২৪ ঘণ্টায় ৭০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

গাজায় ইসরায়েলি ইসরায়েলি বিমান হামলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ৭০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গাজার জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক আল-জাজিরাকে বলেন, গাজা উপত্যকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।

রোববারের মধ্যে খান ইউনিস ও রাফাহ শহরের দক্ষিণাঞ্চলে এবং উত্তরের কিছু অংশে ভারী বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে। এলকাগুলো ইসরায়েলের বিমান ও স্থল অভিযানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।

মার্কিন আশ্বাস সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি ছিটমহলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করেছে ইসরায়েল।

দুই মাস পুরানো যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিকদের উত্তর অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরে গাজার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দাদের অনেকেই দক্ষিণে আটকা পড়ে।

যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ায় নতুন করে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আলোচনার আশা অনেকটাই কমে গেছে। কারণ ইসরায়েল তার প্রতিনিধিদের কাতার থেকে চলে আসার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার রাতে এক ভাষণে বলেছেন, ‘আমরা সমস্ত লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাব। স্থল অভিযান ছাড়া এসব লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব।’

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী লিফলেট বিতরণ করে বাসিন্দাদের দক্ষিণে রাফাহ বা দক্ষিণ-পশ্চিমে উপকূলীয় এলাকায় চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। লিফলেটে লেখা ছিল, ‘খান ইউনিস শহর একটি বিপজ্জনক যুদ্ধ অঞ্চল।’

অধিকার গোষ্ঠীদের আশঙ্কা, ইসরায়েল উত্তরেও একই গেমপ্ল্যান তৈরি করছে। তারা বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ করে বেসামরিকদের আরও বেশি দক্ষিণে ঠেলে দিয়েছে।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা সর্বশেষ উচ্ছেদ আদেশের আগে জারি করা একটি প্রতিবেদনে বলেছে, বাসিন্দাদের গাজার এক-চতুর্থাংশ এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। যুদ্ধের আগে এই অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৮ লাখ লোক ছিল।

তিন সন্তানের বাবা ৩৭ বছর বয়সী মাহের রয়টার্সকে বলেন, ‘আগে আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতাম যে এই যুদ্ধে আমরা মারা যাব কি না? কিন্তু শুক্রবার থেকে গত দুই দিনে বুঝতে পেরেছি, এটা কেবল সময়ের ব্যাপার। আমি গাজা সিটির বাসিন্দা। পরিবারের সবাই গাজা উপত্যকার দক্ষিণে আল-কারারাতে চলে এসেছিলাম। গতকাল খান ইউনিসের গভীরে আশ্রয় নিয়েছি। আজ রাফাহে বোমা হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছি।’

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের বৈশ্বিক মুখপাত্র জেমস এলডার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘গাজায় যেদিকেই তাকাবেন দেখবেন হতাহত শিশুদের মুখ। কেউ ভয়াবহভাবে পুড়ে গেছে, কারও শরীর বোমায় ক্ষতবিক্ষত আবার কারও হাত-পা বুকের হাড় ভেঙেছে। মায়েরা হাহাকার করছেন, পুরো এলাকা যেন মৃত্যুপুরী।‘

তিনি বলেন, ‘গাজার উত্তরে যা ঘটেছে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সত্যিই একটি শক্তিশালী বার্তা এসেছে। সেখানকার লোকজন ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি দক্ষিণাঞ্চলে ঘটতে দেওয়া উচিত নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিবৃতিতে তিনি আরও জানান যে, গাজায় আনুমানিক প্রতি ১০ মিনিট পর পরই বোমা ফেলছে ইসরায়েল।

জেমস এলডার বলেন, দক্ষিণ গাজার লোকজনের জন্য এ বিপদ আরও বেশি উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যখন আপনি বোমা বর্ষণের কারণে তিন থেকে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এমন পরিস্থিতি লোকজন সত্যিই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তারা তাদের সন্তানদের একসঙ্গে রাখার চেষ্টা করছেন কিন্তু তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

তিনি বলেন, যখন আমি দেখি শিশুরা আর্তনাদ করছে। বাবা-মা একের পর এক যুদ্ধের ভয়ংকর ক্ষত নিয়ে স্ট্রেচারে চিৎকার করছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা এভাবে পার করছে। কিন্তু তারা হাসপাতাল বা আশ্রয়কেন্দ্রেও নিরাপদ নয়। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক।

জেমস এলডার বলেন, “আমি এখানে নিরাপদ বোধ করার কোন উপায় দেখছি না। অন্য কেউ এখানে নিরাপদ বোধ করে না।”

এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির আশাও আপাতত নেই। কারণ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলকেও গত শনিবার কাতারের দোহা থেকে দেশে ফেরত যেতে বলা হয়।

গাজায় সাধারণ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেসব বোমা ব্যবহার করছে সেগুলোর বেশির ভাগই সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ইউএস সি-১৭ সামরিক কার্গো বিমান দিয়ে ইসরায়েলে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার বোমা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইসরায়েলিদের ১৫৫ মিলিমিটারের ৫৭ হাজার শেল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

টানা ৪৭ দিনের সংঘাতের পর গাজায় গত ২৪ নভেম্বর কাতারের মধ্যস্থতায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয়। এরপর যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে সাতদিন করা হয়। যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়া মাত্র শুক্রবার সকাল থেকে গাজায় আবারও হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *