সারাদেশে ১৬৩৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে থাকার পরও ১ হাজার ৬৩৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় এই লোডশেডিং শুরু হয়।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াট।

শনিবার দুপুর ১২টায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে ১২ হাজার ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দিন যত এগোবে, লোডশেডিংয়ের পরিমাণ তত বাড়বে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এর আগে, গত সপ্তাহে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮২৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং রেকর্ড করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ দুই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ না বাড়ানো পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বিপিডিবির কর্মকর্তারা। গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ৪ হাজার এমএমসিএফডির বেশি চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ২ হাজার ৬৪০ এমএমসিএফডি।

লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে কলকারখানার কাজ। ঈদের আগে এমন অবস্থায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মালিক-শ্রমিকরা। শ্রমিকরা জানান, ২ ঘণ্টা ৩ ঘণ্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে। দিনে-রাতে লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির কর্মকর্তারা। তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ঝালকাঠি জেলাবাসীও। জেলা শহর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলার পরিস্থিতি যেন ভয়াবহ। সারা দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন জীবন পার করতে হয়। একদিকে গরম অন্য দিনে রমজান সব মিলিয়ে হাঁসফাস অবস্থা। বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের তথ্যমতে, দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াট কিন্তু সেখানে বিদ্যুৎ উপাদনের ঘাটতি ছিল ২২৫ মেগাওয়াট। সেজন্য লোডশেডিং দিতে হয়েছে। একই অবস্থা চট্টগ্রামে। সেখানেও ১ হাজার ৩৯৯ মেগাওয়াটের চাহিদার স্থলে ১৭০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হয়েছে, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৭১৭ মেগাওয়াটের চাহিদার স্থলে ১৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেওয়া হয়। রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াটের চাহিদার থাকলেও ১৪০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। বিদ্যুতের জ্বালানি সরবরাহ ও উৎপাদানের ঘাটতি থাকায় প্রত্যেক বিভাগে লোডশেডিং চলছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কয়লা, গ্যাস, জ্বালানি তেল ও সোলারসহ ৭টি উপাদানে ২৬ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সরকারের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে, দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ হাজার ৯৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট কম। গত সপ্তাহেও একই অবস্থা ছিল। ঢাকার দুটি বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি ও ডেসকো) ছাড়া বাকি পাঁচটিই চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের কোম্পানি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ময়মনসিংহ জোনের বাসিন্দাদের কোনো কোনো দিন সাত ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের মুখোমুখি হতে হয়। এই জোনে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ (মুক্তাগাছা) এর মহাব্যবস্থাপক শহিদ উদ্দিন জানান, প্রতিদিনের চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছেন। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাশার আজাদ বলছেন, চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, রাজশাহী শহরে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৬৫ মেগাওয়াট পাচ্ছেন।

পিডিবির সদস্য (জেনারেশন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ঘাটতির পেছনে গ্যাস সংকট। দৈনিক এক হাজার ২০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাসের চাহিদা থাকলেও প্রায় ৯৯০ এমএমসিএফডি সরবরাহ করা হয়। তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রগুলো ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন করার জন্য নয়। গ্যাস সংকটের কারণে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কিছু কিছু ২৪ ঘণ্টা চালানো হচ্ছে। সামিটের এলএনজি টার্মিনালের সংস্কার চলছে। সংস্কার কাজ শেষ হলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিকের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং চলছে। দেড় শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াটের বেশি। তবে সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিং করে ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। সাগরে সামিট গ্রুপের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল সংস্কার শেষে শিগগির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিকের পর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়নো যাবে, সেজন্য আরও কিছু দিন সময় লাগতে পারে।

গরম বাড়তেই রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের আশ্বাস উবে গেছে। গত কয়েক দিন গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ইফতার ও সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে টানা দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসছে না । প্রচণ্ড গরমে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন জেরবার। বিঘ্নিত হচ্ছে সেচসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম।

দেশজুড়ে এখন মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের ভাষ্য, এলাকাভেদে চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ কম মিলছে। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সরবরাহ না বাড়লে সামনে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) তথ্যমতে, এখন বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট, যা সামনে বেড়ে সাড়ে ১৭ হাজার হতে পারে। তবে গত দু-তিন দিন সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও উৎপাদন সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিজিসিবির তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় সারাদেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল। সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। সঙ্গে বাড়ে লোডশেডিং। বিতরণ কোম্পানিগুলোর সূত্র জানায়, পিক সময়ে (সর্বোচ্চ চাহিদা) দেশে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য গ্রামগঞ্জে লোডশেডিংও বেশি। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও রংপুরে বেশি লোডশেডিং। কিছুটা স্বস্তি বরিশাল বিভাগে।

এ ব্যাপারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দিনে অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ হচ্ছে ১০০। পেট্রোবাংলার কাছে গ্রীষ্মের জন্য অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে পিডিবি। দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ১২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট। সরবরাহ কম থাকায় গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে।

তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। খরচ বেশি বলে এগুলো কম চালানো হয়। তবে গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালানো হচ্ছে এসব কেন্দ্রও। এতে পিডিবির খরচ বেড়ে গেছে। তবে এখানেও রয়েছে জ্বালানি সংকট। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবির কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এখন দিনে ২৬৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এলএনজি থেকে ৬০ কোটি ঘনফুট মিলছে। একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় কমপক্ষে ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে। এ টার্মিনাল চালু হলে গ্যাস সরবরাহ বাড়তে পারে। গত মাসে সামিটের টার্মিনালটি চালুর কথা থাকলেও গ্যাস সরবরাহ এখনও শুরু করেনি।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় লোডশেডিং বেড়েছে। রমজানে মানুষ অতিষ্ঠ এবং ঈদ ঘিরে স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি জানিয়েছে,  গত বুধবার রাত ৯টায় চাহিদার ৬৭৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৫৯২। নগরীর ক্লে রোডের পাঞ্জাবি দোকানের মালিক সোলায়মান শেখ বলেন, গত দু-তিন দিন ধরে প্রতি রাতেই দুই থেকে তিনবার লোডশেডিং হচ্ছে। বেচাকেনা করা যাচ্ছে না। ডুমুরিয়ার সাজিয়াড়া গ্রামের কৃষক নোয়াব আলী সরদার বলেন, ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টার বেশি থাকছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে অব্যাহত লোডশেডিংয়ে ফরিদপুর পৌরবাসী ক্ষুব্ধ। পৌরসভার আলীপুর মহল্লার গৃহিণী রমা খান বলেন, ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিং জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সময়মতো রান্না করতে পারছি না। সেহরি ও ইফতারি দূরে থাক, ঠিকঠাক ইবাদতও করতে পারছি না। সবচেয়ে কষ্ট পাচ্ছে শিশুরা। অসুস্থ হয়ে পড়ছে তারা। পড়ালেখা করতে চাচ্ছে না।

ওজোপাডিকো ফরিদপুরের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, কোমরপুর গ্রিডে চাহিদা ৬৫ মেগাওয়াট হলেও পিক আওয়ারে মিলছে ৪০-৪৫। শুধু শহরেই প্রয়োজন ২১ মেগাওয়াট। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বগুড়ায় অঞ্চলভেদে দিনে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় এ জেলায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ঘাটতি থাকছে। বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আমজাদ হোসেন বলেন, চাহিদা ৮০ মেগাওয়াট। সরবরাহ মিলেছে ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট। দিন-রাতে ১৫ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

এক সপ্তাহ ধরে নওগাঁর ১১ উপজেলায় দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ সূত্রে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। নওগাঁ সদরের সরাইল শিকারপুর এলাকার কৃষক দেওয়ান আব্দুস সালাম বলেন, গভীর নলকূপে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে চার ঘণ্টা লাগছে। ভোর ৪টায় সেচ শুরুর পর ৮টার মধ্যে দু’বার বিদ্যুৎ গেছে। ধান পাকতে মাসখানেক লাগবে। এভাবে লোডশেডিং হলে আবাদ করা কষ্টকর হবে।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় এখন ১৫-২০ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। তিনটি কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সিলেটে ৫১ ভাগের ওপর লোডশেডিং করা হয়েছে। ঈদের কেনাকাটা শুরুর পর লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায় ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভবনে আগে জেনারেটর চালাতে ২০-৩০ লিটার ডিজেল লাগলেও এখন ৬০-৮০ লিটার লাগছে বলে জানিয়েছেন ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটির সহকারী ব্যবস্থাপক সংকর দাস।

গত রোববার থেকে লোডশেডিং বরিশালবাসীর জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। বুধবার দিনে কিছুটা উন্নতি হলেও বৃহস্পতিবার আবার একই দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। ওজোপাডিকোর বরিশাল সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, বরিশাল ও ঝালকাঠী জেলায় চাহিদার চেয়ে ৩০ ভাগ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। ফলে লোডশেডিংয়ে বাধ্য হচ্ছেন।

কুমিল্লা জেলা সদরে অন্তত ৭ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। কুমিল্লা নগরীতে বুধবার বিকেল ৫টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮ বার লোডশেডিং হয়েছে। লোডশেডিংয়ে হাসপাতালগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

ময়মনসিংহ নগরীতে লোডশেডিং কম হলেও উপজেলা পর্যায়ে অবস্থা ভয়াবহ। ৮ ঘণ্টার ওপর লোডশেডিং হচ্ছে। বুধবার বিকেল ৫টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত গড়ে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের (বিতরণ) তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১০০। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে ২০০ মেগাওয়াটের বেশি। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে তিন-চার ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তথ্য জানা গেছে।

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে দিনে ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) রেজাউল করিম জানান, ১৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মিলছে ৫ থেকে ৬। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল শিগগির আবার গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমবে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বেশি সময় চালাতে চাই না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। গ্রীষ্মের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশা করি, পরিস্থিতি ভালোই যাবে। সংকট হবে না। বিদ্যুৎ সংকটে জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বেকায়দায় আছেন মুরগির খামারিরা। রাজশাহী, রংপুর, টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, মৌলভীবাজার ও কমলগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, নড়াইল, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও কুড়িগ্রামে দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

লোডশেডিংয়ের কারণে ঈদের আগমুহূর্তে কারখানা ঠিকভাবে চালানো সম্ভব হচ্ছে না মালিকদের। শিল্পাঞ্চলে লোডশেডিংয়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক উৎপাদক সময়মতো পণ্য চালান করতে পারছেন না। বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে অনেক কারখানার মালিকদের উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য জেনারেটরের জন্য ডিজেল কিনতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *