২২১৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২১৫ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৭২৪ শিশু এবং ৪৫৮ জন নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৪ জন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার এ তথ্য জানায়।

এছাড়াও পশ্চিম তীরে ৫৪ জন মারা গেছে ও ১১০০ মানুষ আহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। 

এদিকে মোট ইসরাইলি নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ আর আহত হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ জন। 

শুরুতে ইসরাইলিদের নিহতের সংখ্যা বেশি হলেও, এখন ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ইসরাইলিদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। 

গত সপ্তাহে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৫০, আহত হয়েছে ১ হাজারের বেশি মানুষ। 

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ১১ লাখ মানুষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ দিকে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। কারণ সেখাসে সহসা স্থল অভিযান শুরু করতে চায় ইসরায়েল। শুক্রবার রাত থেকে ইসরায়েল গাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমিত পরিসরে স্থল অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

শুক্রবার রাতে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে যাওয়ার সময় পলাতক মানুষের গাড়ি বহরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। এতে অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশ শিশু ও নারী। আহত হয়েছে আরও ১৫০ জন। 

কিন্তু ১১ লাখ তথা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেককে সরানো অসম্ভব বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে জাতিসংঘের সব দপ্তর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইতোমধ্যে দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

এদিকে শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের কমান্ডার আলি কাদিকে হত্যা করেছে দেশটি। তবে এ বিষয়ে হামাস এখনো কিছু জানায়নি। 

শুক্রবার ইসরাইলের বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননে রয়টার্সের সাংবাদিক ইশাম আব্দাল্লাহ নিহতের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে ইসরাইল। দেশটির সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছে, আমরা এ ঘটনায় খুবই দুঃখিত। 

এর আগে এ ঘটনায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস। তারা বলেছে, এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, গণমাধ্যমকর্মীদেরও টার্গেট করছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। 

গাজার ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবন্ধ সমাজ থেকে ২০টি পরিবারকে মুছে ফেলা হয়েছে, যেখানে সবাই সবাইকে চিনতেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে।

ফিলিস্তিন বলছে, ২০টি পরিবারের সব জীবিত সদস্যের নাম সরকারি নিবন্ধন খাতা থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় তাঁদের প্রাণ গেছে।

সাত দিন ধরে ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় কেঁপে উঠছে গাজা উপত্যকা। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েল বলেছে, তারা গাজায় ছয় হাজার বোমা ফেলেছে। অর্থাৎ, প্রতিদিন এক হাজার বোমা ফেলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার অন্তত ১ হাজার ৭৯৯ জনের প্রাণ গেছে, যাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ৬ হাজার ৩৮৮ জন।

গাজার কিছু পাড়া–মহল্লার পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র শাখা ইসরায়েলে যে নজিরবিহীন হামলা হামলা চালিয়েছে, তার জবাবে তারা বোমা হামলা করছে।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার কেন্দ্র ও উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামাসের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। একই সঙ্গে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলও এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। এর পর থেকেই দফায় দফায় গাজায় বিমান, স্থল এমনকি নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

বিগত ৭ দিনের প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি বিগত কয়েক দিনে গাজার বেশ কয়েকটি স্থানে ছোট পরিসরে স্থল অভিযানও চালিয়েছে। ইসরায়েলের এসব অভিযানে প্রতিনিয়তই বেসামরিক ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে।

হামাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাঁরা সবাই ইসরায়েলের হামলার ভয়ে উত্তর গাজা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দক্ষিণে পালাচ্ছিলেন। হামাস এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করলেও দেশটি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।

ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হামাসকে নির্মূল করা এবং এর অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকেরাই মূলত ইসরায়েলের বোমা হামলার শিকার হচ্ছেন।

জাবালিয়া আশ্রয়শিবিরে চালানো হামলায় শিহাব পরিবারের ৩১ সদস্যের সবাই নিহত হয়েছেন। এই পরিবার যে বাসভবনে ছিল, সেখানে লুকিয়েছিলেন অন্য পরিবারের সদস্যরাও। তাঁরা ভেবেছিলেন, এটি নিরাপদ জায়গা।

জাবালিয়ায় ইসরায়েলের হামলায় মোট ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স দুই মাস, একটি দুধের শিশু।

দেইর আল-বালাহতে আজাইজ পরিবারের অন্তত ১৫ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের মরদেহ পাওয়া গেছে একাধিক খণ্ডে।

গাজা শহরের হাসান আল-বাতনিজি তাঁর পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন। এক হামলায় সবার প্রাণ গেছে।

আসমাহান আল-বারবারি নিরাপদ ভেবে তাঁর গাজা শহরের বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। পরে সেখানে বোমা হামলা চালানো হয়।

বাড়িতে বোমাবর্ষণ করা হবে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এমন খুদে বার্তা পাওয়ার পর তাঁরা সবাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন বলে জানান আসমাহান আল-বারবারি। তিনি বলেন, ‘জরুরিভাবে ঘর ছাড়ার জন্য আমাদের সবার ব্যাগ সব সময় দরজার কাছেই থাকে, সেগুলো হাতে নিলাম এবং দৌড় দিলাম।’

আসমাহান আল–বারবারি বলেন, ‘(সতর্কবার্তা পাওয়ার পর) বাড়ি ছেড়ে সাধারণত যত সময় দূরে থাকার কথা, সেই সময় দূরে ছিলাম। পরে বিপদ শেষ হয়ে গেছে ভেবে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই।’

