেখেন।

এত সফল কর্মসূচি বিএনপি নিকট অতীতে পালন করতে পারেনি। দেখেন আমাদের প্রধান নেতা, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্দী। আরেক প্রধান নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে। উনাদের অনুপস্থিতিতে যিনি দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই মহাসচিব স্যারও সমাবেশের একদিন আগে এরেস্ট হয়ে গেলেন। সাথে এরেস্ট হলেন ঢাকার সমাবেশ সফল করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা মির্জা আব্বাস সাহেব। একইসাথে আমাদের নেতাদের বাসায় বাসায় চললো পুলিশের তল্লাশি। ঢাকা শহরে একরকম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো। নয়াপল্টন পুলিশের দখলে চলে যাবার পর প্রায় নেতৃত্বহীন বিএনপির ঢাকা সমাবেশ একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলো। তারপরেও বিএনপি বলেছে ঢাকায় সমাবেশ হবে।


সমাবেশস্থল ঘোষণার পর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কোন রকমের নেতৃত্ব ছাড়াই যেভাবে হাজার হাজার নেতা-কর্মী গোলাপবাগের মাঠে উপস্থিত হলো সেটা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার ছিলো। আপনি না দেখলে সিনারিওটা কল্পনা করতে পারবেননা। শুধু যে বিএনপি নেতা-কর্মীরাই এলেন তা না, সাথে যোগ হলো খেটে খাওয়া মানুষেরা। ফলে যা হলো সমাবেশের আগের রাতেই সমাবেশস্থলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি।

নয়টা সফল বিভাগীয় সমাবেশ শেষ আমরা বলেছিলাম ঢাকায় আমরা সর্বকালের সেরা সমাবেশ করতে যাচ্ছি। আমাদের কিছু নেতার বক্তব্য এবং সরকারের আচরণে শেষ পর্যন্ত ঢাকার সমাবেশ বিশাল একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলো। সরকার মনে হয়না তার শেষ দুই মেয়াদে আর কোন ঘটনাকে এতটা সিরিয়াসলি নিয়েছে যতটা তারা ঢাকা নিয়ে হয়েছে। তারা শুধু হুমকি ধামকি না পুলিশ এবং তাদের নেতা- কর্মীদেরকে নিয়ে পুরো ঢাকা শহরে একটা ভীতিকর অবস্থা কায়েম করেছিলো যেটার সাথে শুধু মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকার অবস্থার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। ঢাকার প্রতিটা প্রবেশ পথে তারা দুইদিন আগ থেকেই চেকপোস্ট বসিয়ে ঢাকায় আগত প্রত্যেক মানুষকে নজরদারির ভেতর নিয়ে এসেছে। আমি নিজে অন্তত পাঁচটা চেক পয়েন্টের স্বাক্ষী। একপাশে তাঁবু টাঙ্গিয়ে লাঠিসোটা নিয়ে সরকার দলীয় ক্যাডাররা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে, তার ঠিক পাঁচ দশ গজের ভেতরেই পুলিশ ব্যারিকেড৷ আপনি বের হতে চাইলে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু ঢোকা সম্ভব না। কোনভাবেই না। এরপরেও শত বাধা বিঘ্ন পার হয়ে আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মী ঢাকার সমাবেশে সমবেত হয়েছেন।

রাজনৈতিকভাবে গত এক দশকের মধ্যে ঢাকার সমাবেশ-ই বিএনপির সবচেয়ে সফল কর্মসূচি।

এত সফল কর্মসূচি বিএনপি নিকট অতীতে পালন করতে পারেনি। দেখেন আমাদের প্রধান নেতা, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্দী। আরেক প্রধান নেতা তারেক রহমান দেশের বাইরে। উনাদের অনুপস্থিতিতে যিনি দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই মহাসচিব স্যারও সমাবেশের একদিন আগে এরেস্ট হয়ে গেলেন। সাথে এরেস্ট হলেন ঢাকার সমাবেশ সফল করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা মির্জা আব্বাস সাহেব। একইসাথে আমাদের নেতাদের বাসায় বাসায় চললো পুলিশের তল্লাশি। ঢাকা শহরে একরকম যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলো। নয়াপল্টন পুলিশের দখলে চলে যাবার পর প্রায় নেতৃত্বহীন বিএনপির ঢাকা সমাবেশ একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেলো। তারপরেও বিএনপি বলেছে ঢাকায় সমাবেশ হবে।

সমাবেশস্থল ঘোষণার পর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কোন রকমের নেতৃত্ব ছাড়াই যেভাবে হাজার হাজার নেতা-কর্মী গোলাপবাগের মাঠে উপস্থিত হলো সেটা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য একটা ব্যাপার ছিলো। আপনি না দেখলে সিনারিওটা কল্পনা করতে পারবেননা। শুধু যে বিএনপি নেতা-কর্মীরাই এলেন তা না, সাথে যোগ হলো খেটে খাওয়া মানুষেরা। ফলে যা হলো সমাবেশের আগের রাতেই সমাবেশস্থলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি।

এই সমাবেশ নিয়ে সরকারের যত হারামিপনা ছিলো মানুষ কিন্তু সব নোটিশ করেছে। বহু মানুষ হয়রানির স্বীকার হয়েছে এবং তারা কেউ কিন্তু বিএনপিকে দোষ দেয়নি। আমি নিজে একটা চেকিং এর সামনে সমবেত শত শত মানুষকে পুলিশের সামনেই সরকারের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখেছি।

গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেভাবে ঢাকার পরিস্থিতি কাভার করেছে সেটাও বিএনপির অর্জন।

সরকারের সর্বোচ্চ বাধার মুখেও বিএনপির গোলাপবাগের সমাবেশ সবার কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে যে বিএনপি নতুন করে জেগে উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা বিএনপি এখন স্বনির্ভর নেতা-কর্মীদের দল হয়ে উঠেছে, যারা কিনা নেতাদের অনুপস্থিতিতে নিজেরাই নেতৃত্বের ভার কাঁধে তুলে নিতে স্বক্ষম।

ক্রিকেট এবং ফুটবলের নেশায় আসক্ত প্যারালাইজড এবং ফুর্তিবাজ মধ্যবিত্ত সমাজকে এই সমাবেশ কিছুটা হলেও নাড়া দিয়ে গেছে।

হ্যাঁ আমরা চাইলে সমাবেশের দিন নয়াপল্টন দখল করতে পারতাম। লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে পুলিশ এবং আওয়ামীলীগ উড়ে যেত। তবে তাতে ক্ষয় ক্ষতি হতো অনেক বেশী। কিন্তু তাতে সরকার পতন হতো কি? বরং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে আমরা যেটা করতে পেরেছি সেটা সরকারকে আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যে রাজপথের পাশাপাশি ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলগুলো মেন্টেইন করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারপন্থী পশ্চিমারা যে ভূমিকা পালন করছ সেটা যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। সামনের দিনগুলোতে তাদের সিরিয়াসনেস আরো বাড়বে৷

বাজার, অর্থনীতি, ডলার, জ্বালানি নিয়ে পেরেশানি এবং বিএনপির আন্দোলন- সরকারের ধোঁয়া বের হচ্ছে। অনেস্টলি বলছি।

আওয়ামীলীগের হানিমুন পিরিয়ড শেষ। সামনের দিনগুলোতে শেখ হাসিনাকে গত তিন মেয়াদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। আমি নিশ্চিত এবার তারা পেরে উঠবেনা। আওয়ামীলীগের প্রস্থান লেখা হয়ে গেছে।

লেখক: নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *