হত্যা মামলার আসামির স্বর্ণ ব্যবসা উদ্বোধন সাকিবের

:: দুবাই প্রতিনিধি ::

ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে (৩৪) পুড়িয়ে হত্যা মামলার ৬ নম্বর পলাতক আসামি আরাভ খানের জুয়েলারি শপ ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করেছেন ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান।

বুধবার সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে রেঞ্জ রোভার গাড়িতে (এফ ৫৫৫৯০) করে দুবাইয়ের দেরা বাজারে আসেন সাকিব। তার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরাভ খান। এ সময় হাজারও প্রবাসী বাংলাদেশি সাকিবকে দেখতে ভিড় জমান। ভিড় ঠেলে সাকিব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেন। তবে ১০ মিনিটের মাথায় অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।

অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থাপক দেবাশীষ বিশ্বাস, সঙ্গীত শিল্পী বেলাল খান, বডি বিল্ডার জুডো ফাইটার, হিরো আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ‘ওয়ার্ল্ড ফেমাস মার্কেট প্লেস দুবাইয়ে আমি সাকিব আল হাসান আসছি ১৫ মার্চ। আরাভ জুয়েলারি শপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। শপ ১৬, বিল্ডিং ৫, হিন্ড প্লাজা, নিউ গোল্ড শপ, দুবাই। আপনারা আসছেন তো?’ ভিডিওবার্তায় দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স নামে একটি শোরুমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এভাবেই আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায় বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। তার এই বিজ্ঞাপনী বার্তাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হচ্ছে। সাকিবের এই ভিডিওবার্তাটি ওই জুয়েলারির স্বত্বাধিকারী আরাভ খানের ফেসবুক পেজ থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি শেয়ার করা হয়।

সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ইজ কামিং অন ফিফটিনথ মার্চ, টু থাউজেন্ড টোয়েন্টি থ্রি- ফর দ্য ওপেনিং সেরিমনি অব আরাভ জুয়েলার্স ইন দুবাই। ওপেনিং সেরিমনি টাইম সেভেন পিএম। এভরিওয়ান ইজ ইনভাইটেড অ্যান্ড রিকোয়েস্ট টু শেয়ার দিজ উইথ ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি। থ্যাংক ইউ!’ একই পোস্টে বাংলায় লেখা হয়- ‘কোনোদিন কাউকে শেয়ার করতে বলিনি আমার কোনো পোস্ট। দয়া করে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন এবং আপনাদের ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি সবাইকে ইনভাইট করবেন।’

সাকিব ১০ মিনিটের মাথায় অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।

শুধু সাকিব নন, আরাভ খানের জুয়েলারি শপের উদ্বোধন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটার বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের পেসার উসুরু উদানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি ওপেনার এভিন লুইস, সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রোহান মোস্তফা, আফগানিস্তানের হজরতউল্লাহ জাজাই, পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরসহ অনেকে।

আরাভ খান নামের মানুষটি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মো. মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি এই আরাভ খান। ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি দুবাইয়ে কয়েক বছর অবস্থান করছেন। তার পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। শুধু আরাভ খানই নন, তার স্ত্রী সাজেমা নাসরিন এবং কথিত বাবা-মায়ের পাসপোর্টও ভারতীয়। 

আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্টের তথ্য বলছে, তার বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুর। কথিত বাবা জাকির খানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে কন্দর্পপুর, রাজপুর সোনারপুর (এম), গড়িয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। কিন্তু সেখানে খোঁজ লাগিয়ে তার কোনো হদিস মেলেনি। এলাকার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের বক্তব্য- এ নামে কাউকে তারা এলাকায় দেখেননি। ছবি দেখানোর পর প্রতিবেশীরাও চিনতে পারেননি।

পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১৮ সালে মামুন ইমরান খানকে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরে বনের ভেতরে ফেলে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। ওই সময় থেকেই তিনি পলাতক। পরে জানা যায়, যোগসাজশের মাধ্যমে প্রকৃত আসামি রবিউলের পরিবর্তে জেলে গেছেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আইনপুর গ্রামের নুরুজ্জামানের ছেলে আবু ইউসুফ লিমন। একাধিক গণমাধ্যমে ওই খবরও প্রচার হয়। ক্রিকেট খেলার স্বপ্নে বিভোর লিমন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার প্রলোভনে রবিউলের পরিবর্তে হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে যান। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার নথি অনুযায়ী, রবিউল ইসলামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামে। বাবা মতিউর রহমান মোল্লা এবং মা লাকি বেগম। পুলিশের তদন্তেও এর সত্যতা মেলে। ওই তদন্তে বলা হয়, প্রকৃত আসামি রবিউলের সঙ্গে যোগসাজশে আবু ইউসুফ লিমন নিজেকে আসামি পরিচয় দিয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করে অপরাধ করেছেন। এটি প্রতারণা। এরপর লিমনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (খিলগাঁও জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহিদুর রহমান বলেন, আরাভ জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের বিষয়টি ফেসবুকে শেয়ার করার পর তা আমাদের নজরে এসেছে। পরিদর্শক মো. মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি রবিউল আরাভ নামে ফেসবুক আইডি চালাচ্ছেন। তার দুটি পাসপোর্ট আমাদের কাছে এসেছে। একটি বাংলাদেশি, অপরটি ভারতীয়। তার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *