এক নজরে সিরাজুল আলম খান

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

রাজনীতির রহস্যপুরুষ দাদাভাই খ্যাত সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। তারপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণের কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তিনি ১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৩-৬৪ এবং ১৯৬৪-৬৫ এ দুই বছর।

১৯৬২-৭১ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, ১১ দফা আন্দোলন পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন করেন তিনি।

তিনি আবদুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রলীগের মাঝে গড়ে তোলেন ‘নিউক্লিয়াস’, যার লক্ষ্য ছিল দেশ স্বাধীন করা।

এ নিউক্লিয়াসকে পরবর্তী সময়ে তারা ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ও বলেছেন অনেকে। আবার একটা সময় পর ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ বা বিএলএফ হিসেবে ডাকা হয়। এ বিএলএফের গেরিলা উইং হিসেবে ১৯৭১ সালে মেজর জেনারেল সুজান সিং উবানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিরাজুল আলম খান ভারতের দেরাদুনে গড়ে তোলেন ‘জয়বাংলা বাহিনী’, যা সাধারণের কাছে ‘মুজিব বাহিনী’ নামে পরিচিত ছিল।

সিরাজুল আলম খান দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে জাতীয় সরকারের নামে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যেতে চাপ সৃষ্টি করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগে ভাঙন ধরান এবং জাসদ গঠন করেন।

আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমি সিরাজুল আলম খান’ বইটি থেকে জানা যায়, জাসদ গঠনের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারকে উৎখাত করা এবং জাসদের নেতৃত্বে ‘জাতীয় সরকার’ তথা একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা, যে সরকারের নেপথ্য গুরু হবেন সিরাজুল আলম খান। পরে জাসদ গঠনের পর তিনি দলটির অঙ্গসংগঠন হিসেবে গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবক ‘মিলিশিয়া বাহিনী’, যা জনগণের কাছে ‘গণবাহিনী’ নামে পরিচিত। এ গণবাহিনীর ঢাকা অঞ্চলের প্রধান ছিলেন হাসানুল হক ইনু। এ বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল সারা দেশে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা,  নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনের পথ ত্বরান্বিত করা। ওই সময় জাসদ গণবাহিনীর মুখপত্র হিসেবে কাজ করত ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকা। পত্রিকাটি ওই সময় মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর রহস্যময় চরিত্রে পরিণত হন সিরাজুল আলম খান। প্রকাশ্যে না এলেও নেপথ্যের ঘটনাবহুল রাজনীতির সূচনালগ্নে তার নামটি শোনা যায়। পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের ঘটনার পর ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ তার প্রচ্ছদের শিরোনাম দেয় ‘সিরাজুল আলম খান : বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্যপুরুষ’। সেই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে তার গোপন রাজনৈতিক অভিলাষের অনেক অজানা কথা উঠে আসে।

৭ নভেম্বরের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর কর্নেল তাহেরের ফাঁসির পর হাজার হাজার নেতাকর্মীর সঙ্গে এ সময় গ্রেফতার হন সিরাজুল আলম খান। তখন জাসদ ভেঙে গড়ে তোলা হয় নতুন দল বাসদ। সিরাজুল আলম খান ১৯৮১ সালে দীর্ঘ কারাভোগের পর মুক্তি পান। কারামুক্তির পরও সিরাজুল আলম খান একাকী, নিভৃত জীবন যাপন করলেও শোনা যায় তিনি গোপনে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তবে এরশাদের স্বৈরশাসনের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে যান সিরাজুল আলম খান।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, তিনি রাজনীতিতে সিরাজুল আলম খানকেই আদর্শ মেনে পথ চলেছেন।

১৯৯৬-৯৭ সালে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের অসকস বিশ্ববিদ্যালয়ে। মার্কসবাদে বিশ্বাসী সিরাজুল আলম খানের আর্থসামাজিক বিশ্লেষণ রাজনীতি অধ্যয়নে এক বিশেষ সংযোজন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *