২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী সমাবেশ করবে বিএনপি

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর ও জেলায় সমাবেশ করবে দলটি।

সোমবার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বাকশাল দিবসকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে ২৫ জানুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। 

যুগপৎ আন্দোলনে ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে  বিএনপি। 

মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সব দলকে নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেদিন গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। তাই বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আগামী ২৫ জানুয়ারি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার মেগা প্রজেক্ট করে মেগা দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে গত ১০ বছরে প্রায় দশ লাখ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে। আমরা মনে করি আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস করে এই টাকা আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাচার করেছে।

তিনি বলেন, আজকে ব্যাংকে ভোক্তা পর্যায়ে সুদের হার বৃদ্ধি করে তারা (সরকার) আইএমএফকে খুশি করতে চায়। কিন্তু আইএমএফ বলেছে তারা খুশি নয়। তারা আরও সংস্কার দেখতে চায়। তার অর্থ হচ্ছে আজকে আইএমএফ-ও বুঝতে পেরেছে যে এই বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে গেছে। যার জন্য আজকে ডলারের সংকট, ব্যাংকগুলোতে তারল্যের সংকট। সরকার কোনো রকমে আর ধামাচাপা দিতে পারছে না।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে তোয়াক্কা না করে, বিদুৎতের দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বিএনপির সরকারের সময় বিদ্যুতের ইউনিট ছিল ২ টাকা ৬০ পয়সা, আর এখন ১১ টাকা দিতে হয় এক ইউনিটে।

তিনি বলেন, সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ নামে জনগণের পকেট কাটছে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে, গত ১০ বছরে এদেশ থেকে ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে।

তিনি আরও  বলেন, আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্রে আজ সরকারের লোকের পাচার করা টাকায় বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আজ রিজার্ভ সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট। আজকে বাংলাদেশে ধনী-গরিবের ব্যবধান পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, যা গত ১২ বছরে সরকারের কারণে হয়েছে। আজকে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি গরীব হয়ে গিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,’ এই সরকার ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুলিশের এসপি, ডিসিকে ঘুষ দিয়ে নির্বাচন পার হয়েছে, আর এখন প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনকে ঘুষ দিয়ে টিকে আছে। তাদের একজন ওয়াসা এমডি, তার নাকি বিদেশে ১৪টি বাড়ি আছে, ঐ এমডি নাকি আবার শেখ রেহানার ননদের জামাই।

তিনি আরও বলেন, আর আমাদের গুম-খুনের ভয় দেখিয়ে লাভ নাই, যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি, আবার লড়াই করেই এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ দিনে দুই বেলা খেতে পারছে না, অথচ এই সরকার বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ট্যাক্সের মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটছে, এই চুরির টাকা যাচ্ছে ভোট চোরদের পকেটে’।

তিনি আরও বলেন, ‘১০ লাখ কোটি টাকা সরকারের চোরেরা বিদেশে পাচার করেছে, তাদের চুরি এবং পাচারের জন্য  দেশের মানুষকে বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য দিতে হচ্ছে’।

‘ইদানীং আওয়ামী লীগের নেতাদের পাচার করা টাকায় কেনা বিদেশে বাড়ির সন্ধান বের হচ্ছে, এক নেতার বিদেশে ১০টা বাড়ি পাওয়া গেছে, আরেক নেতার ৭০টি’- যোগ করেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই আওয়ামী লীগ সম্পুর্ণ অগণতান্ত্রিক দল, তারা এদেশে গণতন্ত্র চায় না। এ আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে জবাই করে দিয়েছে, এরশাদের সামরিক শাসনকে সমর্থন জানিয়ে, ১/১১’র অবৈধ সরকারকে নিজেকে সমর্থন দিয়ে নিজেদের ফসল বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সোমবার সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত রাস্তার একপাশের পুরোটায় প্লাস্টিকের চাটাই বিছানো হয়েছে।

নেতাকর্মীদের হাতে বিদ্যুতের দাম কমানো,তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে।

মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতারা।

বিএনপির আজকের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *