:: জামালপুর প্রতিনিধি ::
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম নামের সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
বুধবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে হামলার শিকার হন তিনি।
সাংবাদিক গোলাম রব্বানি অনলাইন পোর্টাল ‘বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের’ ও মানবজমিন পত্রিকার জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ওই উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টার দিকে গোলাম রব্বানী নাদিমকে হাসপাতালে আনা ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা পৌনে ৩টার দিকে তিনি মারা যান।
গত বুধবার রাত ১০টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরছিলেন নাদিম। পথিমধ্যে পাটহাট এলাকায় নাদিমের ওপর একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ সময় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সস্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার রাত ১২টার দিকে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হওয়ায় আজ সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু হয়।
গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম অসস্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি এর আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। তার লোকজনই এই হামলা চালিয়েছেন। তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশের পাঁচটি টিম মাঠে কাজ করছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীরা গ্রেফতার হবেন। ওই সাংবাদিকের চিকিৎসা ও পরবর্তীতে মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় মামলা হয়নি।
ঘটনার প্রতিবাদে বিকাল ৫ টায় বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সাংবাদিকরা বলেন, সাংবাদিক নাদিমকে যারা হত্যা করেছে তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহীন আল আমীন, জিএম বাবু, শাহ্ জামাল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু দাবি করেন, তার সঙ্গে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের কোনো শত্রুতা নেই। এ হামলায় তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। এরআগে গত ১১ই এপ্রিলও নাদিমের ওপর একবার হামলার ঘটনা ঘটে। সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে তার ওপর ওই হামলা করা হয়েছিল।
এদিকে ‘জামালপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা নির্যাতনের এমনকি হত্যার ঘটনা সম্প্রতি উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে বলে কমিশন লক্ষ্য করছে। নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানীর ওপর হামলাকারীরা যেই হোক না কেন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানায় কমিশন। নিহত সাংবাদিকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তিনি তাদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।