গভীর রাতে যখন পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন আসমাহান আল-বারবারির বাড়িতে বোমা হামলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধকারে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিলাম। পরিবারের অন্য সদস্যরা বেঁচে আছে কি না, তা জানতে আমি তাদের নাম ধরে চিৎকার করছিলাম।’

আসমাহান আল-বারবারি বলেন, ‘আজ আমি মৃত্যু দেখলাম। এটা আমার জীবন নেয়নি, নিয়েছে আমার পরিবারের সদস্যদের। যদি আমিও মারা যেতাম…বাকি জীবন আমি তাদের জন্য শোক করে যাব।’

আসমাহান আল-বারবারির প্রতিবেশী মাহমুদ আল-শান্তি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বয়স্ক নারী, শিশুসহ আমাদের বাড়িতে প্রায় ৩০ জন ছিলাম। অনেক পরিবারই ভয়াবহ হামলা থেকে বাঁচতে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।’

মাহমুদ আল-শান্তি, হাসান আল-বাতনাজি ও আসমাহান আল-বারবারি—সবাই আল-শিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা আশা করছেন, তাঁরা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাবেন।

আল-শিফা গাজা শহরের অনেক বাসিন্দার জন্য স্বস্তিদায়ক জায়গা হয়ে উঠেছে। কেননা সেখানে কিছু না কিছু খবরাখবর পাওয়া যাচ্ছে, ইন্টারনেট সংযোগ আছে, বিদ্যুৎও আছে।

তবে চিকিত্সার জন্য প্রত্যেককেই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গাজার ওপর ১৬ বছর ধরে চলা অবরোধের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে ইসরায়েল। খাদ্য, পানীয় জল, বিদ্যুৎ, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ মানে সবচেয়ে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের তীব্র সংকট।

গাজায় ৪ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ আজ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা উপত্যকায় মানুষ গণহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এই সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে।

ওসিএইচএ বলেছে, গাজার অনেক মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন। সেখানে পানি সরবরাহব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের উত্তর গাজা (গাজা সিটি) খালি করতে বলা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেখানকার ১১ লাখ বেসামরিক বাসিন্দাকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে সময় বেঁধে দেয় ইসরায়েল।

এর পর থেকে উত্তর গাজা ছেড়ে হাজার দশেক মানুষ পালিয়েছেন বলে জানিয়েছে ওসিএইচএ।

যদিও গাজা খালি করার এই আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সংস্থাটি বলছে, এটা অবাস্তব আদেশ।

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রস্তাব

‘মানবিক কারণে’ গাজা উপত্যকা ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ চায় রাশিয়া। রুশ রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। সংঘর্ষ চলতে দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে মস্কো। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ খবর দেওয়া হয়েছে। 

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত রাশিয়ার প্রস্তাবে ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং সব জিম্মির নিরাপদ মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদী সব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায় রাশিয়া।

জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই রক্তপাত বন্ধ এবং শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ আরও আগেই নেওয়া উচিত ছিল।’

রুশ রাষ্ট্রদূত জানান, খসড়া প্রস্তাবটির ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশ ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছেন ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া। সে সঙ্গে, গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মানুষ এবং অবকাঠামোতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলা দেখেও না দেখার ভান করায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সমালোচনা করেছেন তিনি।

রাশিয়ার খসড়া প্রস্তাবে হামাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চোখে হামাস একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, সংঘাতের বিষয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সময় ১৫ সদস্যের কাউন্সিলকে খসড়া প্রস্তাবটি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে কাউন্সিলের এক কূটনীতিক বলেছেন, ‘তারা (রাশিয়া) কারও সঙ্গে পরামর্শ করেনি এবং হামাসের কথাও উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, তারা কাউন্সিল সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাস করার জন্য প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৯টি ভোট। সে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন বা রাশিয়ার কোনো ভেটো থাকা যাবে না।

অবরোধ অব্যাহত থাকায় গাজায় পানি, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অবরুদ্ধ গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার ৬৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আহতের সংখ্যা এক হাজারের বেশি।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ অষ্টম দিনে গড়িয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ১ হাজার ৯০০ মানুষ। আহত হয়েছে সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে, হামাসের হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি।

এরই মধ্যে লাখ লাখ বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি দেশের অনুরোধের পর এল রাশিয়ার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ

গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পর মিছিল করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ওই মিছিলে সব ফিলিস্তিনিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তাঁরা।

গত শনিবার ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর পশ্চিমা বিশ্বসহ বিভিন্ন মিত্র দেশের সরকার ও নাগরিকদের সমর্থন পায় তেল আবিব। অন্যদিকে, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি হামলা হলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে আরব ও মুসলিম বিশ্ব।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদে কয়েক হাজার নাগরিক ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে মিছিল করেছেন। গতকাল তাহরির স্কয়ারে সমাবেশ করেন তাঁরা। এ সময় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। পাশাপাশি পোড়ানো হয়েছে ইসরায়েলের পতাকা। কেউ কেউ সাদা কাফন পরে শামিল হয়েছিলেন প্রতিবাদে।

জর্ডানের রাজধানী আম্মানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছেন। এতে বামপন্থী বিভিন্ন দল ও তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

এ ছাড়া পাকিস্তান, ভারত, লেবানন, তুরস্ক ও সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এবং গাজায় বোমা হামলার প্রতিবাদে রোম, মিউনিখ, বেলগ্রেড ও অন্যান্য শহরে সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়। 
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে করা বিক্ষোভ মিছিলে কাঁদানে গ্যাস শেল ছোড়ে পুলিশ। দেশটিতে ফিলিস্তিনপন্থী সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *