শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ৪১৬২৬ জনকে নিয়োগের সুপারিশ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির সুপারিশের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সুপারিশ পেয়েছেন ৪১ হাজার ৬২৬ জন প্রার্থী। পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান অবস্থায় অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর অনুকূলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়োগপত্র দেবে। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম এ ফল তুলে দেন।

এনটিআরসিএ জানিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানেরা তাঁদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের লিংকে প্রবেশ করে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এবারের ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় মোট ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০ জন, তাঁদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮১ হাজার ২০৯ জন এবং উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬০ হাজার ৬৩৪ জন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, ৬ষ্ঠ নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদের চাহিদার বিপরীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রায় ৪১ হাজার প্রভাষক/শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় ই-রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক চাহিদা প্রদান এবং নির্ধারিত যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগ সুপারিশ এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি অধিক স্বচ্ছতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পন্ন করা হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শিক্ষক নিবন্ধনের মাধ্যমে মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করেছি, যাঁরা আগামী প্রজন্মকে উপযুক্তভাবে গড়ে তুলবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে, যাঁরা সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত এবং নির্দিষ্ট বিষয়ের উপযুক্ত, তাঁদের তথ্য ডিজিটালি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমি আশা করি, শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ার এই ডিজিটাল রূপান্তর আগামী দিনগুলোয় আরও শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে।’

সুপারিশকৃত প্রার্থীর করণীয়

সুপারিশকৃত প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা পদের প্রযোজ্যতা অনুসারে প্রার্থীর কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক ইস্যু করা সুপারিশপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিনজন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে যাচাই করতে হবে।

প্রার্থী যোগদানের নির্ধারিত তারিখের পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা তাঁদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টেলিটকের http://ngi.teletalk.com.bd লিংকে প্রবেশ করে Joining Status অপশনে ‘Yes’ ক্লিক করবেন। প্রার্থী যোগদান না করলে Joining Status-এ ‘No’ ক্লিক করে Reason-এর ঘরে যোগদান না করার সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করবেন।

উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা অর্জন করতে হয় নিবন্ধন সনদ অর্জনের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ১৮টি শিক্ষক নিবন্ধনের মাধ্যমে অসংখ্য প্রার্থীকে সনদ দিয়ে এনটিআরসিএ।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। 

২০১৪ সালের পর্যন্ত এনটিআরসিএ শুধু সনদ দিত। সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি।  

২০০৫ সাল থেকে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিচ্ছে। তবে শুরুর ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর চারটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ৩১২ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *