সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার

:: সুব্রত শুভ ::

সম্পত্তি যেন অন্য গোত্রে বা অন্য পরিবারের কারো কাছে না যায়, তার জন্যই মানুষ নিজের কাজিন কিংবা পরিবারের ভেতর বিয়ের আয়োজন করত। ফলে অর্থ ও সম্পদ নিজের পরিবারের বাহিরে যাওয়ার আর সুযোগ হত না। কিন্তু ভারতবর্ষে নারীরা সম্পত্তির ভাগ পায় না বলে নিজের আত্মীয়তার ভেতর সাধারণত বিয়ে হয় না। দক্ষিণ ভারতের আত্মীয়তার মধ্যে হিন্দুদের বিয়ে আছে। আর এর মূল কারণও সেই সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারার সার্কেল যেন অন্য কারো হাতে না যায়। ব্রিটিশ আমলে বিকাশ হওয়া ব্রাহ্মসমাজ মুসলিমদের মতন সেখানেও আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ের সুযোগ ছিল। সত্যজিৎ রায় ব্রাহ্মসমাজের মানুষ হওয়ায় তার কাজিন বিজয়া রায়কে বিয়ে করতে পেরেছেন। সাধারণ হিন্দু পরিবারে কাজিন বোন বোনের মতন।

২.

সবাই তো নিজের ধর্ম বা নিজের সম্প্রদায়কে অন্যদের থেকে বেটার ভাবে। সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি হল তাতে তো হিন্দু সম্প্রদায় স্বাগত জানানো উচিত। এবং অন্যদের দেখিয়ে দেওয়া যে, আমরা আমাদের বোনদের সম্পত্তির সমান ভাগ দিই। অথচ অনেকেই চক্ষু লজ্জায় মিনমিন করে বলা শুরু করেছে- শুধু হিন্দুদের বেলায় হবে কেন? অন্যদের বেলায় কেন নয় ইত্যাদি।

কয়েক বছর আগে সরকার মুসলিমদের মতন হিন্দু বিয়েতে দলিল ও বিচ্ছেদের জন্য আইন করতে চেয়েছিল। তখন হিন্দু মহিলা মহাজোট’ শাস্ত্রবিরোধী ‘তালাক’ ব্যবস্থা হিন্দু আইনে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না বলে বয়ান দিয়েছে। হিন্দু নেতারা রাস্তায় নেমেছিল! অজুহাত ছিল যে‌- এর কারণে হিন্দু সমাজে বিচ্ছেদ বাড়বে, মুসলিম ছেলেরা হিন্দু মেয়েদের পটিয়ে নিয়ে যাবে। পরবর্তীতে সরকার এই আইন করা থেকে সরে আসে। এখনও এই অজুহাত আসবে যে সম্পত্তির জন্য হিন্দু মেয়েদের অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন টার্গেট করবে। কিন্তু নারীদের সম্পত্তি দেওয়ার ইচ্ছে যদি থাকত তাহলে- অন্তত বলতে পারত ধর্ম পরিবর্তন করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বাতিল। কিন্তু তারা এটা বলবে না কারণ এটা দাবী করলে সরকার হয়তো আইন করে ফেলবে।

ভাবা যায়, ২০২৩ সালে এসেও হিন্দু বিয়েতে কাগজ করা বাধ্যতামূলক না। হাতে গোনা কিছু শিক্ষিত মানুষ কাগজ করে বাকিদের বিয়ের দলিল হল বিয়ের ফটো! আর এই কারণে বর্তমানে অনেক সংসারে বিচ্ছেদের সময় এক বিশাল ক্যাচালের সৃষ্টি হয়। পরিবার আদালতে গেলে জজ সাহেব বলে তোমাদের কোন কাগজ নাই, তোমাদের জন্য কোন আইনও নাই। সুতরাং সালিশ করে এর সমাধান ছাড়া উপায় নাই। এলাকার এমপি, মেয়র দুই পরিবার নিয়ে দেন-দরবার করে বিচ্ছেদ সম্পন্ন করে। এমন অনেক ঘটনাও এমপি সমাধান করতে পারে নাই তাই বিচ্ছেদের সালিশ কয়েক বছর ধরে ঝুলে আছে।

অনেকে আবার বলে সম্পত্তির ভাগাভাগি হলে ভাই- বোনের সম্পর্ক নাকি নষ্ট হবে। সেই যুক্তিতে ছোট ভাইয়ের সাথে যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয় তার জন্য সব সম্পত্তি বড় ভাইকে দিয়ে দেওয়া উচিত! জোরে বলেন ঠিক কিনা? পরিশেষে একটা কথাই বলব, সামনে নির্বাচন তাই সম্পত্তিতে নারীদের সমান অধিকারের আইন করে সরকার কাউকে ক্ষেপাতে চাইবে না। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়-

”কে হায় সম্পত্তি ভাগ করে

বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!”

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *