সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেনের পরিচালক গ্রেফতার

:: সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ::

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে নিহতের মামলায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে শিল্প পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই কারখানার একজন পরিচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। আমরা পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবো।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিল্প পুলিশ-৩ এর ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শামশুদ্দীন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে আনা হয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটনায় করা মামলায় তিনি দুই নম্বর আসামি। 

শিল্প পুলিশ চট্টগ্রামের একজন সহকারী পুলিশ সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে সীমা অক্সিজেন কারখানার পরিচালক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে নিয়ে অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় সাতজন নিহত ও অর্ধশত জন আহত হয়।

নিহতরা হলেন- লক্ষ্মীপুর কমলনগর এলাকার মহিজল হকের ছেলে সালাউদ্দিন (৩৩), নেত্রকোনার কলমাকান্দা এলাকার খিতিশ রংদীর ছেলে রতন নকরেক (৫০), নোয়াখালীর সুধারাম এলাকার মৃত মকবুল আহমদের ছেলে আব্দুল কাদের মিয়া (৫৮), সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার মৃত বিম রুগার ছেলে সেলিম রিছিল(৩৯), একই এলাকার মৃত ইসমাইলের ছেলে শামসুল আলম (৬৫), সীতাকুণ্ডের জাফরাবাদ এলাকার মৃত আবুল বশরের ছেলে মো. ফরিদ (৩২) ও সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার মৃত মতি লাল শর্মার ছেলে প্রবেশ লাল শর্মা (৫৫)।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ৬ মার্চ রাতে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করা হয়। বিস্ফোরণে প্রাণ হারানো আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এতে আসামি করা সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের এমডি মো. মামুন উদ্দিন (৫৫), পরিচালক পারভেজ হোসেন (৪৮) ও আশরাফ উদ্দিন বাপ্পি (৪২), ম্যানেজার আব্দুল আলীম (৪৫), প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার (৬২), প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম (৫০), সেলিম জাহান (৫৮), নির্বাহী পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, অ্যাডমিন অফিসার গোলাম কিবরিয়া, অফিসার শান্তনু রায়, সামিউল, সুপারভাইজার ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীবকে।

মামলার এজাহারে বাদী রোকেয়া বেগম উল্লেখ করেন, তার স্বামী ১০-১৫ দিন আগে ফোনে একবার বলেছিলেন, ‘কারখানায় অর্থের অভাবে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে। বর্তমানে যারা কাজ করছে তারা অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ। আল্লাই জানে, কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে যায়।’ একথা শুনে তারা খুব চিন্তিত ছিলেন। এর মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি অজ্ঞাত কারণে কারখানার অক্সিজেন কলামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে বাদী তার স্বামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে পান। সেখানে তার স্বামী কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান।

এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কারখানা মালিক ও কর্মকর্তারা যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তারা বিপজ্জনকভাবে গ্যাস উৎপাদন, ভর্তি ও সরবরাহ করতেন। তারা তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মত প্রশিক্ষিত জনবল রাখেননি। এতে বিস্ফোরণে তার স্বামীসহ সাতজন মারা যান। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক), ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *