■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের সময় পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলীতে ৫ তলা ভবনের রেলিং ধসে তিন জন নিহত হয়েছেন। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সোহেল হোসেন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
নরসিংদীর গাবতলিতে ভূমিকম্পের তীব্র ঝাঁকুনিতে একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে তিন জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনের নাম মিরাজউদ্দিন বলে জানা গেছে। বাকিদের নাম এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আহতদের সবাইকে দ্রুত নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ পশ্চিমে। গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদী।
চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল, মৌলভীবাজার থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভূমিকম্পের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল।
সূত্রাপুরে ভূমিকম্পে অনেকেই আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন।
রাজধানীর বাসিন্দারা বলেন, হঠাৎ করে আমি খাট থেকে পড়ে গেছি। আমার টেবিলের বই সব পড়ে গেছে, দৌড়ে নিচে চলে গেলাম। বাসার পাশের সবাই নিচে নেমে এসেছেন। মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা দেওয়ার কারণে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। ভূমিকম্পের সময় যা করণীয় সে সম্পর্কে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা মেনে চললে ভূমিকম্পের সময় বিপদ এড়ানো সম্ভব।
আতঙ্কিত না হয়ে আশ্রয় নিন
ভূ-কম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। অন্য কোথাও অবস্থান করলে সরাসরি টেবিল, ডেস্ক অথবা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নীচে আশ্রয় নিন। এতে ভূমিকম্পের সময় দেয়াল বা ছাদ ভেঙে মাথার ওপর পড়া থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে। ভূমিকম্পের সময় ভবন ধ্বসের ঝুঁকি থাকে। তাই কোনো খোলা জায়গায় চলে যান অথবা ভবনের পিলার ঘেঁষে দাঁড়ান। মনে রাখবেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হওয়া চলবে না। অনেকে শুধু আতঙ্কের কারণেই অসুস্থ হয়ে যান।
গ্যাসের চুলা, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম বন্ধ রাখুন
ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা বিপজ্জনক। গ্যাসের চুলার আগুন নিভিয়ে না রাখলে দুর্ঘটনা হতে পারে। কম্পিউটার, টেলিভিশন, ফ্রিজসহ ইলেকট্রিক সরঞ্জাম বন্ধ করে রাখা জরুরি।
অস্থির হবেন না
দেয়াল বা ভবনের নিচে পড়লে অস্থির না হয়ে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। যাতে নাক-মুখ দিয়ে ধুলাবালি শ্বাসনালীতে পৌঁছাতে না পারে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে অবস্থান করলে বের হওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি বা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন না। এ সময় দুই হাত দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
লিফট ব্যবহার করবেন না
সহজে যাতায়াতের জন্য অনেকেই লিফট ব্যবহার করেন। কিন্তু ভূ-কম্পন থেমে গেলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে। লিফট ব্যবহার করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
গাড়িতে থাকুন
গাড়িতে থাকা অবস্থায় যদি ভূমিকম্প শুরু হয় তাহলে ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে গাড়ি থামান। গাড়ির ভেতরে অবস্থান করুন। ভূমিকম্প শেষ হলে গাড়ি চালানো শুরু করুন।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে থাকুন
বিপদের সময় কাজে আসে এমন জিনিস আগেই রেখে দেওয়া শ্রেয়। ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট, মোমবাতি, টেবিল ফ্যান, পানি, শুকনো খাবার এবং ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনে গাড়িতেও একটি ফার্স্ট এইড বক্স রেখে দিন।
