সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: ৪৮ ঘণ্টা থেকে ২৯২২ দিন

:: তাহসিন আহমেদ ::

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৮ বছর বা ২৯২২ দিন অতিক্রান্ত হলেও গত ১০ ফেব্রুয়ারি ৭১ বারের মতো পিছিয়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।

মামলায় রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি আটজন। অপর আসামিরা হলেন-বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরওয়ার ওরফে সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজেদের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

প্রথমে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরে বাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যা বের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে। চারদিনে কোনো রহস্য উৎঘাটন করতে না পারায় মামলার তদন্ত পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি পুলিশ। কিন্তু তারাও রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল র‌্যাব তদন্তভার গ্রহণ করে। গত সাত বছরেরও বেশি সময়ে র‌্যাব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এমনকি এই হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্যই উদঘাটন করতে পারেনি।

সাগর-রুনি নিহত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে অনেক আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল প্রকৃত ঘটনার রহস্য উম্মোচনের বিষয়ে। মামলার তদন্তভার হাতে পাওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের সাত মাসের মাথায় এসে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব আসামিদের অচিরেই শনাক্ত করার আভাস দিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামত ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু রহস্য উৎঘাটনের ফলাফল শূন্যই থাকে। তদন্ত সংস্থা মাঝে মাঝে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানায়, রহস্য উৎঘাটনে কাজ চলছে। তদন্ত সংস্থার ওই ধরনের প্রতিবেদনের ভেতরই মামলার তদন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *