হামাসের রকেট হামলায় তিন ইসরায়েলি সেনা নিহত

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে কেরেম শালোম সীমান্ত ক্রসিংয়ের দিকে রকেট হামলা চালিয়ে তিন ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে হামাস। আহত হয়েছে আরও ১১ জন। তার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

রোববার (৫ মে) সকালে হামাস এ হামলা চালিয়েছে বলে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, রাফাহ ক্রসিংয়ের নিকটবর্তী এলাকা থেকে কেরেম শালোম সীমান্ত ক্রসিংয়ে ১৪টি রকেট ছুড়েছে হামাস।

হামাস রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত কেরেম শালোম ক্রসিংটি বন্ধ করে দিয়েছে। গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহসহ মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর কয়েকটি রুটের মধ্যে এ ক্রসিংটি অন্যতম।

মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দুই দিনের আলোচনা করেছেন। মিসর সীমান্তের কাছে রাফা এলাকায় ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, আলোচনার সর্বশেষ দফা রোববার শেষ হয়েছে। তাদের প্রতিনিধিদল এখন কায়রো থেকে কাতারে যাবে হামাসের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে।

মধ্যস্থতা প্রচেষ্টায় জড়িত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নসও দোহায় আলোচনার জন্য কায়রো ত্যাগ করেছেন।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সময় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি কারাগারে আটক বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি আছে।

হামাস বলেছে, তারা বর্তমান প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তবে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্থায়ী হবে নাকি সাময়িক।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, গতকাল রোববার ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন। পাল্টা এই হামলার দায় নিয়েছে ইসরায়েল।

মিসরের রাজধানী কায়রোতে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

হামাসের হামলার জবাবে ফিলিস্তিনে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, মধ্যরাতের আগে গাজার রাফা এলাকায়  ইসরায়েলি বিমান হামলায় নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন শিশু। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও বলছেন, নতুন হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ জনে পৌঁছেছে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলা যুদ্ধে ইসরায়েলের হিসাবে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। জিম্মি করা হয়েছে ২৫২ জনকে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬০০ জন নিহত হয়েছেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা প্রত্যাখ্যান করলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজা যুদ্ধ অবসানের জন্য হামাসের দাবি কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটিকে ক্ষমতায় রাখবে। আর তারা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।’

নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের হাতে এখনও জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ থামাতে ইচ্ছুক। তবে ইসরায়েল সদিচ্ছা দেখালেও হামাস তার চরম অবস্থানে অনড় রয়েছে। তারা গাজা উপত্যকা থেকে আমাদের সব ধরনের সামরিক বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার ও হামাসকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেছে। কিন্তু ইসরায়েল এটা মেনে নিতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল হামাসের দাবি মেনে নিলে তারা বারবার গণহত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি অর্জন করতে সক্ষম হবে।’

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কায়রোয় হামাস নেতারা মিসর ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধবিরতি আলোচনা করেছেন। তবে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। কেননা গোষ্ঠীটি তাদের যে কোনো চুক্তিতে অবশ্যই গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটানোর দাবি বজায় রেখেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *